Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিচারপতি অপসারণ সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলেই

high court
[publishpress_authors_box]

উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতেই থাকছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে রবিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

রায়ে এ সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, যে মুহূর্তে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ থেকে, সাথে সাথে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কার্যকর হয়ে গেছে।”

রিভিউ পিটিশন থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তবে রিভিউতে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ ছিল না। ফলে ষোড়শ সংশোধনীর যে রায় আদালত ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছেন, সেই রায় কার্যকর ছিল।

“ওই রায়ে বলা হয়েছে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল। তার মানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের যে বিধান ছিল সেটা পুনরায় কার্যকর হয়ে গেল।”

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তারপরেও আজ রিভিউ নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে আর কোনও প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু আমলে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের পর বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ন্যস্ত হয় রাষ্ট্রপতির হাতে।

আদেশের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় যাওয়ার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধন এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। এরপর সেভাবেই চলছিল।

তিন দশকের বেশি সময় পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরত নেওয়া হয়। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশিত হয়।

এরপর ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। পরে ৯ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করে।

এরপর ২০১৬ সালের ৫ মে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান-পরিপন্থী বলে রায় দেয়। ওই বছরের ১১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। এরপর ওই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়।

রায়ে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, সংসদসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রাখা হয়। তাতে ‘বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। জাতীয় সংসদেও সেই রায় এবং বিচারপতি সিনহার অনেক সমালোচনা করা হয়।

এরপর ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সংসদে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এর মধ্যে রায়কে কেন্দ্র করে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে ১৩ অক্টোবর তিনি বিদেশে চলে যান। সেখান থেকে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান।

এরপর ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৯৪টি সুনির্দিষ্ট যুক্তি তুলে ধরে ৯০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ পুরো রায়টি বাতিল চায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত