ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তারও জবাবদিহি নিশ্চিতের কথা বলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধিত্ব না দেখার কথা জানিয়েছে নাগরিক সংগঠনটি।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পাশাপাশি আরও অন্তত তিনটি নির্বাচন এই ব্যবস্থায় করার সুপারিশ করেছে সুজন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠিত হয়েছে।
এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় তুলে ধরতে রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সুজন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সমাজের সব স্তর থেকে প্রতিনিধিত্ব আসেনি। ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধি একটা বড় জায়গা ছিল। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব সে অর্থে দেখতে পাচ্ছি না।”
সামনে সরকারের পরিসর বাড়াতে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে মত দেন তিনি।
অনির্বাচিত এই সরকারের দায়িত্বশীলতা নিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “ক্ষমতার ঝোঁকই হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে যাওয়া। ক্ষমতাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকেও চোখে চোখে রাখতে হবে। জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে রাখতে হবে।”
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের ২/১ জন উপদেষ্টাকে দেখলাম ক্ষেপে যেতে, কতদিন তাদের মেয়াদ এই প্রশ্নে। ক্ষেপে যাওয়া যাবে না। এই প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে।
“যতদিন আমাদের লাগে- এটা উত্তর হতে পারে না। উত্তর হবে- যত দ্রুত পারি আমরা সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেব।”
এই সরকারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পাঁচটি করণীয় ও দীর্ঘমেয়াদে দেশের সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারসহ ১৯টি বিষয়ে পরিবর্তন ও সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে সুজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমপক্ষে আরও তিনটি নির্বাচন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে আয়োজন করতে হবে।
একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পর সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শতাধিক মানুষ নিহতদের বিচারের দাবি তোলেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “বিচারের প্রক্রিয়াটা শুরু করা দরকার। যারা আর্থিক লুটপাট করেছে, তাদের তদন্ত করতে হবে। জাতিসংঘের সহায়তায় নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার।”
দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, “আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের মোকাবিলায় পাড়া-মহল্লায় একপর্যায়ে ছাত্র-তরুণদের প্রতিরোধও গড়ে তুলতে দেখা যায়। এই ঘটনার ভূয়সী প্রশংসা করেন সুজনের সম্পাদক বলেন, “এইরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা।”
জরুরি ভিত্তিতে করণীয়
সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে পাঁচটি কাজটি করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
সেগুলো হচ্ছে অতি দ্রুততার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা; নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে অবিলম্বে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ; জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় নিহতদের তালিকা তৈরি, নিহতদের পরিবারকে সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসাসহ পরবর্তীতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং দ্রুত জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তির ব্যবস্থা করাG
দীর্ঘমেয়াদে করণীয়
সুজন মনে করছে, রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ আরও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া দরকার।
সংবিধান সংশোধন: সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য টার্ম লিমিট নির্ধারণ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে আসন বণ্টনব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করা, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের সংবিধানে রূপান্তর।
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর ও দলীয়করণমুক্ত করতে হবে। এগুলোকে রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সকল সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য নিয়োগ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন ও আইনের সংস্কার প্রকৃত গণরায়ের ভিত্তিতে সরকার গঠনের লক্ষ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন ও এই পদ্ধতিতে নারীদের জন্য আসন বণ্টন পদ্ধতি নির্ধারণ।
‘না’-ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন। মনোনয়ন বাণিজ্য ও নির্বাচনে টাকার খেলার অবসান ঘটানো, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্তকরণ ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারণ এবং পুরো ‘ইলেক্টরাল সাইকেল’ বা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।
দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কমপক্ষে আরও তিনটি নির্বাচন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে আয়োজন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানিক সংস্কারের পর সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান দলীয়করণমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা শুরু করলে, তখন দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন : নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করতে হবে এবং সেই কমিশনের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। পরবর্তীকালেও যাতে এই ধারা কার্যকর থাকে, সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন করতে হবে। সেই আইনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অথবা তার প্রতিনিধি, সংসদের বিরোধী দলের নেতা অথবা তার প্রতিনিধি, প্রধান বিচারপতি অথবা তার প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধি ও নির্বাচন কমিশনের সচিব সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের বিধান করতে হবে।
সংসদের কার্যকারিতা : জাতীয় সংসদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে একটি আচরণবিধি প্রণয়ন, বাৎসরিকভাবে সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব প্রদান, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী তাদেরকে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা এবং তাদেরকে আইন প্রণয়নে নিবিষ্ট রাখতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসমূহের মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : মাজদার হোসেন মামলার রায় যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিচারপতিদের নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন করে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যাক্তিদের নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের আওতায় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ : সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে (১১, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ) স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের চেতনায় প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতিতে করতে হবে। স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজন করতে হবে। ক্ষমতা, দায়িত্ব ও সম্পদে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘বটম-আপ’ উন্নয়ন পরিকল্পনার ধারণাটি কার্যকর করতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স : দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনাসহ বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ লুণ্ঠনকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং এ খাতে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধ করতে হবে। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস রাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য ও সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যাতে চৌর্যবৃত্তির অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা।
পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্মত সেবা সুলভ বা স্বল্পমূল্যে প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ এবং দলিত জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা প্রদানসহ তাঁদের প্রতি সকল বৈষম্যের অবসান ঘটানেরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মানবাধিকার সংরক্ষণ : জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অবসান ঘটাতে হবে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষ্যমের অবসান ঘটিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ, সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সকল স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
তরুণদের জন্য বিনিয়োগ ও তাদের নেতৃত্বের বিকাশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাজনিত বিশেষ সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মানসম্মত শিক্ষা : ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেধা ও মননে বিকশিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব প্রদান ও তাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্ষেত্রে বা শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হলো, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : গণমাধ্যম যাতে ভীতিমুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি একটি স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যম যাতে সত্যিকারের ‘ওয়াচডগ’ এর ভূমিকা পালন করতে পারে সেজন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সাইবার সিকিউরিটি এ্যাক্টের নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ বিয়োজনসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের পুনর্মূল্যায়ন করে অপচয়মূলক ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পসমূহ বাতিল করতে হবে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বস্তবায়ন ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা পাহাড়ি আদিবাসীদের (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর) প্রতি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার পূরণে পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের অগ্রগতির পথ সুগম করার প্রতিও অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বG
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন: নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি বৈষম্য, পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার পরিহার ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে।
নাগরিক সক্রিয়তা : নাগরিক সমাজ যাতে স্বাধীনভাবে ভয়-ভীতিহীন পরিবেশে ‘ওয়াচ-ডগ’ ও প্রেসার গ্রুপের ভূমিকা পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নাগরিক সমাজকে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে।
সে কারণেই রাষ্ট্র সংস্কারের এই প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য যৌক্তিকভাবে যতটুকু সময় প্রয়োজন হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোকে মেনে নিতে হবে।
তারপরেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পূর্বেই যদি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনও পরিবর্তন আসবে না।