Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

অযোধ্যা যেতে যত যাত্রা

ss-ram-mandir-22-01-24-4
[publishpress_authors_box]

পরিবারের আরও বিশ সদস্য সঙ্গে নিয়ে গুরু রওনা করেছেন মধ্য প্রদেশের মোরেনা জেলার এক গ্রাম থেকে। প্রায় ১৪ ঘণ্টার দীর্ঘ কষ্টের বাস যাত্রা শেষে তারা পৌঁছেন অযোধ্যা শহরে।

২৩ জানুয়ারি থেকে রাম মন্দিরের দ্বার সবার জন্য খুলে গেলে অযোধ্যা শহরে পুণ্যার্থী ও পর্যটকের জোয়ার বইবে।

রাম মন্দিরের উদ্বোধন আয়োজনকে ঘিরে রামের জন্মভূমি অযোধ্যায় এখন সড়ক থেকে আকাশ পথে ভীষণ ব্যস্ততা। এরই মধ্যে চার হাজার ঋষি-সাধুও হাজির হয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভারতের অযোধ্যা নগরীতে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের  অযোধ্যায় বিভিন্ন শহর থেকে বাসে করে আসা যায়। লখনউ থেকে অযোধ্যার দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটারের মতো। দিল্লি থেকে সড়কপথে অযোধ্যার দূরত্ব ৬৩৬ কিলোমিটার।

একবার অযোধ্যা বাস স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে গেলে  অটোরিকশা ভাড়া করা যাবে। অযোধ্যা ধাম জংশন থেকে মোটামুটি ২০ মিনিটের রিকশা যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যাবে রাম মন্দির।  

যদি কেউ কলকাতা শহরে থেকে আসতে চান তবে হাওড়া জং থেকে অযোধ্যার সরাসরি ট্রেন পেয়ে যাবেন। কলকাতা থেকে অযোধ্যা যাত্রায় খরচ হবে ১২০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা। মুম্বাই থেকে ট্রেন যোগে অযোধ্যা যাত্রায় খরচ হবে ৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকা। দিল্লি  থেকে রেলপথে এই খরচ পড়বে  ১৩০০ টাকা থেকে ২৩০০ টাকা।

কেউ যদি আকাশপথে ভ্রমণে আগ্রহী হন তবে লখনউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হবে সবচেয়ে কম সময়ের যাত্রা।  আবার বারানসের বিমানবন্দর থেকেও অযোধ্যায় পৌঁছানো যাবে।  

কলকাতা, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু থেকে বিমানে অযোধ্যায় পৌঁছাতে খরচ হবে পাঁচ থেকে ১৩ হাজার টাকা।

তীর্থ থেকে পর্যটন হাব অযোধ্যা?  

হিন্দুত্ববাদী নেতারা অযোধ্যা শহরকে বলছেন ‘হিন্দুদের ভ্যাটিকান’।

এই অঞ্চলের অর্থনীতি ধর্মীয় পর্যটন ঘিরেই চলছিল। ২২ তারিখ রাম মন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে আগে থেকেই অযোধ্যায় হোটেল বুকিং ৭০-৮০ শতাংশ বেড়েছে। রবিবার ৪০টি চার্টার ফ্লাইট আসা-যাওয়া করেছে অযোধ্যা এয়ারপোর্ট দিয়ে। এছাড়া রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে সামলাতে হচ্ছে ১০০টি ফ্লাইট।

রাম মন্দিরের সিংহদ্বার উন্মোচন আয়োজনকে ঘিরে ২০ হাজার কোটি থেকে ২৫ হাজার কোটি রুপি অর্থনৈতিক লেনদেন হবে পোশাক, হোটেল, সুভেনি সহ অন্য আকর্ষণীয় পণ্য ঘিরে।

এবার মন্দিরের একতলার উদ্বোধন হচ্ছে। বছরের শেষে গোটা মন্দিরের কাজ শেষ হবে এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশ অবাধ হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় প্রতিদিন দেড় লাখ ভক্ত মন্দিরে দর্শন করতে আসবেন; যা বর্তমানের ভক্ত সংখ্যার প্রায় সাত গুণ। আবার কারো হিসাবে পর্যটক সংখ্যা ৮-১০ গুণ বাড়তেও পারে।

উত্তর ভারতীয় শহর অযোধ্যায় রাম কি পৌরি সারা বছরই পূণ্যার্থীদের ভিড়ে মগ্ন থাকে।   গঙ্গার উপনদী সরযূ একটি খাল দিয়ে ঢুকেছে এক প্রাচীন রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে। আলাদা আলাদা ঘাটে কোথাও চলে রামকথা; আবার দেব দীপাবলিতে অসংখ্য প্রদীপে সেজে ওঠে।

উত্তরপ্রদেশ পর্যটন বিভাগ বলছে, ২০২১ সালে অযোধ্যায় আসা পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন লাখ ২৫ হাজার। ২০২২ সালে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে হয় দুই কোটি ৩৯ লাখ।

রামমন্দিরের পর প্রতি বছর ২০-২৫ কোটি পর্যটক অযোধ্যায় আসতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। 

পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে গেলেই বাড়বে বোতলজাত জল, কোমল পানীয়, স্ন্যাকস পণ্যের চাহিদা।

এসব আঁচ করেই মিনারেল জল কোম্পানি বিসলেরি ইন্টারন্যাশনাল অযোধ্যায় একটি নতুন প্ল্যান্ট বসিয়েছে।

বিস্কুটের কোম্পানি পার্লে থেকে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অযোধ্যা ও তার আশপাশে ডিস্ট্রিবউশন নেটওয়ার্ক প্রসারিত করছে।

আবার অযোধ্যা-লখনউ হাইওয়েতে নতুন আউটলেট খুলছে ম্যাকডোনাল্ডস।

উত্তর প্রদেশ সরকার  আশা করছে অযোধ্যাকে ঢেলে সাজাতে ৮৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ হবে। ভারতের মাস্টার প্ল্যান ২০৩১ অধীনে আগামী ১০ বছরে পর্যটন হাব পরিচয়ে দাঁড়িয়ে যাবে সরযূ নদীর তীরের এই শহর।

হোটেল, গেস্ট হাউজ সেবাখাতেও বিনিয়োগ সরগরম হয়েছে অযোধ্যা।

ইকনোমিক টাইমসের সংবাদমাধ্যম ইটিবিএফএসআই বলছে, গত বছর উত্তর প্রদেশে ৩২ কোটি পর্যটক এসেছিল; যাদের পদচারণা পড়েছে মূলত অযোধ্যা শহরে।  এরপর রয়েছে বারানস, মথুরা এবং আগ্রা।

লিলা ও লোধা গ্রুপ ৪৫০ কোটি রুপির বিনিয়োগ করেছে এরমধ্যে।  ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিওট ইন্টারন্যাশনাল সহ আরো কিছু হোটেল ব্র্যান্ড আসছে এই শহরে র‌্যাডিসন হোটেল গ্রুপ তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে অযোধ্যায়।

অযোধ্যা ভ্রমণে সড়ক উন্নয়নের দিকেও নজর দিচ্ছে ভারত। গোরাখপুর-লখনউ মহাসড়ক থেকে চার লেনের রাস্তা পৌঁছাবে অযোধ্যাতে।  ওদিকে রেলপথেও লাগছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তিন তলা রেলওয়ে স্টেশন করা হবে, যেখানে থাকবে লিফট, চলন্ত সিঁড়ি, ফুড কর্নার সহ নানা সুবিধা।

৮২১ একর জমিতে অযোধ্যা এয়াপোর্ট উদ্বোধন হয়েছে গত ডিসেম্বরে। রামায়ণের রচয়ীতার নামেও এই বিমানবন্দর পরিচিত; মহর্ষি বাল্মীকি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এই বিমানবন্দর নির্মাণের প্রথম ধাপে ব্যয় হয়েছে ১৪৫০ কোটি রুপি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরচালিত সড়ক বাতির সারি আলোকিত করবে অযোধ্যার সড়ক। মন্দিরের শহর অযোধ্যা হয়ে উঠবে সৌর শহর – এই পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে ৪০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প।

অযোধ্যা আগামীতে  পুরোপুরি বদলে গিয়ে  ‘বিশ্বমানের এক নগরী’ হবে। তীর্থযাত্রী আর পর্যটক মিলিয়ে রামমন্দিরের এই  শহর হতে চলেছে সরগরম এক বাণিজ্যিক হাব।

 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত