অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। টুর্নামেন্টে করেছিলেন যৌথ সর্বোচ্চ ৪ গোল। এই সাফল্য উদযাপন করতে সাগরিকার বান্ধবীরা আসতে চাইছিলেন বাড়িতে। কিন্তু মেয়ের আবদারে সায় দেননি তার মা আনজু আরা বেগম।
দিবেন কীভাবে? জীর্ণ বাড়িতে যে কাউকে বসতে দেওয়ারও উপায় নেই। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দাবি উঠে, জাতীয় এই সম্পদের বাড়ি মেরামতের। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন সাগরিকাকে গড়ে তোলার কারিগর রাঙ্গাটুঙ্গি ফুটবল একাডেমির কর্ণধার তাজুল ইসলাম।
কাল (বুধবার) তিনিই নিজের ফেইসবুকে এ নিয়ে দেন স্ট্যাটাস, ‘‘সাগরিকার বাবা মাকে ঘর করে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব রকিবুল হাসান’’। এরপরই হৈচৈ। তাহলে কি নিজের টাকায় সাগরিকাকে বাড়ি করে দিচ্ছেন রকিবুল হাসান?
এ নিয়ে জানতে চাইলে রানিশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে জানালেন, ‘‘আপনাদের সকাল সন্ধ্যায় দেখেছিলাম টিভি ছিল না সাগরিকার পরিবারে। পরে ওয়ালটন তার বাবার হাতে টিভি উপহার দিয়েছে। আরও অনেক মিডিয়ায় দেখেছি ওদের জরাজীর্ণ বাড়ির খবর। তাই দুই দিন আগে আমি সরেজমিন তাদের বাড়ি পরিদর্শনে যাই। তাদের বাড়িটি নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’’
এটা কি আপনি ব্যক্তিগতভাবে করে দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে রকিবুল হাসান বললেন, ‘‘না, এটা আমি ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে করছি না। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সাগরিকার পরিবারকে দুই রুমের একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার মুন্নার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তিনি ধন্যবাদ প্রাপ্য। রাজমিস্ত্রির সঙ্গেও কথা হয়েছে। কত খরচ হবে, এরকম একটা ধারণার পরই বাড়ির নির্মাণের কাজ শুরু হবে দ্রুত।’’
ঠাকুরগাঁও জেলার রানিশংকৈল-হরিপুর মহাসড়কের বাশরাইল এলাকা থেকে মহাসড়কের উত্তর দিক দিয়ে সরু পথ ধরে প্রায় আধা কিলোমিটার যেতেই সাগরিকাদের বাড়ি।
কাশবনের বেড়া দিয়ে ঘেরা এই বাড়ি।
দুটি ঘর করা হয়েছে কাশবন আর বাঁশের বাতার বেড়া দিয়ে। ঘরের ছাউনি হিসেবে রয়েছে ছাপরা টিন। অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল।
বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চায়ের দোকান আছে সাগরিকার বাবা মোহাম্মদ লিটন আলীর। লিটন আলীর সঙ্গে সাগরিকার মা আনজু আরা বেগম পরিচালনা করেন এই দোকান। এই চায়ের দোকানের আয়েই চলে সাগরিকাদের সংসার।
মেয়ের কারণে নতুন বাড়ি পেতে যাচ্ছেন লিটন। এজন্য খুশি তিনি,‘‘বলতে পরেন মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না আমাদের। মেয়ের জন্য বাড়ি করে দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন, স্বপ্নেও ভাবিনি এমন কিছু।’’