পাকিস্তানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব অনেকেরই পাওনা। বাংলাদেশি সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বেশি কৃতিত্বটা দিয়েছেন দেশী কোচদেরই। কারণ তাদের অধীনে বাংলা টাইগার্সে দীর্ঘ ক্যাম্পে ছিলেন টেস্ট দলের অনেকে।
প্রধান কোচ হিসেবে কৃতিত্ব পাওনা চন্ডিকা হাথুরুসিংহেরও। তারপরও শঙ্কায় তার চাকরি। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও, সেই পর্যন্ত টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হাথুরুর।
বিসিবির নতুন সভাপতি হয়ে ফারুক আহমেদ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন হাথুরুর বিকল্প খোঁজার কথা। সবশেষ বোর্ড সভা শেষেও ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাকিস্তান সিরিজ শেষে সিদ্ধান্ত আসবে হাথুরুসিংহেকে নিয়ে।
প্রশ্ন আসতে পারে, ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়টা কি লাইফলাইন হয়ে এল হাথুরুসিংহের জন্য? তার আগে যিনি কোচ ছিলেন সেই রাসেল ডোমিঙ্গোর বিদায় হয়েছিল কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর। তখন বিসিবি থেকে বলা হয়েছিল ‘ভবিষ্যতের বৃহত্তর ছবি’র কথা।
(বাংলাদেশ ওয়ানডে জিতেছে ১৫৯টি। হাথুরুসিংহে জিতিয়েছেন ৩৫টি, হোয়াটমোর ৩২টি, সিডন্স ৩১, ডোমিঙ্গো ২১ ও রোডস ১৭টি)
হাথুরুসিংহের ব্যাপারেও ব্যাপারটা তাই। কারণ গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলে বিভাজনের বড় দায় দেওয়া হয় তাকে। ব্যর্থ সেই বিশ্বকাপ অভিযান শেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হতাশ করেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক দুটো টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা আর দলে বিভাজনের দায়ের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বাড়তি দিয়ে হলেও হাথুরুকে বিদায় করতে পারে বিসিবি। যদিও এভাবে বিদায়ের সংস্কৃতিতে আগামীতে কোচ পাওয়ার বেলায় নেতিবাচক বার্তাটাই দেওয়া হয় বেশি।
বাংলাদেশে দুই দফা দায়িত্ব পালন করে আসলে কতটা সফল ছিলেন হাথুরুসিংহে? পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল কোচ হাথুরুই। ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেনরা এমনিতেই ভালো খেলেন। টি-টোয়েন্টিতেও উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তবে টেস্টে সবসময় ছিল পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। কোচদের এই পরিসংখ্যানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে টেস্টকেই।
হাথুরুসিংহের দুই মেয়াদ (২০১৪-২০১৭ ও ২০২৩…)
হাথুরুসিংহে প্রথম দফা বাংলাদেশের কোচ ছিলেন ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে ২১ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৬, ড্র ৪ ও হার ১১টিতে। দ্বিতীয় দফা গত বছর জানুয়ারিতে ফিরে ৮ টেস্টে জয় ৫ ও হার ৩টিতে। সবমিলিয়ে ২৯ টেস্টে জয় ১১, ড্র ৪ হার ১৪টিতে।
১৪৪ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ২১টি, এর ১১টিই হাথুরুসিংহের হাত ধরে। তার জয়গুলোর অন্যতম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে। এছাড়া জয় আছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের সঙ্গে।
ডেভ হোয়াটমোর ( ২০০৩-২০০৭)
২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সে বছরের জুন থেকে বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডেভ হোয়াটমোর। তার অধীনেই বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয় পায় ২০০৫ সালে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৭ সালের মে পর্যন্ত দায়িত্বে থেকে একটা জয়ই এনে দিয়েছিলেন হোয়াটমোর। ২৭ টেস্টে হোয়াটমোরের জয় ১, ড্র ৪ হার ২২ ম্যাচে। এই চার ড্র’র একটি ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে, যেখানে বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল পুরো একটা দিন।
টানা ব্যর্থতার বলয়ে থাকা বাংলাদেশকে অন্তত জিততে শিখিয়েছিলেন হোয়াটমোর। তার অধীনে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এছাড়া ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে খেলেছিল সুপার এইটে। সবমিলিয়ে তার সময়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে জিতেছে ৩২টি।
ওয়ানডেতে হাথুরুসিংহেও ব্যর্থ নন। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের জয় ১৫৯টি, এর সর্বোচ্চ ৩৫টি হাথুরুসিংহের অধীনে। তিনি ওয়ানডে সিরিজ জিতিয়েছেন ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালেও খেলেছিল হাথুরুর বাংলাদেশ।
জেমি সিডন্স (২০০৭-২০১১)
হোয়াটমোর যাওয়ার পর ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত (এপ্রিল) লম্বা সময় বাংলাদেশের কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স। এই সময়ে ১৯ টেস্টে বাংলাদেশের জয় ২টি, ড্র ১ হার ১৬টিতে। জয় দুটি এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র ড্র’র টেস্টটিতে বৃষ্টির জন্য খেলাই হয়নি তিন দিন। এই সময়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ৩১ ম্যাচ।
শেন জার্গেনসন (২০১২-২০১৪)
২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় দলের কোচ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শেন জার্গেনসন। তার সময়ে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছিল একটিই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই জয়টা ছিল টেস্টে চার বছর পর বাংলাদেশের প্রথম। এই সময়ে ওয়ানডেতে ৮ জয় ছিল বাংলাদেশের।
স্টিভ রোডস (২০১৮-২০১৯)
২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত কোচ ছিলেন ইংল্যান্ডের স্টিভ রোডস। এই অল্প সময়ে ৮ টেস্টের ৩টিতে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন তিনি। সে সময় বাংলাদেশ জিতেছিল ১৭ ওয়ানডে। ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব থাকলেও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব্যর্থতায় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই চাকরি হারান স্টিভ রোডাস।
রাসেল ডোমিঙ্গো (২০১৯-২০২৩)
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের আগে ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর বাংলাদেশের কোচ ছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো। তার হাত ধরে ২২ টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টি, ড্র ২, হার ১৭ টেস্টে। এই সময়ে ৩০ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ২১টি।
এছাড়া বাংলাদেশের আরও যারা কোচ ছিলেন, তারা খুব বেশি সময় দায়িত্ব পাননি। তাই তাদের সাফল্যের হারও অনেক কম।
জয়-পরাজয়ের এই পরিসংখ্যানে এগিয়ে রাখছে হাথুরুসিংহেকেই। ২০১৭ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ না করে নিজেই বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন তিনি। এবার কি বিসিবি মেয়াদপূর্ণ করতে দিবে তাকে?