ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উচ্চমান সহকারী আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, সোনা চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোরী গৃহকর্মীকে বেধড়ক মারধর করে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেন তারা।
নাজিরা নামের ওই কিশোরী বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঈদের দুই দিন পর ভাত খেতে চাওয়ায় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মুখে কাপড় বেঁধে পাশবিক নির্যাতন চালান আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। এ সময় অসহ্য যন্ত্রণায় এক গ্লাস পানি চাইলে বুকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নাজিরার দাদা তাকে গাইবান্ধা নিয়ে আসেন। নাজিরাকে প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক শাহীন শাহ বলেন, “গত ১৭ এপ্রিল নাজিরাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় আক্রান্ত জায়গাগুলোয় ইনফেকশন হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়।”
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব বালয়াপাড়ার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইশা খাঁ আর অসুস্থ জোছনা বেগম দম্পতির মেয়ে নাজিরা। অভাবের সংসারে কিছুটা স্বস্তি আনতে প্লাবন নামে স্থানীয় এক যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠান বাবা-মা।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নাজিরা জানায়, কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা অজুহাতে তাকে বেধড়ক মারধর করতেন গৃহকর্তা আনোয়ারের স্ত্রী। ঈদের দুই দিন পর কাজ শেষে খাবার চাইলে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর ও গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন তারা।
খবর পেয়ে ১৩ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তার দাদা তাকে ঢাকা থেকে গাইবান্ধার বাড়িতে নিয়ে আসেন।
অসুস্থ মেয়ের পাশে বসে জোছনা বেগম জানান, ঢাকা থেকে আনার পরদিন খুব অসুস্থ বোধ করলে নাজিরাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ১৭ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে আনোয়ার হোসেন নামে বিমানবন্দরের এই কর্মচারীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ওই কিশোরীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া প্লাবন বিমানবন্দরে অফিস পিয়ন হিসেবে চাকরি করেন। মুঠোফোনে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আনোয়ার স্যারের কথায় তার বাসার কাজের জন্য নাজিরাকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে যাই। নাজিরা কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে আনোয়ার স্যার আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি। কোনও খোঁজখবর জানতে চাইলে তিনি গুরুত্ব দিতেন না।”
ঈদের পর হঠাৎ আনোয়ার স্যার ফোন করেন জানিয়ে প্লাবন বলেন, “স্যার জানান তিনি নাজিরাকে নিয়ে কুমিল্লায় আছেন। নাজিরার শারীরিক অবস্থা খারাপ। কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে রাগারাগি করেন। পরে খোঁজ নিয়ে ঘটনা জানতে পেরে নাজিরার দাদাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেই।
“আনোয়ার স্যার মাইক্রোবাসে করে নাজিরাকে নিয়ে এসে তার দাদার হাতে তুলে দেন। এরপর থেকে স্যারের ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। তারা বলছে, নাজিরা কাজে যোগ দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা চুরি করে ধরা পড়ে। শুনেছি এরপর থেকে আনোয়ার স্যারের স্ত্রী নাজিরাকে খুব নির্যাতন করত।”
গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সময় নাজিরার সঙ্গেই ছিলেন প্লাবন। তিনি বলেন, “আনোয়ার স্যারকে ভালো মানুষ মনে করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।”