কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে যাত্রীবাহী একটি ট্রলারে আবার গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে আব্দুর রশিদের মালিকানাধীন একটি যাত্রীবাহী ট্রলার সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে ফেরার পথে নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পৌঁছলে এই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একথা নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সকালে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ফেরার পথে যাত্রীবাহী একটি সার্ভিসের ট্রলার লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ট্রলারে থাকা যাত্রীরা নিচে শুয়ে পড়ে। গুলিতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটির বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে।
পরে ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে নিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তবে মিয়ানমার থেকে সেদেশের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) নাকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি গুলি চালিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ আরাকান আর্মির দখলে বলে শোনা যাচ্ছে।
এ ঘটনার পর আবারও টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌরুটে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
ট্রলারে থাকা যাত্রী নাছির উদ্দিন বলেন, “সেন্টমার্টিন থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য কক্সবাজারে যেতে সার্ভিস ট্রলারে করে রওনা দিই। মাঝপথে শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার চরের কাছাকাছি পৌঁছলে হঠাৎ করে মিয়ানমারের দিক থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। এতে ট্রলারে থাকা ৫০-৬০ যাত্রী চিৎকার শুরু করে। অনেকে কান্নাকাটি করে ট্রলারের নিচে শুয়ে পড়ে।
“অন্তত ৫০ রাউন্ড মতো গুলি করা হয়। এতে ট্রলারের একটি কাঠ ভেঙ্গে যায়।”
সীমান্তে ট্রলারে গুলি বর্ষণের বিষয়টি খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, “সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে ট্রলারে গুলির বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি।”
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ যাত্রীর একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে প্রথমবারের মতো গুলিবর্ষণ করা হয়।
এরপর ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে একই পয়েন্টে ফের গুলি করা হয়।
৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। ১১ জুন একটি স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়।
গুলিবর্ষণের কারণে সাত দিন বন্ধ থাকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল। এরপর বিকল্প পথে দ্বীপটিতে পণ্য ও সীমিত আকার যাত্রী পরিবহন শুরু হয় ১৩ জুন।
সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকা অতিক্রমের সময় ট্রলার ২ টিকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল। প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় ঘটেছে।