Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

রিজার্ভ আরও বেড়েছে

[publishpress_authors_box]

দেশে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

বৃহস্পতিবার রিজার্ভের এই তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত এই রিজার্ভ ছিল। আর গ্রস হিসাবে রিজার্ভ রয়েছে ২৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।

এ সপ্তাহ আগে ২০ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে তা ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং টাকা-ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার জমা দেওয়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

নিয়ম অনুযায়ী, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এর পর রিজার্ভ কিছুটা কমে যাবে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। মহাসংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা অবশ্য আকুর থেকে বেরিয়ে এসেছে।

প্রতি দুই মাসের আমদানি বিল পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রিজার্ভসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। বিপিএম-৬ হিসাব ও গ্রস অনুযায়ী এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিপিএম-৬ হলো আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সেই পরিমাণ ডলারের হিসাব করা হয় যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো সময় চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। এটিকে আইএমএফ বলে নিট রিজার্ভ। গ্রস রিজার্ভ থেকে সব ধরনের দায় বাদ দিয়ে এই নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়।

গ্রস হিসাব হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব। এ হিসাবে মোট রিজার্ভ থেকে গঠন করা বিভিন্ন তহবিলের অর্থসহ হিসাব দেখানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আশার কথা হচ্ছে, রিজার্ভের দুই প্রধান উৎস রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় দুটোই বাড়ছে। এখন রিজার্ভ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।”

তিনি বলেন, “বেশকিছু ব্যাংক ডলার জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। এসব ডলার জমার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। সামনে সেই ডলার ফেরত নিলে রিজার্ভ হয়তো কমতে পারে; তবে এর মধ্যে বিভিন্নভাবে রিজার্ভ বাড়বে।”

এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে। এই দামেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার অদলবদল (সোয়াপ) করছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জানুয়ারি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

১ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে রিজার্ভ নামে ২৫ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার।

৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল একই, ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ গত মঙ্গলবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। গ্রস হিসাবে ওঠে ২৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারে।

সবশেষ বুধবার তা আরও বেড়ে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। গ্রস হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে।

আমদানি কমায় এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ ডিসেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

গত বছরের ৭ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল; কমতে কমতে ১৩ ডিসেম্বর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

এর পর আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। তবে গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

গত ৮ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছিল ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বছর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলার জারি করে টাকার সঙ্গে ডলার অদলবদল বা সোয়াপব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার–টাকা অদলবদল করতে পারছে। সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সুবিধা চালুর পর প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিচ্ছে।

১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ১০ দিনে টাকা-ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধায় ১২টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত