বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিস্থিতি কী, সে দিকে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার নজর রেখেছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
জয়শঙ্কর বলেন, সরকার সহিংসতা-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তারা সংখ্যালঘুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
বাংলাদেশে ব্যাপক লুটপাট ও দাঙ্গার খবরের মধ্যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে ‘অতি সতর্ক’ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জয়শঙ্কর বলেন, “খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সেই অনুমতি দেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় দিকে গাজ়িয়াবাদের (উত্তর প্রদেশের) বিমানঘাঁটিতে শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে অবতরণ করে একটি উড়োজাহাজ।”
এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে এখনই ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে আনা হচ্ছে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সরকার। প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মঙ্গলবার দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলছে, সর্বদলীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেছেন জয়শঙ্কর।
এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আপাতত তাদের বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে আনা হবে না। তবে ভারত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজন হলেই দ্রুত যাতে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে আনা যায়, সেই বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতির দিকেও নজর রয়েছে ভারতের।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, জয়শঙ্কর সর্বদলীয় বৈঠকে জানিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি ‘তেমন গুরুতর নয়’। তিনি বলেছেন, “যে পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, তার দিকে আমরা নজর রাখছি। সঠিক সময় এলে ভারত সরকার সঠিক পদক্ষেপ নেবে।”
‘দিল্লিতেই গোপন আশ্রয়ে রয়েছেন শেখ হাসিনা’
সব দলের সঙ্গে বৈঠকেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, শেখ হাসিনাকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য আপাতত কিছুটা সময় দিয়েছে ভারত সরকার।
দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে আপাতত কিছু দিন সময় দিয়েছে ভারত।
বৈঠকে ছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজেজুরাও।
পিটিআই জানিয়েছে, বৈঠকে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাকে ধাতস্থ হতে সময় দিয়েছে ভারত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে।
এদিনই বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারি বাসভবনে ওই বৈঠকেও ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীরা। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিন্হা এবং গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি) ডিরেক্টর তপন ডেকা।
সোমবার বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে গাজ়িয়াবাদের হিন্দন এয়ারবেসে নামেন শেখ হাসিনা। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, এয়ারবেসেই রাত কাটিয়েছেন হাসিনা। তাকে যে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে উড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। মনে করা হচ্ছে, বিমানটি বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে।
সূত্রের খবর দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা লন্ডনে যেতে চান। কিন্তু ব্রিটেন থেকে এখনও মেলেনি সবুজ সংকেত। অন্য কোনও দেশে তিনি যাবেন কি না, সেই ভাবনাচিন্তা চলছে। আপাতত তার জন্যই ভারত তাকে সময় দিয়েছে।
পিটিআই জানিয়েছে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত সব দলই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছে। এ বিষয়ে তারা কেন্দ্রের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীও একই অবস্থান নিয়েছেন।