দেশের অর্থনীতি বড় ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাই শুধু উচ্চ প্রবৃদ্ধির চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির দিকে সরকারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
অর্থনীতির এই গবেষণা সংস্থা বলছে, আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে সরকারকে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির দিকে বেশি নজর দিতে হবে। কারণ, এদেশে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত গরীবের উপর পড়ছে বেশি।
এক্ষেত্রে সংস্থাটি তাদের পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেছে। তারা বলছে, গত ৫ বছরে গরীব-নিম্নবিত্তের খাওয়া মোটা চালের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সে তুলনায় ধনীর খাওয়া চালের দাম ততটা বাড়েনি।
রবিবার সিপিডির ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের নেতৃত্বে আইআরবিডির কর্মসূচির আওতায় ওই প্রবন্ধটি করা হয়। তবে অনুষ্ঠানে তার পক্ষে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
এই অর্থনীবিদ মনে করেন, কয়েকদিনের মধ্যে আগামী বাজেট পেশ করা হবে, তাই এই সময় অর্থনীতির স্বাধীন পর্যালোচনা তাৎপর্যপূর্ণ।
সিপিডির প্রবন্ধে ছয়টি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, সরকারি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের পার্ফর্মেন্স, কৃষি খাত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
সিপিডি মনে করে, দেশের অর্থনীতি এখন একটি বড় ধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধ যতটা না দায়ী, তার থেকে বেশি দায়ী সরকারের দুর্বল নীতি, দুর্বল শাসন কাঠামো এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যর্থতা। চলতি অর্থবছরের তিনটি প্রান্তিকে এসব সংকট বেশি করে বেরিয়ে এসেছে।
রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতায় সরকারের কাছে অর্থের সংকট দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে গবেষণা সংস্থাটি। তারা বলছে, এ মুহূর্তে সরকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের অর্থের উপর নির্ভরশীল। বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য সংকট, রিজার্ভে চাপ- এসব ক্রমাগত অবনতিশীল। এর ফলে অর্থনৈতিক অবস্থার আরও সংকট বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য।
প্রবন্ধের পর্যালোচনা তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “এসব সংকট কেবল এই অর্থবছরেই নয়, গত অর্থবছরেও এসব সংকটের মধ্যে দিয়ে আমরা গিয়েছি।
“সেটির কারণেই কিন্তু সরকারকে আমরা দেখতে পেয়েছি, ইতিবাচকভাবেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে গিয়েছে, বিভিন্ন রকমের সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। এবং সরকারের যে বাজেটোরি সাপোর্ট দরকার- ব্যালেন্স অব পেইমেন্টের ক্ষেত্রে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য, সেই উদ্যোগের (আইএমএফের সংস্কার পরামর্শ) অংশ হয়েছে (সরকার) ২০২৩ অর্থবছরে । তবে দূর্ভাগ্যবশত, এখন পর্যন্ত কিন্তু আমরা অর্থনীতিতে সংস্কার কার্যক্রম যেটা নেওয়া হয়েছে, শুরু হয়েছে, সেটার একটা বড় রকমের ফলাফল, ইতিবাচক ফলাফল, সেটা এখনও দেখতে শুরু করিনি।”
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকের সাম্প্রতিক কয়েকটি সংস্কার উদ্যোগ্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তবে সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন নীতি সংস্কার করছে, একটি বাজারভিত্তিক বিনিময় ও সুদহারে গিয়েছে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। এবং একই সাথে রিজার্ভে অবমন ঠেকোনোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে গরীবের চ্যালেঞ্জগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবেলায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রত্যাশা, আগামী ৬ জুন সংসদে বাজেট উপস্থিাপিত হতে যাচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ফিরিয়ে আনা। এবং অর্থনীতির যেসব জায়গায় বড় রকমের চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কী কী উদ্যোগগুলো সরকার নেয়; অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে বিগত অর্থবছরের তুলনায় কী কী নতুনত্ব আমরো দেখতে চাই, সেটি আমাদের একটা বড় রকমের প্রত্যাশা।
“তার কারণ হলো, এই বাজেটটি হতে যাচ্ছে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট, সুতরাং সেদিক থেকে সংস্কারের জায়গাগুলোতে যে প্রত্যাশা, সেটি কতটুকু আমরা সেখানে দেখতে পাই, সেটি একটি বড় রকমের আগ্রহের বিষয়।”
“সরকার এখন কোন দিকে গুরুত্ব দেবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- উচ্চ প্রবৃদ্ধি, না কি সামগ্রিক স্থিতিশীলতা। আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচ্চ প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরে এগোনোর চেয়ে, সামগ্রিক স্থিতিশীলতা অর্জনটাই এখন সরকারের বেশি প্রাধিকার পাওয়া উচিৎ।”
“তবে দূর্ভাগ্যবশত আমরা দেখতে পাই, অর্থনৈতিক সূচকগুলো ধরবার ক্ষেত্রে এক ধরনের গতানুগতিকতা আমরা লক্ষ করি। এবং সূচকগুলো অনেক উচ্চ লেভেলে ধরা হয়।”
মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ আয় ও মাথাপিছু জাতীয় আয়- বর্তমানের ডলারের রেটে যেহেতু টাকার অনেক অবমূল্যায়ন হয়েছে, সেই হিসাব করলে ভিন্ন চিত্র দেখা যাবে বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “যতটুকু প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটি হয়েছে উচ্চ আয়ের কারণে, যারা অনেক বেশি আয় করেন, সেই বর্ধিত আয়ের কারণে মাথাপিছু আয়ের হিসাব বেড়েছে। কিন্তু আমি যদি দরিদ্র মানুষের আয় বিবেচনা করি যাদের আয় কমে গিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য, তারা কিন্তু ‘মাথাপিছু আয় বাড়ার’ সুফল ভোগী নন।
“সুতরাং আমাদের এই ইনকাম ইনইক্যুয়ালিটির যে বিষয়টি, আয় বৈষম্য যেটা এবং উচ্চ আয়ের মানুষের আরও আয় বৃদ্ধির রেখাপাত হচ্ছে এই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে, নিম্ন আয়ের মানুষকে আমরা সেই মাথাপিছু আয়ের সঙ্গী করতে পারছি না। সেটা কিন্তু একটা বড় রকমের দুর্বলতা বলে আমরা মনে করি।”
এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে এখন ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। ডলারের হিসাবে বেড়েছে মাত্র সোয়া ১ শতাংশ। আর টাকার হিসাবে বেড়েছে ১২ শতাংশ।
মাথাপিছু আয়ের প্রসঙ্গের সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্পর্ক আলাচনা করা দরকার বলে মনে করেন মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “বিনিয়োগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, শেয়ারের দিক থেকে আমরা কিছুটা পতন দেখতে পাচ্ছি। গত বছর যেটা ছিল ২৪ শতাংশ, এ বছর সেটা কমে হয়েছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। …. এই ধরনের অর্থনৈতিক সিচুয়েশনে বেসরকারি খাত এমনিই বিনিয়োগ কম করতে চায়। … তবে বেসরকারি বিনিয়োগ কম হওয়ার পেছনে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া দায়ী।” এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশজ মোট উৎপাদনের (জিডিপি) ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। কিন্তু গত বছরে জানুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করে ৬.৫ শতাংশ করা হয়।
পরিবর্তিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব না বলে মনে করে সিপিডি।
প্রবন্ধে তারা বলছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ধারণা মতে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশের বেশি হবে না। একইসঙ্গে আইএমএফ বলছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭ শতাংশ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মতে তা ৫.৬ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য উল্লেখ করে গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৮২ শতাংশ, যা গত অর্থবছর থেকে সামান্য বেশি। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৭৮ শতাংশ এবং এর আগের অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ছিল ৭.১০ শতাংশ।
সিপিডির মতে, বর্তমান অর্থবছরের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ৬ শতাংশ, শিল্পখাতের ৪১.৭ শতাংশ এবং সেবা খাতের ৪৯.২ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় কৃষি খাতের অবদান বেড়েছে মাত্র ৩.২১ শতাংশ। যেখানে শিল্প খাত এবং সেবা খাতের অবদান বেড়েছে ৬.৬৬ শতাংশ এবং ৫.৮০ শতাংশ ।
সিপিডি বলছে, বেসরকারি বিনিয়োগ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল জিডিপির অনুপাতে ২৪.৮১ শতাংশ, যা বর্তমান অর্থবছরে কমে হয়েছে ২৩.৫১ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরে যেখানে সরকারের বিনিয়োগ ছিল জিডিপির অনুপাতে ৬.৭৭ শতাংশ সেখানে বর্তমান অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৭.৪৭ শতাংশ।
দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির পর্যালোচনো তুলে ধরে খন্দেকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আমরা হয় তো আগের চেয়ে কিছুটা কাজের ব্যবস্থা করতে পারছি, পারছি কিন্তু কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা, মজুরি- এসব নিশ্চিত করকেততক পারছি না।”
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির বিষয়টি যেন এবারের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পায় এবং তাদের জন্য যাতে সামাজিক খাতগুলোতে বরাদ্দ বেশি করা হয়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে সিপিডি। তারা বলছে, শুধুই যেন সোশাল সেফটি নেটের অধীনে খাদ্য দেওয়া, শুধু সেটি যেন না করা হয়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো- এসব জায়গাগুলোতে সরকার যেন বরাদ্দ বাড়ায়, তার প্রয়োজন রয়েছে।
মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ টেনে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “৯ থেকে ১০ শতাংশের একটা মূল্যস্ফীতির কাঠামোর মধ্যে আমরা ঢুকেছি। এক সময় আমরা ৫-৬ শতাংশের কাঠামোর মধ্যে ছিলাম। … এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা সরকারের বড় রকমের ব্যর্থতা।”
কয়েকটি পণ্যের দাম তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১৭ ভাগ, ৫৮ টাকা থেকে ৬৮ টাকা হয়েছে। পাইজামের দাম বেড়েছে ১৫ ভাগ। মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ ভাগ।
“যে চালটা দরিদ্র মানুষ বেশি নিয়ে থাকে সেই জায়গায় মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতাটা বড় লোক যারা তাদের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ মুনাফাকারীরা, তারা মুনাফা কিন্তু করছেনই। এবং সেই মুনাফাটা করছেন, যে জায়গাটায় বিক্রি বেশি, সেই জায়গাটাই আরও বেশি মার্জিন রেখে.. তারা বিক্রি করছে।”
“গরীব মানুষের জন্য যে মোটা চাল, সেই সোটা চালের মূল্যবৃদ্ধিটি ধনী মানুষ, বা অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত মানুষ যে চাল খেয়ে থাকে তার থেকে বেশি।”
সিপিডির পর্যালোচনা মতে, গত ৫ বছরে মসুর ডাল ৯৫, আটা ৪০-৫৪, ময়দা ৬০, খোলা সয়াবিন ৮৪, বোতলজাত সয়াবিন ৫৬ ও পামওয়েলে দাম ১০৬ শতাংশ বেড়েছে। গরুর মাংসের দামও বেশি। ব্রয়লার মুরগি ৬০ ভাগ, চিনির ১৫২ ভাগ, গুঁড়া দুধ ৪৬-৮০, পেঁয়াজ ১৬৪, রসুন ৩১০ ও শুকনা মরিচের দাম ১০৫ ভাগ বেড়েছে।
সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে বোরো চাল উৎপাদন প্রতি কেজিতে ২৪ টাকা ছিল, তা এখন বেড়ে ২৮ টাকায় পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর ৩ শতাংশ বাড়ছে উৎপাদন খরচ। আমন চাল উৎপাদনে খরচ বাড়ছে প্রতি বছর ৩.৫৭ শতাংশ, গম উৎপাদনে বাড়ছে ৫.৪০ শতাংশ, আলু উৎপাদনে বাড়ছে ৬.৮৫ শতাংশ, টমোটে উৎপাদনে বাড়ছে ৫.১৬ শতাংশ, বেগুণ উৎপাদনে বাড়ছে ৭.৬৫ শতাংশ করে।
এর ফলে বৈষম্য বাড়ছে উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এর ফলে মূল ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় বেড়েনি। জাতীয় আয় বাড়লেও তা কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না।
“বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হয়েও বিলাসী দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা আয় করি কম। কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়, যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। আমরা কোন অর্থনীতির দেশে রয়েছি? সরকার অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ট্যারিফ কমিয়ে দেয়। তার সুফল তোলেন এক ধরনের ব্যবসায়ীরা।”
সরকার এসব সংকটকে মাথায় রেখে আসন্ন বাজেট পেশ করবে বলে আশা সিপিডির। একইসঙ্গে সিপিডি সরকারের অপ্রয়োজনীয় বিলাসী খরচ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি এবং বিদেশ যাত্রার জন্য অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সুপারিশও করেছে সিপিডি।
এ প্রসঙ্গে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া অতিরিক্ত ঋণ একটি বড় কারণ। বিষয়টি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সিপিডি বলছে, বর্তমান অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৪৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা গত দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তারা বলছে, এডিপির ৭০ শতাংশই বরাদ্দ হয়েছিল ১০টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে। তাদের মধ্যে ৬টির অবস্থান গড় মানের থেকে নিচে। এই ছয়টি মন্ত্রণালয় হচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রাইমারি ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, নৌ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সেতু বিভাগ।
সিপিডি বলছে, জ্বালানি ব্যবহারের যে পূর্বাভাস সরকার করেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০৪১ সালে আমাদের জ্বালানি লাগবে ৯৮.৫৯ মিলিয়ন টন। কিন্তু সিপিডির গবেষণা বলছে এত প্রয়োজন নেই। তাদের গবেষণা মতে, ৭২.৬ মিলিয়ন টন জ্বালানি হলেই বাংলাদেশের হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার এই পূর্বাভাস করেছে ২০১৯ সালের তথ্য দিয়ে। কিন্তু ২০১৯ এর পর কোভিড আসে। তখন থেকে গত চার বছর আমরা একটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছি। কিন্তু সরকার এই চার বছরের যে পরিবর্তন তা হিসাবে নেয়নি এখনও। এখন এই পূর্বাভাস অনুযায়ী আবার যদি বেশি পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি কেনা হয়, সেই চাপ দেশের অর্থনীতি নিতে পারবে না।