বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনও অর্থ লুট হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির ঘটনা তদন্তে বুধবার দুপুরে কক্সবাজার থেকে রুমায় যায় সিআইডির একটি দল। সেখানে ভল্ট খুলে টাকা গুণে দেখার পর লুট না হয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
মঙ্গলবার রাতে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র ডাকাতদল। তারা ব্যাংক নিরাপত্তা রক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্রসহ লুট করে এবং শাখা ব্যবস্থাপক নেজামউদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ক্যাশিয়ার ও ম্যানেজারের কাছ থেকে ব্যাংকের ভল্টের চাবিও নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
অর্থ লুটের জন্যই এই হামলা বলে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছিলেন। যদিও সিআইডির ক্রাইমসিন টিম গিয়ে ভল্ট না খোলা পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে সে বিষয়ে কোনও ধারণা দিতে পারেননি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এ ঘটনার তদন্ত করতে বুধবার রুমায় যায় সিআইডির একটি তদন্ত দল।
সিআইডির চট্টগ্রাম রেঞ্জের কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ নেওয়াজ খালেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কক্সবাজার থেকে ক্রাইম সিনের দুটি তদন্ত দল এসে ব্যাংকের সব আলামত সংগ্রহ করেছে। কারণ কক্সবাজার থেকে রুমায় যাওয়া সহজ। তারা ব্যাংকের ভল্টের সব টাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।
“মঙ্গলবার ভল্টে মোট ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা রাখা হয়েছিল। সব টাকাই ভল্টে আছে। ডাকাতরা ভল্ট ভাঙতে পারেনি। অক্ষতই আছে।”
শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারের দুটি চাবি একসঙ্গে দিয়েই ভল্ট খুলতে হয়। কোনও কারণে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা হয়ত ভল্ট খুলতে পারেননি।
তবে ব্যাংকেরই এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভুল করে অন্য একটি ভল্ট ভাঙে হামলাকারীরা। সে কারণে মূল ভল্ট অক্ষত রয়েছে।
স্থানীয়দের ধারণা, হামলার সঙ্গে পাহাড়ি সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যরা জড়িত। স্থানীয়ভাবে যারা বম পার্টি হিসেবে পরিচিত। বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এই ঘটনার জন্য কুকি চিনকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা নেজামউদ্দিনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রুমার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে মোট ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় ডাকাত দল।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশের আটটি চাইনিজ রাইফেল, দুটি এসএমজিসহ মোট ১০টি অস্ত্র এবং ৩৮০ রাউন্ড গুলি, আনসারের চারটি শটগান এবং ৩৫ রাউন্ড গুলি লুট হয়েছে।
বান্দরবানে কৃষি ব্যাংকের আড়াই লাখ টাকা লুট
বান্দরবানে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের থানচি শাখা থেকে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান।
বুধবার সন্ধ্যায় তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ক্যাশ কাউন্টার থেকে এই টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। তবে ভল্ট ভাঙতে পারেনি।”
ডাকাতরা চলে যাওয়ার সময় কয়েকজন গ্রাহকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
ডাকাতির ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তিনি বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বান্দরবানের চারটি শাখার সবগুলো খোলা রাখা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে কয়টি শাখা খোলা রাখা সম্ভব, সেগুলো খোলা থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলো অবশ্যই খোলা থাকবে।”
থানচিতে সোনালী ব্যাংকের শাখায়ও ডাকাতরা হানা দিয়েছিল। তবে সেখানেও বড় অঙ্কের অর্থ লুটের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওই শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো লুট হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সোনালী ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের বৈঠক হয়। তবে সেই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।