ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবিতে গত বছর আন্দোলনে চার পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় গণতদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। ২৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহম্মদ। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনে গত ৩০ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে রাসেল হাওলাদার এবং আগুনে পুড়ে ইমরান হোসেন মারা যান। এরপর গত ৮ নভেম্বর পুলিশের ছোড়া গুলিতে মারা যান ইসলাম গ্রুপের গার্মেন্টস কর্মী আজুয়ারা বেগম। এরপর তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে একই কারখানার জালাল উদ্দিন ১১ নভেম্বর রাত ১২টায় ঢাকা মেডিকেলে মারা যান।
পোশাক শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবি থাকলেও ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর মজুরি নির্ধারিত হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা, যা ছিল মালিকপক্ষের প্রস্তাবনা।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম। সেখানে বলা হয়, শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্য ন্যূনতম মজুরি চাওয়ার পরিণামে অনিয়ম, জুলুম ও হত্যাকাণ্ডের কোনও কার্যকর তদন্ত সরকার না করায় নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমরা ‘মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতে গণতদন্ত কমিটি’ গঠন করেছি।
জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে প্রকাশিত খবর, লেখালেখি, রিপোর্ট পর্যালোচনার পাশাপাশি শ্রমিক, মালিক ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বক্তব্য গ্রহণ করব। নিহত শ্রমিক পরিবারসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করা হবে।”
কমিটি আগামী ১৫ মের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে ওই মাসের শেষ সপ্তাহে গণতদন্তের প্রতিবেদন জনসমক্ষে পেশ করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গণতদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর, অ্যাডভোকেট মো. নেসার আহমেদ, অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার লিপি, ডা. ম. হারুন-অর-রশিদ, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, মাহা মির্জা, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন, মোশরেফা মিশু, অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, প্রকৌশলী এ এ এম ফয়েজ হোসেন, শামীম ইমাম, হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, সুশান্ত সিনহা সুমন, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, আলিফ দেওয়ান, আব্দুল আলী, সাদেকুর রহমান শামীম, মাসুদ রেজা, শবনম হাফিজ, সত্যজিত বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম, জিয়াউল কবির খোকন, মানস নন্দী, আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, বাবুল হোসেন, মনজুরুল আহসান খান।
সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহম্মদ বলেন, “যে পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন, সেই পরিস্থিতি ও তাদের দাবি পর্যালোচনা; আন্দোলন নিয়ে মালিকপক্ষ, পুলিশ, বিজিএমইএসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাসহ শ্রমিকদের মজুরি, কর্মপরিবেশ, ইত্যাদি দিক নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চালাব। ঘটনার পিছে যারা দায়ী তাদের উন্মোচিত করা হবে।
“বাংলাদেশে অনেক ঘটনা ধরেই তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু কারও রিপোর্টই আলোর মুখ দেখে না। আমরা এই চর্চারও পরিবর্তন আনতে চাই। আমাদের এই তদন্তের প্রতিবেদন আমরা সবার সামনে উন্মুক্ত করব।”
শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান খান বলেন, “বাংলাদেশে চারজন শ্রমিক মারা গেল। কেন মারা গেল বা কে দায়ী- তা কেউ খুঁজে বের করে না। তদন্ত কমিটি হয়, তার কোনও রিপোর্ট আসে না। এভাবেই আমাদের দেশে ন্যায়বিচারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো হয়।
“জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গণতদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তারপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। আমরাও এই তদন্ত কমিটি দিয়ে শ্রমিক হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করব এবং এদের বিচারের জন্য আন্দোলন করব। একই সাথে তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে আমরা সরকারকে বাধ্য করব।”