ভর দুপুরে কাঠমান্ডুর দি সোলটি হোটেলের লবিতে হাটাহাটি করছিলেন জাতীয় নারী দলের কোচ পিটার বাটলার। চোখে কালো সানগ্লাস। শর্টস আর বাংলাদেশের জার্সি পরা কোচের চেহারায় যেন বিষন্নতার ছাপ।
দলের মধ্যে চলা অন্তঃকোন্দল নিজেই প্রকাশ করে দিয়েছিলেন আগে। বাইরে থেকে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন দল গড়া নিয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, মেয়েদের প্ররোচিত করছেন-এমন মন্তব্যও করেছেন।
সিনিয়রদের উপেক্ষা করার যে প্রবণতা তিনি দেখিয়েছেন, তাতে ভালো ফল আসেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে নারী সাফের প্রথম ম্যাচে হার এড়াতে এড়াতে ড্র করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচটিও তিনি আগের মতোই নিজের মনগড়া দল করতে চেয়েছিলেন। তবে টিম মিটিংয়ে সেই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
শেষমেষ সাবিনা জেতেন এবং সোমবার হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক অকপটে বলে যান, “প্রথম ম্যাচটা আমরা ভালো খেলিনি। সিনিয়র ফুটবলারের অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে তো আমরা লিটারেলি ফোর্স করে টিম করিয়েছি। মারিয়া ও মনিকাকে এক সঙ্গে নামানোর জন্য জোর করেছি। তারপরও তিনি সেভাবে দল করতে চাননি। আপনারা দেখেছেন যে আমাদের ওপর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। মেয়েরা সেটা অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘খেলো তাহলে সিনিয়ররা, যেহেতু খেলতে চাও। প্রমাণ করো। রেজাল্ট বের করো। আমরা চেষ্টা করেছি।’ কোচের ওপরে রাগ–ক্ষোভ থেকে নয়, আমরা খেলতে পারি…এসব ম্যাচে কতটা দায়িত্ব নিয়ে মেয়েরা খেলতে পারে সেটা দেখিয়েছে।”
সিনিয়রদের প্রতি এক রকম চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন কোচ। সেই চ্যালেঞ্জ সিনিয়র ফুটবলরাররা গ্রহণ করে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ দল এখন দ্বিতীয়বার সাফের ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখছে।
সত্যি বলতে কোচের সঙ্গে অধিনায়কের যেন এক রকম দূরত্বই তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু কোনও দলের সাফল্যের জন্য যেমন কোচেরও প্রয়োজন তেমনি সাবিনাসহ অন্যান্য সিনিয়রদের পারফরম্যান্সও লাগবে।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোচ-অধিনায়কের দূরত্ব দৃশ্যমান। তাতে কি কোচের প্রতি সম্মানের জায়গাটা অটুট থাকে? সাবিনা সম্মানের কমতি দেখেন না, “উনার সিদ্ধান্তের ওপর সম্মান থাকবে। এখন উনি যদি চান জুনিয়র খেলোয়াড়দের দিয়ে খেলাতে, সেটা তিনি করতেই পারেন। অন্তত এখন আর আক্ষেপটা থাকবে না।”অর্থাৎ সিনিয়ররা তাদের সামর্থ্য প্রমাণ করে দিয়েছেন ভারতকে হারিয়ে। সুবাদে তাদের দিকে আর অঙুল তোলার সুযোগ থাকে না।
ঠিক যেন ২০২২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও কোচ টেন হাগের দ্বন্দ্ব। যেখানে রোনালদো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার তার (হাগ) প্রতি কোনও সম্মান নেই, কারণ তিনি আমাকে সম্মান দেখাননি। যদি আপনি আমাকে সম্মান না দেখান আমারও আপনার প্রতি কোনও সম্মান নেই।”
এই টুর্নামেন্টে এসে গোলাম রব্বানী ছোটনের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বাটলার। এ ব্যাপারে কি বলবেন? সাবিনার কড়া জবাব, “ছোটন স্যারকে নিয়ে তিনি (বাটলার) আসলে কতটুকু জানেন। আপনি তখনই একজনকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন, যখন আপনি তাঁর সম্পর্কে জানেন। ১৪ বছর ধরে যে কোচ মেয়েগুলোকে সন্তানদের মতো বড় করেছেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে কে কেমন আচরণ করছে, সেটাও একটা বিষয়। সেটা দেখে যদি তার (গোলাম রব্বানী) খারাপ লেগে থাকে এবং কোনও মন্তব্য করে থাকেন, তাতে আসলে অন্যায় কিছু না বা দোষের কিছু না।’