কাঁধ ও ঘাড়ের সাহায্যে ব্যাট করেন। বল করেন পা দিয়ে। দুই হাত না থাকার পরও প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর হার না মানার মানসিকতায় অনুপ্রেরণার বড় উদাহরণ তৈরি করেছেন আমির হোসেন লোন। স্বপ্ন ছিল কোনও একদিন দেখা করবেন শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্যারা ক্রিকেটারের স্বপ্ন সত্যি করেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি।
জম্মু ও কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছেন টেন্ডুলকার। তারই একফাঁকে আমিরের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও-তে এই ক্রিকেটারের বিস্ময়কর ব্যাটিং-বোলিং আগেই দেখেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের মালিক। সামনাসামনি আমিরকে দেখে বিস্ময় আরও বেড়ে যায় তার। দুই হাত না থাকার পরও আমিরের ইচ্ছাশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তা দেখে অভিভূত টেন্ডুলকার।
জম্মু ও কাশ্মীরে টেন্ডুলকার যেখানে আছেন, সেখানেই আমির এসেছিলেন তার প্রিয় ক্রিকেটারের সঙ্গে দেখা করতে। সেই সাক্ষাতের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করেছেন টেন্ডুলকার। যে ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতীয় কিংবদন্তিকে সামনে পেয়েও বিশ্বাস হচ্ছিল না আমিরের।
পরে নিজেকে সামলে আমির বলেন, “এত আনন্দ হচ্ছে স্যার…। যখনই জানতে পারলাম আপনি আসছেন, তখনই…। জীবনে কখনও হার মেনে নিইনি। যা যা স্বপ্ন আছে, তা পূরণ করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে গিয়েছি।”
হাত না থাকা পরও ক্রিকেটে কীভাবে এগিয়ে গিয়েছেন, সেই গল্প তিনি শুনিয়েছেন টেন্ডুলকারকে, “ধীরে ধীরে শিখতে থাকি। কলেজে পৌঁছাই। জম্মু ও কাশ্মীরের প্যারা ক্রিকেট দলে সুযোগ পাই। ২০১৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি। আজ আমি যেখানে এসেছি, সেটা আপনার কারণেই হয়েছে। সব থেকে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আপনিই।”
এ কথা শুনে টেন্ডুলকার বলেন, “তুমিই সত্যিকারের হিরো। তুমি যা করেছ, সেটা কেউ পারবে না। আট বছরের একটা ছেলে এত বড় ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে, জীবনে এতদূর এগিয়ে অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা বিশাল বড় ব্যাপার। তুমি হয়তো জানো না তুমি কী করেছ।”
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না আমির। চোখ ভিজে আসে। পা দিয়ে মোছার চেষ্টাও করেন। ওই সময় টেন্ডুলকার উঠে গিয়ে তার কাঁধে হাত দিয়ে বলেন, “তুমি এখানেই বসে থাকো। এদিকে তাকাবে না। আমি তোমার জন্য কিছু একটা করতে যাচ্ছি।” এরপর সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক আমিরকে তার স্বাক্ষর করা একটি ব্যাট উপহার দেন। পরে ওই ব্যাট দিয়ে আমিরের ব্যাটিং স্ট্যান্সও দেখে নেন তিনি।
গত জানুয়ারিতে আমিরের বিস্ময়কর ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে রিটুইট করে টেন্ডুলকার লিখেছিলেন, “অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে আমির। এই ভিডিও দেখে আমি অভিভূত। আশা করছি একদিন ওর সঙ্গে দেখা করতে পারব। লাখ-লাখ মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য ধন্যবাদ।”
আমিরের বয়স যখন ৮, তখন বাবার কারখানায় দুর্ঘটনায় দুই হাতই হারান। তবে থেমে থাকেননি। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে ভালোবাসার ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন তিনি।