Beta
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

অস্ট্রিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল রাশিয়া

শনিবার থেকেই গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
শনিবার থেকেই গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
[publishpress_authors_box]

পাইপলাইন দিয়ে ইউক্রেনের মাধ্যমে অস্ট্রিয়াকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। শনিবার থেকেই গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সোভিয়েত যুগ থেকে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানির সবচেয়ে পুরনো পাইপলাইন এটি।

এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি নবায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন।

দেশটির দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যে মুনাফা অর্জন করে, তা তাদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্যই চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাশিয়া এখন শুধু হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় গ্যাস রপ্তানি অব্যাহত রাখবে। হাঙ্গেরিকে মূলত তুরস্কের মাধ্যমে একটি পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস দেওয়া হয়। এর আগেও ২০২২ সালে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর আগে, রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাস চাহিদা মেটাত।

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার অবশ্য জানিয়েছেন, গ্যাজপ্রমের গ্যাস সরবরাহ বন্ধের নোটিশ পাওয়ার ঘটনা প্রত্যাশিত ছিল। এজন্য অস্ট্রিয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, “কোনো ঘর ঠান্ডা থাকবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস মজুদ রয়েছে।”

এ নিয়ে গ্যাজপ্রম কোনও মন্তব্য করেনি।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা সোশাল মিডিয়া এক্সে লেখেন, “রাশিয়া আবারও জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, এই পদক্ষেপটি তাই প্রমাণ করে। অস্ট্রিয়া তার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপায় খুঁজে পাবে। রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতার যুগ শেষ হয়ে গেছে। এখন রাশিয়ার জ্বালানির লাভ ও যুদ্ধে অর্থায়ন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার সময় এসেছে।”

অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওএমভি জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি করে তাদের গ্রাহকদের সরবরাহ করতে পারবে।

গ্যাজপ্রম ও ওএমভির মধ্যে চুক্তিগত বিরোধের কারণে রাশিয়া থেকে অস্ট্রিয়ার গ্যাস আমদানি শেষ হবে।

সেন্ট্রাল ইউরোপীয় গ্যাস হাব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত একটি নোটিশে ওএমভি জানিয়েছে, গ্যাজপ্রম তাদের শনিবার থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কথা জানিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট গ্যালেনের পূর্ব ইউরোপ স্টাডিজের অধ্যাপক উলরিখ শ্মিড বলেন, “গ্যাজপ্রমের এমন পদক্ষেপের কারণে অস্ট্রিয়ায় শীতকালে তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির নির্বাচনে রুশপন্থী ফ্রিডম পার্টি নির্বাচিত হয়। এরপরই তাদের জোট আলোচনা থেকে বাদ দেওয়ার পরেই এমন পদক্ষেপ এল।”

২০২২ সালে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিলে ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে গ্যাসের দাম বাড়ে। কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস উৎপাদক।

অস্ট্রিয়া ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করে। এটি ছিল পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দেশগুলোর একটি, যারা সোভিয়েত গ্যাস কিনতে শুরু করে। এই চুক্তি সোভিয়েতের চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণের কয়েক মাস আগে হয়।

যুদ্ধের আগে জার্মানিও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। তবে ২০২২ সালে বাল্টিক সাগরের নিচে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

রাশিয়া অস্ট্রিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধের নোটিস দিয়েছে। এই ঘোষণা আসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মধ্যে ফোনালাপের সময়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর এটি ছিল তাদের প্রথম ফোনালাপ।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়া সবসময় জ্বালানি খাতে চুক্তি ও চুক্তিবদ্ধ বাধ্যবাধকতা কঠোরভাবে পালন করেছে। জার্মানি আগ্রহ দেখালে রাশিয়া পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের মাধ্যমে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করেছে। এটি ২০১৮-২০১৯ সালে বিভিন্ন পথে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের সর্বোচ্চ প্রবাহের প্রায় ৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউক্রেনের ট্রানজিট রুট অস্ট্রিয়া এবং এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার ৬৫ শতাংশ গ্যাস চাহিদা পূরণ করেছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা ২০২৫ সালের পর এই ট্রানজিট চুক্তি নবায়নের পরিকল্পনা করছে না।

হাঙ্গেরি এখন আর ইউক্রেনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস পায় না। তারা কৃষ্ণ সাগরের তলদেশ দিয়ে চলা তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি করে। স্লোভাকিয়া এখনও ইউক্রেনের মাধ্যমে রুশ গ্যাস পায়।

অধ্যাপক শ্মিডের মতে, গ্যাজপ্রমের এই পদক্ষেপ পশ্চিমাদের প্রতি রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শনের উদাহরণ। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ বাড়ার প্রেক্ষিতে রাশিয়া এমনটি করেছে।

তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রাশিয়া আরও সাহস পেয়েছে। ট্রাম্প দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি কমিশনার কাদ্রি সিমসন। তিনি সম্প্রতি আজারবাইজানে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বলেন, “ইউক্রেন রুটের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়া সব ইউরোপীয় দেশ অন্য সরবরাহ উৎসে প্রবেশ করতে পারে। এটি গ্যাসের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।

“আমরা খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, বিকল্প সরবরাহ রয়েছে। ইউক্রেনের মাধ্যমে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস পরিবহনের প্রয়োজন নেই।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত