কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে দেশজুড়ে দুই শতাধিক মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারসহ নয় দাবিতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।
অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীর এই বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও দেওয়া হয়।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত সপ্তাহে সহিংসতায় গড়ানোর পর দুই শতাধিক নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করতে হয় সরকারকে।
এদিকে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার পর আন্দোলনের আর যৌক্তিকতা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তাদের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রত্যাহারের একটি বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
তবে বাইরে থাকা সমন্বয়করা সোমবার বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করে জানান, তাদের আন্দোলন চলবে।
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাজশাহীতে এই বিক্ষোভ হয়। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান সজীব বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে ছাত্রসমাজের দাবিসমূহের প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।”
সারাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাতে নিহতদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, “আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করেছে। আমরা এতদিন চুপ ছিলাম, এখন আর নয়।”
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামিরুল ইসলাম ও ড. মো. সাইফুল ইসলাম একাত্মতা ঘোষণা করেন।
অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। ঠাণ্ডা মাথায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রজুড়ে যে অরাজকতা তৈরি করা হয়েছে, তা শুধু যে আমাদের ব্যথিত করেছে তা নয়। আমরা বিক্ষুব্ধ।
“আমি ছাত্র-ছাত্রীদের বলতে চাই- তোমরা সুবিচারের পক্ষে আছ, ন্যায়বিচারের পক্ষে আছ, ন্যায়ের পক্ষে আছ। তোমাদের সাহস ও দৃঢ়তা দেখে শিক্ষক হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। শুধু এখন নয়, সারা জীবন তোমরা ন্যায্যতার পথে থাকবে।”
দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভের পর শিক্ষার্থীরা পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।