Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

১৬০ দিনে সাপে কেটেছে ৬১০ জনকে, মৃত্যু ৩৮

রাসেলস ভাইপার বিষয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে বুধবার ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করে।
রাসেলস ভাইপার বিষয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে বুধবার ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করে।
[publishpress_authors_box]

এবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত সারাদেশে ৬১০ জনকে সাপে কেটেছে। তারমধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, দেরিতে হাসপাতালে নেওয়াই এদের মৃত্যুর কারণ।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে সাম্প্রতিক আতঙ্কের মধ্যে বুধবার ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেওয়া হয়।

তাতে জানানো হয়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৬১০টি সর্পদংশনের তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং নারী তিনজন। 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয় সাপে কাটার পর। তাদের মধ্যে ১১ জন মারা যায়, চন্দ্রবোড়ার দংশনের কারণে মারা যায় পাঁচজন।

রাসেলস ভাইপার সাপটি মূলত রাজশাহী অঞ্চলে দেখা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়েছে দেশের অন্য স্থানগুলোতেও।

রাসেলস ভাইপার বিষয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর কারণ, সচেতনতা এবং কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না, সে বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, চন্দ্রবোড়া ভাইপারডি গ্রুপের একটি সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ায় অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই রয়েছে।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩৫ জন রোগীর তথ্য আছে, যারা রাসেলস ভাইপারের কামড়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং তাদের মধ্যে ৬৯ জনের মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই রোগীগুলো আট ঘণ্টা দেরিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিল। অর্থাৎ অনেক দেরি করে রোগীগুলো হাসপাতালে এসেছে।”

দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাপের বিষের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম রয়েছে দাবি করেন ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, “অথচ দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ এখনও সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে ওঝার কাছে যায়। শুধু অ্যান্টিভেনম দিলেই মৃত্যু হবে না, এটাও না। রোগীর নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেজন্যও তাকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখার দরকার রয়েছে।”

সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশের মানসিক সমস্যা হতে পারে বলে এসব রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসকের নজরদারিতে রাখার পরামর্শও দেন তিনি।

রাসেলস ভাইপার নিয়ে গুজবে কান না দিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজশাহীর বাইরে রাসেলস ভাইপারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, “আমাদের কাছে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজের তথ্য আছে। অন্যরা কিন্তু তথ্য সেভাবে দিতে পারছেন না। কারণ হয়ত তেমন অভিজ্ঞ না সাপ চেনার ক্ষেত্রে। অন্যান্য তথ্য যেগুলো আছে, সেগুলো কয়টা বিষধর সাপ কিংবা কয়টা মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যু তো কোবরা দ্বারাও হতে পারে, কেউটে দ্বারাও হতে পারে, রাসেলস ভাইপারও হতে পারে।

“চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে একটা তথ্য আমরা পেয়েছি। সেখানে এই বছর দু’জন রোগী সন্দেহজনিতভাবে রাসেলস ভাইপারের দংশনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া এই বছর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে তিনটি সাপে কাটা রোগীর তথ্য এসেছে, যার মধ্যে একটি ছিল রাসেলস ভাইপারের কামড়ের ঘটনা। রোগী বর্তমানে সুস্থ আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে সর্প দংশনে কর্মকৌশল সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনাতে (২০২৩ থেকে ২০২৮) বলা হয়েছে, সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধার‌ণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত