ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠতা এ মুহূর্তে সারাবিশ্বে বহুল চর্চিত বিষয়। খুব বেশিদিন হয়নি তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছে। নভেম্বরের ৫ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেভাগে এর সূত্রপাত, পরবর্তীকালে ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা আরও গাঢ় হয়।
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ধনকুবের মাস্কের জন্য এরই মধ্যে নতুন দপ্তর গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প, যার নাম ডিপার্টমেন্ট অব গভর্মেন্ট এফিশিয়েন্সি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প-মাস্কের মধ্যে রাতারাতি গড়ে ওঠা অন্তরঙ্গতা যখন তুঙ্গে, ঠিক সে সময়ই খবর এল মাস্কের সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স ছেড়ে যাচ্ছে এর ব্যবহারকারীরা।
এক্সের বিকল্প হিসেবে তারা বেছে নিচ্ছে ব্লুস্কাইকে। এক্সের আগের সংস্করণ টুইটারের প্রায় কাছাকাছি দেখতে (রঙ ও লোগো) এই সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ব্যবহারকারী তাদের অ্যাকাউন্ট খুলছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এ মুহূর্তে ব্লুস্কাই ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ। এই সংখ্যা অবশ্য প্রতিদিনই বাড়ছে।
তবে এক্স ছাড়ার হিড়িক যতই পড়ুক, একে চ্যালেঞ্জ করতে হলে অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে ব্লুস্কাইকে। মাস্কের দাবি, প্রতিদিন ২৫ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী এক্সে ঢুঁ মারেন।
এক্স নিয়ে সমালোচকদের ভাষ্য, এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য ছড়ানো বন্ধে মাস্ক কখনও কোনও পদক্ষেপ নেননি। তার মতে, এর মধ্য দিয়ে তিনি বাকস্বাধীনতা রক্ষা করছেন।
ব্লুস্কাইয়ের মালিক কে
টুইটারের সাবেক প্রধান জ্যাক ডরসি ছিলেন ব্লুস্কাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা। টুইটারের মতো বিকেন্দ্রীকৃত সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্লুস্কাই প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তবে এ বছরের মে মাসে ব্লুস্কাইয়ের বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ান জ্যাক ডরসি। এর কয়েক মাস পর সেপ্টেম্বরে তিনি ব্লুস্কাইয়ে নিজের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেন।
ডরসি ব্লুস্কাই থেকে বিদায় নেওয়ার পর জে গ্রেবার এই সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের হাল ধরেন। তিনি এখন ব্লুস্কাইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।
এক্স বর্জনের কারণ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক জয় রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করলে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্লুস্কাই জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
নির্বাচনের আগে-পরে ট্রাম্পের প্রতি মাস্কের সমর্থন ও ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে তার যুক্ত হওয়ার ঘটনা অনেক এক্স ব্যবহারকারীকে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজতে বাধ্য করে।
এক্স বর্জন করেছে কারা
সাধারণ ব্যবহারকারীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুটি সংবাদমাধ্যম এরই মধ্যে এক্স বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের একটি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান।
এক্সকে ‘বিষাক্ত মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম’ উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “পাঠকদের আমরা জানাতে চাই, ইলন মাস্কের সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে আমরা আর কোনও কনটেন্ট পোস্ট করব না।”
দ্য গার্ডিয়ানের এক্স ছাড়ার ঘোষণার পরপরই স্পেনের চতুর্থ সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা লা ভ্যানগার্দিয়া একই ঘোষণা দেয়। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এক্স ভুয়া তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ইকো চেম্বারে পরিণত হয়েছে।’
বিবৃতিতে লা ভ্যানগার্দিয়া জানায়, তারা এক্সে তাদের কনটেন্ট সরাসরি আর পোস্ট করবে না। তবে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সংবাদকর্মীরা চাইলে ব্যক্তিগতভাবে এক্স ব্যবহার করতে পারেন।
এক্স বর্জনের কারণ হিসেবে লা ভ্যানগার্দিয়া বলেছে, “এক্সে মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা, নারীবিদ্বেষ ও বর্ণবাদমূলক কনটেন্ট পোস্ট করা হয়। এসব কনটেন্ট ভাইরাল হয়। এসব পড়তে বা দেখতে ব্যবহারকারীরা এক্সে বেশি সময় ধরে থাকে। আর এতে বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়ে।”
লা ভ্যানগার্দিয়ার সম্পাদক জর্দি হুয়ান এরই মধ্যে এক্সে তার নিজের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন।
এক্স বর্জনের দলে আছেন সেলিব্রিটিরাও। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটি এক্সে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন।
সেলিব্রিটিদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গীতশিল্পী ও র্যাপার লিজো, নামকরা অভিনেতা ও কমেডিয়ান বেন স্টিলার, অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক জেমি লি কার্টিস ও অভিনেতা প্যাটন অসওয়াল্ট।