Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সিন্ডিকেটে করপোরেট যোগ চড়াচ্ছে চালের বাজার

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
Picture of আবদুর রহিম হারমাছি

আবদুর রহিম হারমাছি

দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম এবার আমনের ভরা মৌসুমেও চড়ে উঠে। গত ৭ জানুয়ারির ভোটের পরপরই চালের দাম কেজিতে অন্তত ৫-৬ টাকা মিলগেটেই বেড়ে যায়। এরপর প্রশাসনের অভিযানে এক-দুই টাকা কমলেও তারপর একই অবস্থায় রয়েছে। রমজান সামনে রেখে সরকার শুল্ক কমানোর পরও তার প্রভাব পড়েনি চালের দামে।

আমন মৌসুমে চালের বাড়তি দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের যুক্তি ছিল, ধানের দাম বাড়ায় বেড়েছে চালের দাম। তবে ভোক্তাদের প্রশ্ন, আমন ধানের দাম বাড়লেও তার চাল বাজারে আসার কথা বৈশাখ মাসে, তাহলে পণ্যটির দাম এখন বাড়তি কেন? আর এখন সারাদেশে বোরো মৌসুমে সেচ দিয়ে ধান লাগানো চলছে, যা উঠবে মে মাসের দিকে। তখনও কি একই অজুহাতে চালের দাম বেড়ে যাবে- এমন শঙ্কা ও প্রশ্ন সামনে এসেছে।

এক্ষেত্রে বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, দেশের প্রায় শতভাগ মানুষের নিত্যপণ্যটিতে বড় ব্যবসার সুযোগ রয়েছে, তাই এ খাতে বিনিয়োগে ঝুঁকছে বড় শিল্প গ্রুপগুলো। ধান থেকে চাল, মুড়ি তৈরি ও বিপণনে বেশ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ এরই মধ্যে বড় বিনিয়োগ করে বাজার দখলের চেষ্টা করছে।

ফলে চালকল ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শিল্প গ্রুপগুলো ধান ওঠার মৌসুমের শুরুতেই কম মূল্যে ব্যাপক পরিমাণে ধান কিনে ফেলে নামে-বেনামে। এতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মোকামেই ধানের দাম বেড়ে যায়। তখন বেড়ে যাওয়া দামটাকেই ব্যবসায়ীরা কেনা দাম বলে প্রচার করে। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমনের মৌসুমেও একই ঘটনা ঘটেছে।

কৃষকের উৎপাদিত ধান স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসয়ী, বেসরকারি ও সরকারি পর্যায়ের সংগ্রহের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের হাত ঘুরে চাল পৌঁছে যায় গ্রাম বা শহরের হাট, খুচরা ও পাইকারি বাজার, সুপারশপ ও মুদি দোকানে। খুচরা পর্যায়ে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন চালের দাম।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বড় বড় চলকল মালিকদের অসাধুচক্রের সঙ্গে ৫-৬টি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানও যোগ দিয়ে বাজার অস্থির করে তুলেছে। ব্রয়লার মুরগি, ডিম, গম ও ভোজ্য তেলের পর এবার চালের বাজারেও থাবা দিয়েছে করপোরেটরা। এভাবে চালের বাজারও করপোরেটদের হাতে চলে গেলে সরকারের পক্ষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদররা সতর্ক করে বলছেন, গতবারের মতো দ্বাদশ সংসদেও অনেক সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। এদের অনেকেই চাল ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত, এরা সরকারকে ভয় করে না। জোট হয়ে ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার ছিল তার মধ্যে এক নম্বর ছিল দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। গত ৭ জানুয়ারির ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।

তবে নির্বাচনের পরপরই চালভেদে কেজিতে বাড়ে ৫-৬ টাকা। এরপর থেকে দামের লাগাম টানতে ঢাকাসহ সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। এ অভিযানের ফলে বাজারে চালের দাম কমেছে বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তবে তা ১-২ টাকা কমলেও আগের অবস্থায় ফেরেনি।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজারদর অনুযায়ী, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয় ৪৮-৫২ টাকায়। এর এক সপ্তাহ আগেও এই চাল ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়। মাঝারি মানের চাল ৫২-৫৬ টাকা থেকে কমে হয় ৫০-৫৫ টাকা কেজি হয়। আর সরু চাল ছিল ৬০-৭৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০-৭৫ টাকা।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজারে টিসিবির দামের চেয়ে এই তিন ধরনের চাল কেজিতে ২-৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে তা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১-২ টাকা কম।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি টিসিবির বাজার দর অনুযায়ী, মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা, মাঝারি ৫০-৫৬ টাকা ও সরু চাল ৬২-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর এক মাস আগে ১১ জানুয়ারি এই তিন ধরনের চালের কেজি ছিল ৪৮-৫২ টাকা, ৫০-৫৫ টাকা ও ৬০-৭৫ টাকা।

১৯ ফেব্রুয়ারি টিসিবির বাজার দর অনুযায়ী, প্রতিকেজি মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকা, মাঝারি ৫০-৫৫ টাকা ও সরু চাল ৬০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এই তিন ধরনের চালের দাম আরও বেশি দেখা গেছে। 

দেশে এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমনের ফলনের চূড়ান্ত হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রাথমিক হিসাব দিয়ে বলেছে, এবার ১ কোটি ৭২ লাখ টন আমন ধান উৎপাদন হবে। গত বছর প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টন।  

দেশে বছরে তিন কোটি টনের কিছু বেশি চাল লাগে। এই হিসাবে বছরে মোট যে চালের প্রয়োজন হয়, তার অর্ধেকই আমন ধান থেকে মিটে যাবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে মোট খাদ্যশস্য মজুত ছিল ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮ টন। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৩১ হাজার ১০২ টন, গম ২ লাখ ১৩ হাজার ৩১৬ টন এবং ধান ১৬ হাজার ৫৬ টন।

আমনের বাম্পার ফলন ও পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও অনেকটা হঠাৎ করেই বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। নির্বাচনের আগে ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়ে যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের কারণে মাঝে চালের দাম একটু কমলেও আবার বেড়েছে।  

ঢাকার বাইরে দেশের চাল উৎপাদনের জেলা হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় চালের দাম পাইকারি বাজারে কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কোথাও দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা, কোথাও ২ থেকে ৩ টাকা। এ দাম কমার পরও তা আগের অবস্থায় ফেরেনি। 

বাজারে চালের দাম বাড়ার জন্য চালকল মালিকরা ধান ব্যবসায়ীদের দুষছেন। আর ধান ব্যবসায়ীরা এই দায় চাপাচ্ছেন মিলমালিকদের ওপর। করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও চালের দাম বাড়ানোর অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।

দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছে। অভিযানও চালায়। ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি সরু চালের দাম বেঁধে দেওয়া হয় খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬৪ টাকা।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখন খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা ও দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি।

পরে সরকার ডিম আমদানির উদ্যোগ নিলে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আলু ও পেঁয়াজ এখনও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি। নিষেধাজ্ঞা তুলে ভারত তাদের পেঁয়াজ বাংলাদেশেও রপ্তানি করতে চাইছে, এতে পণ্যটির মূল্য শিগগিরই কমতে পারে। 

কৃষকের আকুতি

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়ার খালপাড় এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান অনিক। তাদের এক একর ৫০ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে। আমন ও বোরো ধান ফলিয়ে খোরাকি রাখার পাশাপাশি কিছু ধান বিক্রিও করেন।

ধান উৎপাদনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে ব্যয় হয় তা নিয়ে কথা হয় অনিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক কাঠা (১০ শতাংশ) জমি আবাদ করতে ৬০ টাকার বীজ ধান লাগে, আবাদে খরচ হয় ৫০০ টাকা, ধান রোপণে ৫০০ টাকা, পানি দিতে খরচ ৬০০ টাকা, নিড়ানি ৩০০ টাকা, ডিএপি সার প্রতি কাঠায় ৫ কেজি ১২৫ টাকা, এমওপি সার প্রতি কাঠায় তিন কেজি ৭৫ টাকা, ইউরিয়া ৫ কেজি ১৫০ টাকা, বালাই নাশক ২০০ টাকা, ধান কাটা এক হাজার টাকা, ধান মাড়াই ৩০০ টাকা। এছাড়া পাঁচ মাস একজন মানুষকে শ্রম দিতে হয়।

নিজস্ব শ্রম ছাড়া এক কাঠা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় চার হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি কাঠায় ধান পাওয়া যায় ৭-৮ মণ। উৎপাদিত মোটা-চিকন ধান তারা মাড়াইয়ের পর বাড়ি থেকে বিক্রি করেন সর্বোচ্চ ৭০০-৮০০ টাকা মণ। এতে প্রতি কাঠায় কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। 

তবে বাজারে চালের দাম শুনলে ‘কষ্ট লাগে’ মন্তব্য করে লুৎফর রহমান অনিক বলেন, “কৃষকের শ্রমের ফসল অন্যরা নিয়ে যায়। দেখার কেউ নেই।”

বাজারের কতটা লাগাম চালকল মালিকদের হাতে

দেশে মিনিকেট চালের সবচেয়ে বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে বর্তমানে ৫৫টি স্বয়ংক্রিয় চালকল এবং প্রায় ২০০ হাসকিং (সনাতন) চালকলে চাল উৎপাদন হয়। প্রতিদিন এই মোকাম থেকে ৩০০-৪০০ টন চাল ঢাকাসহ দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারে যায়। চালকল মালিকরা বর্তমানে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে মিনিকেট চালের ধান কিনছেন।

বাজুমারা রাইচ মিলের (সনাতন) ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, এক মণ ধানে চাল হয় ২৭ কেজি আর, গুঁড়া পাওয়া যায় ১৩ কেজি। এই গুঁড়া বিক্রি হয় ৫৮০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে। ট্রাক ভাড়া, ধান সিদ্ধ ও ভাঙানো মিলিয়ে সনাতন চালকলে প্রতি কেজি চালে খরচ পড়ে প্রায় আড়াই টাকা। এই হিসাবে বর্তমানে সনাতন চালকলে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের উৎপাদন খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ৫১ টাকা।

শহিদুল ইসলাম বলেন, এই চাল স্বয়ংক্রিয় চালকলে প্রসেস বা বাছাই করতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে আড়াই টাকার কাছাকাছি। এই হিসাবে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫৩ টাকার কাছাকাছি। তবে ধানের দামের উঠানামার সঙ্গে সঙ্গে চালের দামও কম বেশি হয়।

চালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার ৮০ ভাগ মিনিকেট চাল স্বয়ংক্রিয় চালকলে প্রস্তুত করা হয়। এসব চালকলে উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ৫২ টাকা।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, আমন মৌসুমে ব্রি ৮৭, ব্রি ৭৫, ব্রি ৭১ ও বিনা ১৭ ধানের চাাষ বেশি হচ্ছে। এই জাতগুলো অপেক্ষাকৃত সরু। আগে এই ধানের চাল তৈরি করে চালকল মালিকরা ২৮ চাল বলে বাজারে ছাড়ছিল। ইদানিং এই ধানের চাল স্বয়ংক্রিয় চালকলে প্রসেস করে মিনিকেট বলে বিক্রি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাজানগরের এক সনাতন মিল মালিক বলেন, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে আমন মৌসুমে উৎপাদিত ব্রি ৮৭ ও বিনা ১৭ জাতের ধান সর্বোচ্চ ১৩০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তিনিসহ অনেক সনাতন চালকল মালিক এ্সব ধান কিনে চাল তৈরি করছেন। এ চাল উৎপাদনে তাদের কেজিতে খরচ পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। তাদের কাছ থেকে এই চাল কিনে প্রসেস করে তা মিনিকেট বলে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছেন স্বয়ংক্রিয় চাল কলমালিকরা।

তবে কুষ্টিয়া জেলা অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, “কাগজে কলমে চালের ব্যবসায় যে লাভ দেখা যাচ্ছে সেটি আসলে সঠিক নয়। স্বয়ংক্রিয় চালকলে প্রতি কেজি চাল প্রসেসিংয়ে আড়াই টাকার কাছাকাছি খরচ হয়- এটা সঠিক। এর বাইরেও আরও অনেক খরচ আছে। চাল উৎপাদন করে আসলে কেজিতে ৩০-৪০ পয়সার বেশি লাভ থাকে না।”  

শিল্পগ্রুপের প্যাকেট চাল চড়া

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুদৃশ্য প্যাকেটে বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানির চাল যে দামে বিক্রি করা হয়, তার সঙ্গে বাজারে প্রচলিত চালের দামের ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত ব্যবধান রয়েছে কেজিতে। পোলাওর চালের ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ টাকার ব্যবধানও দেখা গেছে।

এসিআই ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের ৫ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ টাকায়। এ হিসাবে কেজি ৯৪ টাকা। প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির ৫ কেজির নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ টাকায়। এতে কেজি পড়ে ৯৮ টাকা।

১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শেওড়াপাড়া ও হাতিরপুল বাজারে প্রতি কেজি রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৪ টাকা। এর থেকে ৩-৪ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের নাজিরশাইল চাল।

পোলাওর চালের ক্ষেত্রে দামের পার্থক্য আরও বেশি। বাজারে প্রচলিত ইস্পাহানি কোম্পানির পার্বণ ব্র্যান্ডের এক কেজির প্যাকেটের দাম ১৮০ টাকা। প্রাণের চিনিগুঁড়া ১৭৫ টাকা। তীরের চিনিগুঁড়া ১৭৫ টাকা। স্কয়ারের চাষী সুগন্ধি চিনিগুঁড়া ১৭৫ টাকা। এফএম অ্যাগ্রো ফুডের চালের কেজি ১৭৫ টাকা।

অথচ বাজারে প্রচলিত খোলা চিনিগুঁড়া চালের দাম ১৪০-১৪৫ টাকা। কালোজিরা ১৫০ টাকা কেজি। তা ছাড়া অন্যান্য জাতের পোলাওর চাল ৮০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

ঢাকাসহ সারাদেশে আছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সুপার শপ। এখানে এই গ্রুপের চাল বিক্রি হয়। এর বাইরে বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানেও বিক্রি হয় এই গ্রুপের চাল।

দেশের আরেক রিটেইল চেইনশপ স্বপ্ন। এটি এসিআই গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। স্বপ্নে এসিআই ব্র্যান্ডের সব ধরনের চাল খোলা ও প্যাকেট বিক্রি হয়। বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হয় এই গ্রুপের চালও।

মুড়ির ব্যবসা

স্কয়ার, প্রাণ আরএফএল, এসিআই, ইস্পাহানিসহ আরও কয়েকটি শিল্প গ্রুপ নিজের কারখানায় মুড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। এই মুড়ি তৈরির জন্য বছরে কী পরিমাণ চাল প্রয়োজন হয়, তার কোনও সঠিক তথ্য দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাজার অস্থিরতায় বড় প্রভাবক করপোরেটরা

গত ২২ জানুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সিটি গ্রুপ, স্কয়ার, প্রাণ আরএফএল, মেঘনা গ্রুপ, এসিআই, আকিজ এসেনশিয়ালসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা করে ধান কেনা থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। অবৈধভাবে বেশি কিনে মজুদ করলে ছাড় দেওয়া হবে না।

মন্ত্রী বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যালু অ্যাড করে বাজারে পণ্য বিক্রি করে, সে কারণে তারা বেশি দামে বাজার থেকে ধান কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাজার থেকে অল্প পরিমাণ ধান কিনলেও তার প্রভাব পড়ে খুব বেশি। তখন অন্যরাও বেশি দামে ধান কিনতে বাধ্য হয়। এটা বাজারের জন্য অশুভ লক্ষণ।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ বি এম খোরশেদ আলম খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ব্রয়লার মুরগি, ডিম, চিনি ও ভোজ্য তেলের পর এবার চালের বাজারেও করপোরেট সিন্ডিকেট থাবা গেড়ে বসেছে। ধান কিনে মজুতসহ নানা কারসাজি করে চালের বাজার অস্থির করে তুলেছে। তারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে মজুতদারি করে জনগণের রক্ত চুষে খাচ্ছে।

“কিছু ব্যবসায়ী করপোরেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এতে কৃষক ধানের বেশি টাকা পায় না। বরং মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে যায়। ১ হাজার টাকা মণ দরে কয়েক লাখ মণ ধান তারা গোডাউনে মজুত করেছে। পরে ১ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছে।”

চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খোরশেদ আলম খান তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন। এক. যারা অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নয় তারা ব্যবসা করতে পারবে না। দুই. অবৈধ মজুত করলে ফাঁসি দেওয়ার বিধান রেখে আইন প্রণয়ন এবং তিন. চালের এই ক্ষুদ্র ব্যবসায় বড় ব্যবসায়ী যেমন- ব্যাংকের মালিক, বীমা কোম্পানির মালিক ও তেল-ডাল বিক্রি করে- এমন ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেওয়া যাবে না।

“এই তিনটি পদক্ষেপ নিতে পারলে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব, তা না হলে হবে না”, যোগ করেন খোরশেদ আলম খান।  

চালের দাম বাড়ায় করপোরেট কোম্পানিগুলোকে যেভাবে দায়ী করা হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশে চালের মোট চাহিদার ১ শতাংশও আমরা বাজারজাত করি না। তাহলে আমরা সিন্ডিকেট করি কী করে? দাম বাড়াই কীভাবে? এটা আমাদের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অভিযোগ।

“চালের দাম দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা কোনোভাবেই দায়ী নই। দিনাজপুরে আমাদের নিজস্ব মিল আছে। আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে চাল তৈরি করে আমাদের নিজস্ব সুপার শপে বিক্রি করি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বাজার ও দোকানেও আমাদের চাল পাওয়া যায়।”

কামাল বলেন, “আমরা খুবই ভালো মানের চাল বাজারজাত করি। সুন্দর করে প্যাকেট করা হয়। চাল মেশিনে তৈরির সময় কিছু অংশ বাদ দিতে হয়। সেগুলো অবশ্য অন্য কাজে লাগে। সব মিলিয়ে আমাদের চালের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। সে কারণে আমাদের চালের দাম বেশি পড়ে।

“এখানে একটা বিষয় আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, আমাদের চালের ক্রেতা কিন্তু উপরের স্তরের মানুষ। ধনীরা আমাদের চাল কেনেন। সাধারণ মানুষ আমাদের চাল কেনেন না। তাই আমার প্রশ্ন আমরা কীভাবে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করি; কীভাবে দাম বাড়াই।”

কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী দিনাজপুরে প্রাণ-আরএফএলের মিল পরিদর্শন করেন।

খাদ্যমন্ত্রী বাস্তব অবস্থা দেখেছেন উল্লেখ করে কামাল বলেন, “করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়, তা সঠিক নয়।”

তাহলে চালের দাম কেন বাড়ছে- এ প্রশ্নের উত্তরে কামাল বলেন, “মূলত ধানের দাম বাড়ার কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম বেড়েছিল। এখানে আরেকটি বিষয় আছে, আমাদের দেশে ধান উৎপাদন নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা যে তথ্য দেয়, তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।”

আরেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশে মোট চাহিদার মাত্র ৩ থেকে ৪ ভাগ বাজারজাত করে থাকে করপোরেট কোম্পানিগুলো। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা কোনোভাবেই দায়ী নই।”

ভোক্তা অধিদপ্তর ও অর্থনীতিবিদ কী বলছেন

আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান। তারা বলছেন, দেশের ৫০-৫৫টি বড় অটো রাইস মিল ও ৫-৬টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে নির্বাচনের পরপরই চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বোরো ধান না ওঠা পর্যন্ত বাজারে চালের দাম কমবে না বলে মনে করছেন তারা।

‘নতুন সরকারকে বিব্রত করতে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে’ মন্তব্য করে ভোক্তার ডিজি সফিকুজ্জামান গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অসাধু মিলমালিক চক্র ডিসেম্বরের পর হঠাৎ করে চালের দাম বাড়িয়েছে।

“মিলমালিকরা বলতে চাইছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা এটি করেছেন। তবে ধানের দাম বাড়লেও সেই ধানের চাল বাজারে আসার কথা বৈশাখ মাসে। নতুন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সেই সুযোগে মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। ৫-৬টি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বাজার আরও অস্থির করে তোলে।”

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে দেশের মোট চালের চাহিদার ১০ শতাংশের মতো জোগান দেয় জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, “দিন যত যাচ্ছে, তাদের (করপোরেটদের) ব্যবসা বাড়ছে। তারা বড় বড় মিলমালিকদের কাছ থেকে সুবিধাজনক সময়ে চাল কিনে মজুত করে রাখে। পরে নানা নাম দিয়ে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।

“স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, এসিআইসহ বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কিছু দিন ধরে মুড়ি তৈরি করে বিক্রি করছে। এতেও প্রচুর চালের প্রয়োজন হয়। প্রশ্ন উঠেছে, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাল-মুড়ির ব্যবসা করতে পারবে কি না- এ বিষয়ে বর্তমান আইনে কিছুই বলা নেই।”

ভোক্তার ডিজি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে চালের বাজার চলে গেলে সরকারের পক্ষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

“এটা-ওটা, প্যাকেট খরচ, ট্যাক্স-কর-এর নামে বেশি দামে চাল বিক্রি করবে তারা। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এক কেজি পোলাও চাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছে। ১০৫-১১০ টাকায় কিনে তারা এত দামে বিক্রি করছে। এতেই বোঝা যায়, তারা কী পরিমাণ লাভ করছে।”

“তাই আমার মনে হয়, চালের ব্যবসা করপোরেটগুলোর হাতে না থাকাই ভালো। আর এটা যদি করতে হয়, তাহলে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে”, যোগ করেন ভোক্তার ডিজি।

খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর আইন প্রতিরোধ) আইন ২০২৩ এর বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে, খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে। এ বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভোক্তার ডিজি বলেন, “আইন বাস্তবায়ন হলে ছাঁটাই করে চালের পুষ্টিকর অংশ বাদ দেওয়া বন্ধ হবে। বস্তার গায়ে মিলগেটের দাম, ধানের জাত ও উৎপাদন তারিখ উল্লেখ থাকবে। এতে চালে বাড়তি মুনাফা করার প্রবণতা কমে আসবে ব্যবসায়ীদের।”

খুচরা বিক্রেতা কেজিতে ৪-৫ টাকা লাভ করতে চায় উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, “মিলগেট আর খুচরা বাজারে দামের বিস্তর ফারাক। এখন সকল পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের লাভ করার প্রবণতা খুব বেশি।”

কৃষি অর্থনীতিবিদ ঢাকা স্কুল অব ইকনোমিকসের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাজারে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ ছিল না। সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় বড় অটোমিল মালিক আর কয়েকটি বড় করপোরেট হাউস এই সিন্ডিকেট গড়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা না নিলে কিন্তু চালের দাম কমবে না।

“একটি কথা মনে রাখতে হবে। গত সংসদের মতো এবারের সংসদেও কিন্তু ৬০-৬৫ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। এদের অনেকেই চাল ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। সে কারণেই এরা সরকারকে ভয় করে না। ইচ্ছেমতো সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।”

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সরকার যদি সত্যিকার অর্থে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বা সহনীয় রাখতে চায় তাহলে তিনটি কাজ করতে হবে। একটি হচ্ছে- শক্ত হাতে এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

“যারা সরকার ও মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আরেকটি হচ্ছে- সরকার টিসিবিসহ অন্য কর্মসূচির মাধ্যমে কম দামে যে চাল বিক্রি করছে, তা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ করতে হবে।”

“আর সবশেষ যে কাজটি করতে হবে, সেটি হচ্ছে- আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য এখনই ১০ লাখ টন চাল আমদানি করে রাখতে হবে। যাতে সরকারের গুদামগুলোতে মজুত ২৫ লাখের টনের বেশি থাকে। সরকার মনে হয়, সেই পথেই যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে”, যোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম।

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সাবেক বাণিজ্য সচিব ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সরকারি গুদামে থাকা চাল দ্রুত বাজারে ছেড়ে সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি সকাল সন্ধাকে বলেন, “চালের বাজারের অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কিছু দিন সংযত ছিলেন। এখন তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এদের থামাতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।”

খাদ্যমন্ত্রী কী বললেন

ঢাকাসহ সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযানের কারণে বাজারে চালের দাম কমেছে বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এখন থেকে বস্তার গায়ে মিলগেটের দাম, ধানের জাত ও উৎপাদন তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এতে মিলগেটের দর জানতে পারবেন ক্রেতারা।

“খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর আইন প্রতিরোধ) আইন ২০২৩ এর বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে।

“আইন বাস্তবায়ন হলে ছাঁটাই করে চালের পুষ্টিকর অংশ বাদ দেওয়া বন্ধ হবে। বস্তার গায়ে মিলগেটের দাম, ধানের জাত ও উৎপাদন তারিখ উল্লেখ থাকবে। এতে চালে বাড়তি মুনাফা করার প্রবণতা কমে আসবে ব্যবসায়ীদের মনে করছে সরকার।”

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক প্রতিবেদক]

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত