প্রায় ২৭ বছর আগে পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে চুক্তির মধ্যে দিয়ে সন্তু লারমাকে চেয়ারম্যান করে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তা পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে।
রাঙ্গামাটির জেলা শহরের রিজার্ভ বাজারে মানববন্ধন থেকে বলা হয়েছে, এই পরিষদ ভেঙে নির্দলীয় ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।
শনিবার বেলা ১১টায় রিজার্ভ বাজার মসজিদ মার্কেটের সামনে ‘ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন আয়োজিত হলেও এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছে পাহাড়ের সংগঠন ইউপিডিএফ।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের সদস্য শ্রদ্ধা চাকমা বলেন, “আমরা আজ (শনিবার) এখানে সমবেত হয়েছি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানাতে।
“গত ৫ আগস্ট এক ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে। এ সরকার দেশকে হাসিনার কুশাসন থেকে মুক্ত করতে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।”
শ্রদ্ধা বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিয়োগকৃত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকার অবশেষে গত ৭ নভেম্বর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেছে। আমরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।
“আমরা আশা করেছিলাম, সরকার একইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদও পুনর্গঠন করবে। আমাদের প্রশ্ন, জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হলে, আঞ্চলিক পরিষদ কেন পুনর্গঠন করা হচ্ছে না?”
লিখিত বক্তব্যে শ্রদ্ধা বলেন, “১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন পাস করার পর ১৯৯৯ সালের ২৭ মে হাসিনার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করেছিল। সেই সময় এই পরিষদে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তারা এখনও একনাগাড়ে ক্ষমতায় রয়েছে।
“গত ২৫-২৬ বছরে কোনও সরকার আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন বা পুনর্গঠন করেনি; এমনকি পুনঃনিয়োগও দেয়নি। অথচ পরিষদের মেয়াদ হলো ৫ বছর। সুতরাং বর্তমানে যারা আঞ্চলিক পরিষদে রয়েছে, তারা বৈধভাবে আছে কি না দেখা দরকার?”
শ্রদ্ধা বলেন, “অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে, নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে এবং এরপর এই সরকারের আমলে তিন জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।”
মানববন্ধন বলা হয়, জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী ও সুবিধাভোগীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকেও ফ্যাসিস্ট শাসন মুক্ত করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসন কায়েম করতে হবে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সইয়ের পর চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়।
সেই ‘শান্তি’ চুক্তি হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে। চুক্তির পর আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির খোঁজে প্রায় ২৭ বছর আগে শান্তি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু শান্তি ফেরেনি। এখনও পড়ছে লাশ, ঝড়ছে রক্ত। বিগত সময়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো পুনর্গঠন হলেও আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন হয়নি।
এবার আঞ্চলিক পরিষদ ভেঙে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ভেঙে আত্মপ্রকাশ করা পাহাড়ের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত খীসা। তিনি এক সময় জনসংহতি সমিতির সহযোগী ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।