২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার রুটিন গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা আগামী বছরের ১০ এপ্রিল।
এর ঠিক দুই দিন পরই শুরু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’। তাই এই রুটিন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
সেই সঙ্গে উৎসব উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে পিসিপি।
রবিবার সকালে রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেয় পিসিপির নেতারা। সেখানে পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা ও রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমাসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মূলত ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসুক’ থেকে ‘বৈ’, মারমাদের ‘সাংগ্রাইং’ থেকে ‘সা’, আর চাকমাদের ‘বিজু’ উৎসব থেকে ‘বি’ এক করে হয়েছে ‘বৈ-সা-বি’। প্রতিবছর ১২ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে পাহাড়ে এ উৎসব পালন করা হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ১২ ডিসেম্বরে প্রকাশিত ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে ১৩ ও ১৫ এপ্রিলে যথাক্রমে বাংলা ২য় পত্র ও ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এর মাঝে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে একদিন সরকারি ছুটি রাখা হয়েছে।
নিপন ত্রিপুরা ও রুমেন চাকমার সই করা স্মারকলিপিতে বলা হয়, এসএসসি পরীক্ষার রুটিন তৈরির সময় ছুটি হিসেবে বাংলা নববর্ষকে বিবেচনা করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবগুলোকে ছুটির আওতায় আনা হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের মাঝে এ উৎসবের ঐতিহ্যগত ও আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে স্বারকলিপিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১২ ও ১৫ এপ্রিল সরকারি ছুটির ঘোষণা দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও ছুটির নির্দেশনা দেওয়া নেই। তাই অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডারে এ দিনগুলো ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
এর ফলে উৎসবের দিনগুলোতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা থাকায় জুম্ম শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের প্রধান সামাজিক উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে ১৩ এপ্রিল ও ১৫ এপ্রিল পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে এসএসসি পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে। পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করারও দাবি তোলা হয়েছে।