নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে দেশে প্রথমবারের মতো সেইফ ফুড কার্নিভাল বা নিরাপদ খাদ্য মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী ‘সেইফ ফুড কার্নিভাল-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পরে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন তিনি।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই খাতে উদ্যোক্তা তৈরি, জিআই পণ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পণ্যের ব্র্যান্ডিং, ব্যক্তিগত হাইজিন শিখন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পোড়া তেলের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে অবহিতকরণের উদ্দেশ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “একসময় বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব ছিল। আজকের ভাত পানি দিয়ে রেখে দিতে হয়েছে, পরের দিন সেটা যাতে খাওয়া যায়। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই, এখন পান্তা ভাত মানুষ শখ করে খায়। দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এখন আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করছি।”
তিনি বলেন, “আমি চাই আমাদের এই সংগ্রামের কথা শুধু দেশে বা গ্রাম-গঞ্জে নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে যাক। কারণ আমাদের দেশ থেকে যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, যেমন আম সেটা কীভাবে যায়? আম যখন বিদেশে পাঠানো হয় তখন তাদের প্রতিনিধিরা সরাসরি বাগান কিনে নেন। তারা সেই আম নিজেরা সুপারভিশন করে সংগ্রহের পর তারপর বিদেশে পাঠায়। এর কারণ আমাদের ওপর বিদেশিদের বিশ্বাস নেই। তাই এমন কাজ করতে হবে যাতে আমরা বিদেশিদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারি।”
সাধন চন্দ্র বলেন, “একটা সময় আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি রপ্তানি হতো। সে সসময় আমার চিংড়ির মধ্যে জেল, তারকাটা দেওয়া শুরু করলাম। এমন সব কারণে আমরা বিদেশিদের আস্থা হারিয়েছি।”
মন্ত্রী বলেন, “এখন ভেজালকে আমরা না বলি। এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, এখন তারা জেলা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য শুধু আইন করলে হবে না, সবাইকে আইন মানতে হবে। তাহলেই সচেতনতা বাড়বে। নিজের কারখানায় উৎপাদিত জুস নিজেরই সন্তানকে খাওয়াতে না পারলে হবে না।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেলাটি সবার জন্য উন্মুক্ত। মেলার প্রথম দিন থাকছে বিভিন্ন এলাকার খাবার নিয়ে আঞ্চলিক বিতর্ক। এছাড়াও গম্ভীরায় সুরে সুরে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক বার্তা দেওয়া হবে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে প্রথমদিনের কার্যক্রম।
৯ ফেব্রুয়ারি মেলার দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই থাকবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এরপর দিনব্যাপী পর্যায়ক্রমে ডমিনোজ পিৎজা কর্তৃক লাইভ পিৎজা প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক কুইজিন প্রদর্শনী, ম্যাজিক শো, সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক সেলিব্রিটি বার্তা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ‘নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় জিআই পণ্য এবং অর্গানিক ফুডের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
মেলার শেষ দিন ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে শুরু হবে পিঠা প্রতিযোগিতা। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুইজিন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ প্রদর্শনী শেষে শুরু হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম. উবায়দুল মোক্তাদির।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে ৭০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে আকিজ, প্রাণ, কোকাকোলা, ফিনলে, বেঙ্গলমিট, ইউনিলিভার, নেসলে, ডমিনোজ, আবুল খায়ের, স্কয়ার গ্রুপ, বনফুল, ওয়েলফুড, প্রিমিয়াম সুইটস, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার, বনলতা সুইটস, ভাগ্যকূল, ব্রেড এন্ড বিয়ন্ড, সুমি’স হট কেক, ননী, হলিডে ইন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ক্রাউন প্লাজা, প্যান প্যাসিফিক, ঢাকা রিজেন্সি, হোটেল আমারি।
ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে আছে কক্সবাজারের শালিক, মুক্তাগাছার মন্ডা, রাজশাহীর কালাই, কুমিল্লার মাতৃভান্ডার, বগুড়ার দই, চট্টগ্রামের মেজবান প্রভৃতি। রেস্টুরেন্টের মধ্যে কেএফসি, পিৎজা হট, হারফি, বার্গার কিং, সুলতানস ডাইন ও কাচ্চি ভাই অংশ নিয়েছে।