বাংলাদেশ জাতীয় দলে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশের আর্চারির পোস্টারবয় রোমান সানা।
সকাল সন্ধ্যাকে রবিবার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন রোমান, “আর জাতীয় দলের হয়ে খেলব না। জাতীয় দল থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি লিখেছি। দুয়েক দিনের মধ্যেই চিঠিটা ফেডারেশনে জমা দিয়ে দেব।”
গত ২০-২৫ ফেব্রুয়ারি ইরাকে অনুষ্ঠিত হয়েছে এশিয়া কাপ আর্চারির স্টেজ ওয়ান প্রতিযোগিতা। সেই দল থেকে বাদ পড়েছিলেন রোমান। আপাতত তিনি টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছেন গাজীপুর আনসার একাডেমিতে।
গত কিছু দিন থেকেই রোমানের পারফরম্যান্স সেভাবে আলো কাড়তে পারছে না নির্বাচকদের। এরপর যোগ হয়েছে চোট। প্যারিস অলিম্পিকের কোয়ালিফাই টুর্নামেন্টেও গত বছর থাইল্যান্ডে ভালো কিছু করতে পারেননি।
এরপর বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে (বিওএ) প্যারিস অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য আর্চারি থেকে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকায়ও নেই রোমানের নাম।
হতাশা আর অভিমান থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশসেরা আর্চার। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত? এমন প্রশ্নে রোমান জানালেন, “আর ভালো লাগছে না খেলতে। জানি বাংলাদেশকে এখনও অনেক কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আছে। কিন্তু ইনজুরি আছে। তাছাড়া আর মানসিক চাপও নিতে পারছি না।”
সতীর্থ আর্চারের সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে ২০২২ সালে রোমানকে ২ বছরের জন্য ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব রকমের প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করেছিল ফেডারেশন। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পরে কমিয়ে আনে ফেডারেশন কর্মকর্তারা। যদিও সেই ধাক্কা সামলে আবারও তির-ধনুকে নজর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা না করে খেলা ছেড়ে বাবার ব্যবসায় মন দিতে চান রোমান, “আমি নিজেও জানি আরও ১০ বছর খেলতে পারব। কিন্তু কিসের আশায় খেলব? ১৪ বছর জাতীয় দলে খেলে কি পেয়েছি? বাংলাদেশের ইতিহাসে আর্চারিতে সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দিলাম। কিন্তু কোথা থেকেও কিছু পেলাম না। এটা খুব দুঃখজনক।”
আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, “আমি যত দিয়েছি ততোই ফেডারেশন থেকে ফ্যাসালিটিজ কমেছে। আমি না হয় ছোট মানুষ ভুল করতেই পারি। অপনারা আমার পিতার মতো। আমাকে বুকে টেনে নিতে পারতেন। এত চাপ আর আমি নিতে পারিনা। আর এত বাধা বিপত্তির ভেতরে থাকতেও ইচ্ছা করে না।”
যোগ করেন, “এখন অন্য লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছি। অন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা আছে। বাবার পুরনো মাছের ঘের আছে। সেটা বড় আকারে শুরু করব খুলনাতে।”
জাতীয় দলের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ রোমানকে বলেন চ্যাম্পিয়ন আর্চার। সেটা মনে করিয়ে দিতেই বললেন, “আমাকে সে নিজের ছেলের মতো দেখে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে আমার জন্য। আমার চেয়েও ওর বেশি আত্মবিশ্বাস আমার প্রতি। ও যত সমর্থন দিয়েছে অন্য কেউ দেয়নি। সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো কোচের প্রতি।”
রোমানকে দিয়েই মূলত লাল সবুজের বাংলাদেশকে চিনেছে আর্চারি বিশ্ব। বৈশ্বিক আর্চারিতে বাংলাদেশের একমাত্র পদক এখনও রোমানের। ২০১৯ সালে বিশ্ব আর্চারিতে ব্রোঞ্জ জেতেন রোমান। প্রথম আর্চার হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেন।
এছাড়া রোমান খেলেছেন ঢাকায় আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে। খেলেছেন জার্মানি, চীন, সুইজারল্যান্ডে বিশ্বকাপ, ব্যাংককে এশিয়া কাপ ও এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, নেদারল্যান্ডসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ ও বাংলাদেশে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে। ২০১৮ জাকার্ত এশিয়ান গেমস, ২০১৯ কাঠমান্ডু-পোখারা এসএ গেমসেও অংশ নেন রোমান।