Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

নীতি-বিতর্ক

এই মজুরি কাঠামো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি আমরা

ফয়সাল সামাদ। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার

তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত নারী-পুরুষদের জন্য নতুন নূন্যতম মজুরি কাঠামো গত বছরের নভেম্বরে প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও কোথাও কোথাও পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে আমরা আশা করি, এ বিষয়ে সব পক্ষ একটি সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছাবে।

আসলে যে কোনও কিছুর একটা প্রক্রিয়া শুরু হলে, সেটা সমন্বয় করতে সময় লাগে। নূন্যতম বেতন-মজুরি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। নতুন গ্রেড ব্যবস্থাও এতে আছে। এ নিয়ে সব পক্ষের মতামতে একটা পার্থক্য থাকতে পারে, সেটা অস্বাভাবিক নয়।

তারপরও এ প্রজ্ঞাপনকে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-মজুরির একটা মানদণ্ড হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি। যেসব কারখানায় এসব নিয়ে কিছু পার্থক্য ছিল, কিংবা ভিন্ন মতামত ছিল— এ বিষয়গুলো এখন মোটামুটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

পোশাক শ্রমিকদের গ্রেডিং বা পদোন্নতি বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকার রয়েছে আমাদের। প্রতি বছরই এসব নিয়ে আমরা কাজ করে থাকি। পাঁচ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির কথাও এ অঙ্গীকারে বলা আছে।

গ্রেডিং বা পদোন্নতি বিষয়ে আমরা বলতে চাই, আমাদের প্রত্যেকটি কারখানায় মানবসম্পদ বিভাগ রয়েছে। তারা নিয়মিত বিষয়টি দেখে। কাউকে পদোন্নতি দেওয়ার দরকার হলে— সেটি তারা যথাযথভাবে করে থাকে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়টি আমাদের কাজে যুক্তও হয়ে আছে। এ বিষয়ে নতুন করে যোগ করার কিছু নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।  

খেয়াল করা দরকার, তৈরি পোশাক শিল্পে আমাদের গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট চলছে গত ছয় থেকে ১২ মাস ধরে। অনেকগুলো কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। তারা জানেন, এ বিষয়ে কী করতে হবে। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই তারা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এসব কারণে এই মুহূর্তে ব্যবসা বা কারখানা পরিচালনা করতে সবমিলিয়ে আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া শ্রমিকদের বেতন বেড়ে যাওয়া ছাড়াও ব্যাংক ঋণে আমাদের সুদের হারও বেড়েছে অনেক। আগে সুদের হার ছিল এক অংকের, এখন হয়েছে দুই অংকের। তার ওপর গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট তো আছেই। ফলে নতুন করে বলার দরকার নেই— আমাদের এখন কী অবস্থা।

এই মুহূর্তে যে মজুরি কাঠামো হয়েছে, আমরা এটা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। এটা নিয়েই আমরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে চাই। এর ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যত যদি ভালো হয়, তাহলে আমরা সবাই মিলে এটি নিয়ে কাজ করব। এককভাবে নয়, সবাইকে একসাথে এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।

রপ্তানির অবস্থা এখন আমাদের ভালো নয়। আমাদের সক্ষমতার নিচে এখন ক্রয়াদেশ পাচ্ছি আমরা। এই অবস্থা আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। এ পরিস্থিতিকে অতিক্রম করতে হলে, আমাদের সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনা করতে হবে। সব পক্ষ মিলেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে।

এ জন্য আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে, না হলে এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না।

এ খাত নিয়ে কাজ করেন এমন অনেক গবেষক পোশাক শ্রমিকদের আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা বলেছেন, শ্রম অঞ্চলগুলোতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেন শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

অবশ্যই এ খাতকে টেকসই করতে হলে এ বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করা দরকার। আমাদের অনুরোধ থাকবে, সরকার এ বিষয়টি বিবেচনা করে ভর্তুকি দিয়ে হলেও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাহলে কারখানায় কর্মরত নারী-পুরুষ শ্রমিকরা তাদের আয়সীমার মধ্যে থেকেই উন্নত জীবন-যাপন করার সুযোগ পাবে।

তবে, সরকার যদি প্রয়োজনে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি-বেতন বিষয়ক নীতিমালা পরিবর্তন করতে চায়— তাহলে সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবে বলে আশা করি। ভুলে গেলে চলবে না আমাদের তৈরি পোশাক খাতই একমাত্র খাত, যেখানে মজুরি-বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আমরা যদি আমাদের দেশকে ভালবাসি, দেশের স্বার্থে যেটা ভালো হবে তাই আমাদের করা উচিত। যারা বলছেন যে দুই বছর পরই আবার মজুরি কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে তাদের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভাবা দরকার। মজুরি কাঠামো দুই বছর পর হবে না পাঁচ বছর পর হবে— নাকি এক বছর পর হবে, এটা ব্যবসা পরিস্থিতি— দেশের সার্বিক অবস্থার ওপরই নির্ভর করে।

এই মুহূর্তে যে মজুরি কাঠামো হয়েছে, আমরা এটা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। এটা নিয়েই আমরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে চাই। এর ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যত যদি ভালো হয়, তাহলে আমরা সবাই মিলে এটি নিয়ে কাজ করব। এককভাবে নয়, সবাইকে একসাথে এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।

এ মুহূর্তে আমরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায় আছি। আমাদের ব্যবসার অবস্থা, কারখানাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি— সবকিছু মিলে আমরা যেন দৃঢ় হতে পারি। অবশ্যই এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সহযোগিতা দরকার। তারা আমাদের দিতে পারে সঠিক দিক-নিদের্শনা। নীতি প্রণয়ন করে সঠিক জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে।

যাদের কারখানাগুলো ছোট পর্যায়ে আছে, তাদের প্রতি গভীর নজর দেওয়া দরকার। এ বিষয়ে আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের ব্যবসা বিষয়ে যথার্থ আলাপ-আলোচনা ও চুক্তি করতে পারতে হবে। তাহলে এটা আমাদের ইতিবাচক ভবিষ্যত নির্মাণে সাহায্য করবে।

লেখক: পরিচালক, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত