Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

চবি শাটল ট্রেনের শিক্ষার্থীবান্ধব সংস্কার হবে কি এবার

অনেকটা পরিত্যক্ত বগিতে সজ্জিত হলেও এর মাঝে লুকায়িত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাসি, আনন্দ, কান্না, ভালোবাসা আর সম্ভাবনার শত গল্প। ছবি: সংগৃহীত।

‘শাটল ট্রেন’ শব্দবন্ধটি উচ্চারিত হলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাইফলাইনের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নামটি উচ্চারিত হলেই সবার আগে মানসপটে ভেসে ওঠে সর্পিলাকার শাটল ট্রেনের চিত্র। অনেকটা পরিত্যক্ত বগিতে সজ্জিত হলেও এর মাঝে লুকায়িত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাসি, আনন্দ, কান্না, ভালোবাসা আর সম্ভাবনার শত গল্প। আমি ২২ বছর আগে এই শাটল ছেড়েছি, কিন্তু এই ট্রেনের একজন প্রাক্তন যাত্রী হিসেবে আজও এর অস্তিত্ব অনুভব করি। তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শাটল যাত্রী হিসেবে, এই লাইফলাইনটির দুরাবস্থায় ব্যথিত হই, আশা করি এই ট্রেনের প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে; প্রত্যাশা করি স্বপ্নিল দিনগুলো ফিরে পাক বর্তমান-আগামীর শিক্ষার্থীরা।

এই শাটল ট্রেন নিয়ে অনেক গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, এমনকি সিনেমাও হয়েছে। শাটল ট্রেন নামের সিনেমার একটি গান জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। ২০২৩ পর্যন্ত আগের কোনও প্রশাসন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বতন্ত্র পরিবহনের সংস্কারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেননি। তারা কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন খবরের কাগজে সেগুলো বারবার এসেছে। ফলে শাটল ট্রেনের যাত্রা একসময় আনন্দময় থাকলেও, তা দিনে দিনে কষ্টকর রূপ পরিগ্রহ করেছে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ার কারণে এটাই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ১৯৮০ সাল থেকে সংযোজিত হয়েছে এই অনন্য শাটল ট্রেন। এই ট্রেন ব্যতীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানচিত্রই যেন শূন্য। তথাপি ১৯৮০ বা ৯০-এর দশকের চিত্র আর বর্তমান বাস্তবতা এক নয়। শাটল ট্রেনের অবস্থা ও এর ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের অভিজ্ঞতা কী বলে? দেশ নাকি ‘ডিজিটাল’ হয়েছে, শিক্ষার্থী অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, আর বিপরীতক্রমে ট্রেনের লাইন দুর্বল হয়েছে, সিটগুলো ভঙ্গুর হয়েছে, ট্রেনযাত্রা শঙ্কা আর অনিশ্চয়তায় পর্যবসিত হয়েছে।

এই শাটল ট্রেনে চড়ার জন্যেও অনেকে এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছে, চান্স পেয়ে ভর্তি হয়েছে। এই ট্রেন অনেককে প্রতিষ্ঠিত করেছে নানান পেশায়, যেমন ব্যান্ড সংগীতে। শাটল ট্রেন ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর আছেই বা কী? আর তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন কেবল যাতায়াত বা পরিবহনের চেয়ে বেশি; এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, চিন্তাভাবনার বিনিময় এবং বৈচিত্র্য উদযাপন করার স্বতন্ত্র সুযোগ। এ জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রীতিমতো ঈর্ষা করে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ার কারণে এটাই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ১৯৮০ সাল থেকে সংযোজিত হয়েছে এই অনন্য শাটল ট্রেন। এই ট্রেন ব্যতীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানচিত্রই যেন শূন্য।

যাহোক, সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ যে পরিস্থিতির কথা প্রকাশ করে তা মোটেও স্বাস্থ্যকর ও স্বস্তিকর নয়। অতিরিক্ত ভিড় ও অব্যবস্থাপনার কারণে যেমন অতিরিক্ত ভিড়, পর্যাপ্ত আসনের অভাব এবং দুর্বল বায়ু চলাচল, অত্যধিক ধুলাবালি, অস্বস্তিকর ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। এই ট্রেনের এই বিরূপ পরিস্থিতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক চাপ, এবং একাডেমিক পারফরম্যান্সের এর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শাটল ট্রেন, একসময় প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস জীবনের প্রতীক হলেও, এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য শাটল ট্রেন ক্লান্তিকর ও হতাশাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের পরিবহনের বিষয়ে প্রশাসনের অবহেলার দরুণ বছরের পর বছর ধরে, প্রতিদিনের যাতায়াত শিক্ষার্থীদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে এবং তাদের একাডেমিক কর্মক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। আর্থিক চাপ পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যখন কিনা কিছু শিক্ষার্থী পড়াশোনার খরচ বহন এবং এমনকি পরিবারকে সাহায্য করার জন্য অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয় (বিশেষ করে টিউশনি)। ফলে ক্লান্তি এবং চাপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে— তাদের সার্বিকভাবে বিধ্বস্ত করে তোলে। ক্লান্তি এবং একাডেমিক সংগ্রামের এই চক্র শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা ও অগ্রযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনমানকে ক্ষুণ্ন করে। ট্রেনের অবস্থা এখন যে কেবল ক্লান্তিকর তা-ই নয়, অনিরাপদও। সেখানে এমনকি ছিনতাই হয়, মারামারি হয়, এমনকি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনাও ঘটে।

এই সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য, ট্রেনের সংখ্যা ও মান বর্ধিত করা আবশ্যক। উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং ঘন-ঘন ট্রেন যাত্রার সুযোগসহ এর প্রভূত সংস্কার প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ শিক্ষার্থীদের উপর থেকে শারীরিক ও মানসিক চাপ কমিয়ে দেবে, আরও সহায়ক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলবে যেখানে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক এবং ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হবে। 

চবি শাটল ট্রেনে গ্রাফিতি করছেন জার্মান শিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার। ছবি: সংগৃহীত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৌভাগ্যবান শিক্ষার্থী, যারা তাদের দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য শাটল ট্রেনের অ্যাক্সেস পায়, কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করলে তা উল্লেখযোগ্য বৈষম্য প্রকাশ করে। ক্যাম্পাসের শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্ত্বেও, শাটল ট্রেনের যাত্রা অস্বস্তিকর, অত্যধিক ভিড় এবং দীর্ঘ অপেক্ষা, অনিরাপত্তা, দলগত দখল-অবস্থান ও বগি রাজনীতি, এবং রাজনৈতিক সহিংসতা তাদের অসহায় করে তোলে। এই কঠিন অভিজ্ঞতা সম্পদ এবং অবকাঠামোর সুযোগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর বৈষম্যকে তুলে ধরে, যা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল এবং একাডেমিক কর্মক্ষমতাকে নিঃসন্দেহে প্রভাবিত করে।

শিক্ষার্থীদের তাদের একাডেমিক সাধনায় সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য আরামদায়ক ও আনন্দময় পরিবহন অপরিহার্য। একটি অস্বস্তিকর ও অস্বাস্থ্যকর যাতায়াত মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি একাডেমিক সাফল্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পরিবহন পরিকাঠামোর উন্নতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য এই শাটল ট্রেন পরিষেবার উন্নতিতে বিনিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অভিজ্ঞতার বৈষম্য দূর করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

ক্যাম্পাসের শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্ত্বেও, শাটল ট্রেনের যাত্রা অস্বস্তিকর, অত্যধিক ভিড় এবং দীর্ঘ অপেক্ষা, অনিরাপত্তা, দলগত দখল-অবস্থান ও বগি রাজনীতি, এবং রাজনৈতিক সহিংসতা তাদের অসহায় করে তোলে।

শিক্ষার্থীদের শাটল ট্রেনে যাতায়াতের সময় যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তা মোকাবেলা করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন পরিষেবা সম্প্রসারণ, ট্রেন এবং কোচের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভিড় কমাতে পর্যাপ্ত বসার সুযোগ নিশ্চিত করা। ফ্যানের সংযোগের মতো সুযোগ-সুবিধাগুলি উন্নত করা এবং, যেখানে সম্ভব, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যাত্রীদের আরাম বাড়াতে পারে, বিশেষ করে এপ্রিল-মে মাসের চরম-গরম আবহাওয়ায়।

পাশাপাশি শাটল ট্রেনের মধ্যে একটি রাজনীতি-মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা শিক্ষা এবং শান্তিময় ভ্রমণ ও আলাপ-আলোচনার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ব্যাঘাতমূলক আচরণ যাতায়াতের অভিজ্ঞতাকে অনেক সময় দুর্বিসহ করে তোলে, যা অস্বস্তি এবং শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এমন নিয়মকানুন প্রয়োগ করা যা অনিরাপত্তা ও সংঘাতের মতো আচরণকে নিষিদ্ধ করে এবং যাত্রীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীল সংস্কৃতিকে উন্নীত করে। ট্রেনে যাতে সকল মত, পথ এবং সকল লিঙ্গ ও শারীরিকভাবে দুর্বলদের আসন নিশ্চিত করা যায় সেদিকে বিশেষ মনোনিবেশ করতে হবে। বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি উদযাপন করা দ্বন্দ্বের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের আরাম এবং সুবিধার অগ্রাধিকার দেওয়া তাদের মঙ্গল এবং একাডেমিক সাফল্যকে সহায়তা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়বদ্ধতা রয়েছে। যাতায়াতের অভিজ্ঞতা উন্নত করার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে এবং একটি রাজনীতি-মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সকল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আনন্দময় এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

ক্যাম্পাসে যাওয়া বা ক্যাম্পাস থেকে ফেরার জন্য বিপুল ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র সহায় এই শাটল ট্রেন। ছবি: সংগৃহীত।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে বৈশ্বিক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দিয়েছে, যা একাডেমিক এবং কর্মময় সাফল্যের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থাদির উন্নতিসাধনপূর্বক স্বস্তিকর ও দক্ষতর করা প্রয়োজন। এই ডিজিটাল যুগে প্রতিদিনের কষ্টকর যাতায়াত ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাকে পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধক করে তোলে, মূল্যবান সময় এবং শক্তি নষ্ট করে, এবং শেখার সুযোগ থেকে পরোক্ষভাবে বঞ্চিত করার মাধ্যমে তাদেরকে বিশ্ববাজারে পিছিয়ে রাখছে। একটি চাপপূর্ণ যাতায়াত শিক্ষার্থীদের একাগ্রতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ক্লান্তিময় ও অসহিষ্ণু করে তোলে, যা একাডেমিক এবং পেশাদার সম্ভাবনাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবসহ সামনের সকল চ্যালেঞ্জসমূহের জন্য কার্যকরভাবে প্রস্তুত করার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই পরিবহন পরিকাঠামোর উন্নতিতে বিনিয়োগ করে যাতায়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, যার মধ্যে শাটল ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যতম। উপরন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক এবং ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতিসমূহ পরিচালনা করতে সহায়তা করার জন্য আরও সহায়ক পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ লাভ ও চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করার জন্য শিক্ষার্থীদের সকল উপায়ে দক্ষ ও প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সামনের চ্যালেঞ্জসমূহ থেকে সুবিধা লাভের জন্য শিক্ষার্থীদের  প্রস্তুত করার জন্য তাদের মঙ্গল এবং একাডেমিক সাফল্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেখার প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরে এবং বাইরে একটি সহায়ক পরিবেশ প্রদান করা শিক্ষার্থীদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে এবং ভবিষ্যত নেতা হতে সক্ষম করে। আরামদায়ক যোগাযোগ এর অন্যতম একটি অনুসঙ্গ। মনে রাখতে হবে একটি উপযোগী যাতায়াতের পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে উৎকর্ষ সাধনের ক্ষমতা দিতে পারে।

শাটল ট্রেন পরিষেবাকে ঘিরে উদ্বেগগুলো এর ত্রুটিসমূহ সমাধানের জন্য পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ব্যতীত এই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষের উচিৎ এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া শোনা এবং শাটল ট্রেন পরিষেবার উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিক্ষার্থীদের মঙ্গল ও সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সহায়ক এবং সমৃদ্ধ পরিবেশ প্রদানের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে পারে।

শেখার প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরে এবং বাইরে একটি সহায়ক পরিবেশ প্রদান করা শিক্ষার্থীদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে এবং ভবিষ্যত নেতা হতে সক্ষম করে। আরামদায়ক যোগাযোগ এর অন্যতম একটি অনুসঙ্গ।

শাটল ট্রেনের উন্নতিতে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং একাডেমিক উৎকর্ষের জন্য উপযোগী পরিবেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষাবান্ধব অভিজ্ঞতা প্রদানের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে যা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে এবং পরবর্তীতে সমাজে অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে প্রস্তুত ও দায়বদ্ধ করতে পারে। শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার চাপের মধ্যে রেখে তাদের কাছ থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা বোকামি। তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল সর্বোচ্চ চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করা সম্ভব।

সাম্প্রতিক অতীতের প্রশাসন শিক্ষকদের মতো শিক্ষার্থীদের পরিবহনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও, পরিত্যক্ত ডেমু ট্রেনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুললেও, আশার কথা হলো, অব্যবহিত গত প্রশাসন (মার্চ-জুলাই ২০২৪) বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন। শিক্ষার্থীদের প্রধান পরিবহন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃপ্রাণ শাটল ট্রেনের সংস্কার, বগিতে ফ্যান সংযোগ ও নতুন শাটল ট্রেনের জন্য প্রচেষ্টা ইত্যাদি শিক্ষার্থীবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধনে তিনি প্রয়োজনীয় সময়-সুযোগ পাননি। এই পদক্ষেপগুলো যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের আনন্দের সীমা থাকবে না।

এদিকে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন উপাচার্য দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব বলে পরিচিত। আশাকরি তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের মাধ্যমে ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের এই অবিকল্প পরিবহনে বিশেষ গতি ও মাত্রা সংযোজিত হবে। ইতোমধ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে,  যেমন ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধি । আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সুন্দর, আনন্দময় ও আরামদায়ক শাটল ট্রেনের প্রত্যাশায় থাকলাম।

লেখক: অধ্যাপক ও প্রাক্তন সভাপতি, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল: 
[email protected]

ড. আলা উদ্দিন। প্রতিকৃতি অঙ্কন: মোতাসিম বিল্লাহ পিন্টু।
ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত