বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিকে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক হিসেবে দেখছে বিএনপি।
এই চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা বদলে গেছে বা দেশটি গণতন্ত্রের প্রশ্নে ছাড় দিয়েছে, এমনটি মনে করছে না দলটি।
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট কয়েকদিন আগেও ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে যে জালিয়াতি হয়েছে সেটা স্পষ্টভাবে বলেছে। গণতন্ত্রের প্রশ্ন একটি আদর্শিক ব্যাপার। আর আদর্শের ব্যাপারে তারা কোনও ছাড় দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।”
জো বাইডেনের চিঠির প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি হলো রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক। তবে এর মানে এই নয় যে, দেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের ধারণা বদলে গেছে। কিংবা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে তাদের অভিমত পরিবর্তন হয়েছে।
“রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকতেই পারে। বহু কর্তৃত্ববাদী দেশের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক রয়েছে। একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক হলো অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক। সেই সম্পর্ক থাকতেই পারে। দেশের জনগণ তো স্বাধীনতাকে জিম্মি করে নাই। তারা দেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছে।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ‘বিনাভোটের সরকার’ বলে উল্লেখ করেন রুহুল কবির। তার মতে, এই সরকারের জন্য সমর্থন আদায় করতে গিয়েই বাংলাদেশ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারার হাট বসেছে।
রিজভী বলেন, “সরকার এখন একদলীয় কতৃর্ত্ববাদী দেশের কাছ থেকেও গণতন্ত্রের সার্টিফিকেট নিচ্ছে।”
বাংলাদেশের ও মিয়ারমান সীমান্তে গোলাগুলি প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, “সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত অরক্ষিত। স্বাধীনতা সুরক্ষায় কোনও অঙ্গীকার এই সরকারের মধ্যে নেই। তারা তো প্রতিবাদও করতে পারেনা, কারণ সে নিজেই নিজের দেশের জনগণকে জিম্মি করে তাদের অধিকার হরণ করেছে।”
মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গ
সরকার দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তার মতে, মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য দুটোই এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের কিছু তথ্যও তুলে ধরা হয়।সেখানে বলা হয়, গত ৭ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ।
এই বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ সরকারের নেই দাবি করে রুহুল কবির বলেন, “জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকট, ডলারের বিপরীতে গত কয়েক মাস ধরে টাকার মানের ক্রমাগত পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ নিয়ে জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মুদ্রামান হারাবার সঙ্গে ডলার হয়ে উঠেছে দুষ্প্রাপ্য। রিজার্ভ প্রায় শেষের পথে। দেশের সম্পদ লুটপাটের দরজা খুলে দিয়েছে সরকার। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের অভিমতও তাই।”