Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

রিজার্ভ কমে আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তিতে সংশয় বাড়াচ্ছে

মার্কিন ডলার
মার্কিন ডলার
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও কমেছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৪ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে।

আইএমএফ চলতি মার্চ মাস শেষে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল। ফলে সংস্থাটির তৃতীয় কিস্তির ঋণ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন অর্থনীতি গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছা রিজার্ভ কমতে শুরু করার পর বছর খানেক ধরেই চলছে উদ্বেগ। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া নানা পদক্ষেপের পরও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। আর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নামে ২৫ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে।

আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৫৩ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ২২ কোটি ডলার।

সবশেষ গত জানুয়ারি মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার পথ মসৃণ করতে রিজার্ভ বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সোয়াপ কারেন্সি সুবিধার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা বাড়তি ডলার রিজার্ভে জমা করাসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও কাজ হচ্ছে না।

ডলার অদল-বদল বা সোয়াপ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। বুধবার পর্যন্ত ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার রেখে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা নিয়েছে সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক।

অন্যদিকে বাজারে ডলার সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত) প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। আর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বিক্রি করেছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হয় ১২ ডিসেম্বর। তবে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় বাংলাদেশ এ শর্তে কিছুটা ছাড় চাইলে সংস্থাটি তা পুনর্নির্ধারণ করে।

আইএমএফের নতুন শর্তে ডিসেম্বর শেষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন, এ বছরের মার্চ শেষে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন এবং জুন শেষে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি গেলেও তা পূরণ সম্ভব হয়নি।

মার্চ মাস শেষ হতে তিন দিন বাকি; এই মাসের লক্ষ্যও পূরণ হবে না, তা এটা এখন অনেকটাই স্পষ্ট, বলছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ৩ থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার কম থাকে। বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে হিসাব করলেও নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। অর্থাৎ আইএমএফের শর্ত পূরণ হবে না।”

সেক্ষেত্রে কিস্তি ছাড়ের আগে সংস্থাটি প্রশ্ন তুলবে বলেই মনে করেন দীর্ঘদিন আইএমএফে কাজ করে আসা আহসান মনসুর।

“সেক্ষেত্রে তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে।”

প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ হলো আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও আকুর বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেই রিজার্ভ।

আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত, সেটা।

আমদানি কমায় এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা কমতে কমতে এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে আইএমএফের ঋণের দ্বারস্ত হয় সরকার। তাদের শর্ত মেনে গত বছর থেকে ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত