Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

মিয়ানমার থেকে গুলি : আতঙ্কে নৌযান বন্ধ, খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা সেন্টমার্টিনে

কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। ফাইল ছবি
কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

মিয়ানমার থেকে গুলিবর্ষণের আতঙ্কে ছয় দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিপি, না কি বিদ্রোহীরা এই গুলি চালাচ্ছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য যায় টেকনাফ থেকে। মানুষ ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নৌযান। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে প্রতিদিনই দ্বীপের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন ট্রলারে। খাদ্যপণ্য পরিবহনেও ব্যবহৃত হয় ট্রলার।

পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটন মৌসুম মূলত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এসময় পর্যটকবাহী বড় জাহাজ চলাচল করে। আগে অনেকে ট্রলার বা স্পিড বোটে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন গেলেও এখন আর কেউ এভাবে যাতায়াত করে না। পর্যটন মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময় স্থানীয়রাই দ্বীপটিতে থাকেন। তাই দ্বীপটি এখন পর্যটকশূন্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাত গত ফেব্রুয়ারি মাসে জোরাল হয়। এই সংঘাতের জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটের নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে ছোড়া হচ্ছে গুলি। গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। গুলিতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি।

এরপর শনিবার ৮ জুন পণ্যবাহী ট্রলারে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি।

এমন পরিস্থিতিতে ছয় দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে নৌরুটে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম।

তিনি বলেন, “বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে ট্রলার চালক ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নৌরুটে ট্রলার নিয়ে যাতায়াত করতে রাজি নয় কেউ। ওই পথ ছাড়া সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা বা রুটও নাই।

“প্রতিদিন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌরুটে চারটি ট্রলার ও ছয়টি স্পিড বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করতেন। দ্বীপে যে পরিমাণ খাদ্যপণ্য রয়েছে তা দ্বীপে অবস্থানকারী মানুষের ১০ দিনের বেশি যাবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবে কয়েকদিনের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট তৈরি হবে।”

দ্বীপের বাসিন্দা আবু তালেব বলেন, “টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় মিয়ানমার থেকে দ্বীপে যাতায়াত করা বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এ কারণে প্রাণের ভয়ে মানুষ, মালামাল পারাপার করতে চাই না।”

তিনি জানান, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। গত কয়েক দিনে ২-৩টি নৌযানে এ রকম হামলা চালানো হয়। পরে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, “দ্বীপে আসার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্ত থেকে সেন্টমার্টিনগামী নৌযানের ওপরে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার কারণে ছয় দিন ধরে সেন্টমাটিন-টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

“এ কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সঙ্কট হওয়ার মুখে। সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সঙ্কটাপন্ন হবে। সমস্যা দীর্ঘ হওয়ার আগে যেন সরকার সমাধানের চেষ্টা করে- সেই কামনা করছি।”

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিড বোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরিভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায় কিনা- তা খতিয়ে দেখছি।”

দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, সেন্টমার্টিন এখন পর্যটকশূন্য। দ্বীপের পর্যটন মৌসুম মুলত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এই সময় পর্যটনবাহী বড় জাহাজগুলো চলাচল করে। ওই সময়ই পর্যটকরা যান। এরপর কাঠের ট্রলার বা স্পিড বোট যোগে পর্যটকরা তেমন যাতায়াত করেত চান না। আগে অল্প কিছু পর্যটক এভাবে যাতায়াত করত। এখন আর করে না। দ্বীপে দ্বীপের মানুষরাই থাকে এই সময়। তাদের আসা-যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ট্রলার ও স্পিড বোট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত