টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে ২২ জুনের পর আর কোনও নৌযান সেন্টমার্টিনে যাওয়া আসা করেনি। এরপর টানা ১৪ দিন ধরে প্রবাল দ্বীপটি এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে প্রচলিত নৌরুটে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে বিকল্প রুটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কিন্তু বঙ্গোপসাগর দিয়ে যাওয়া বিকল্প নৌরুটটি বর্ষা মৌসুমে উত্তাল থাকায় নৌযান চালানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে সেন্টমার্টিনে ফের খাদ্য সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দ্বীপে এখন যে খাদ্য রয়েছে তাতে দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দার দুই তিন দিনের বেশি চলবে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কমর্কতা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “খাদ্যসংকট নিরসনে নাফ নদীর পরিবর্তে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল দিয়ে সেন্টমার্টিনে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রলার চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় কোনও ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে না। কি করা যায় দেখা হচ্ছে।”
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, বিকল্প নৌরুটটি হলো শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের ‘গোলগরা’ নামক এলাকা দিয়ে। ওই এলাকাটি বঙ্গোপসাগরে হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ। এখন বর্ষাকাল হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে আরও বেশি। ট্রলার মালিক বা চালক ঝুঁকিপূর্ণ এই বিকল্প নৌরুট দিয়ে নৌযান চালাতে রাজি নয়।
সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, উত্তাল সাগর হওয়ায় বিকল্প পথটি স্পিডবোট ব্যবহারের উপযোগি না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, শাহপরীর দ্বীপ থেকে বিকল্প রুটে দুটি ট্রলার ২২ জুন সেন্টমার্টিনে আসে। দুই ট্রলারে তিন শতাধিক গ্যাসের সিলিন্ডার, কিছু খাদ্য ও কয়েকজন যাত্রী ছিল। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ২টি স্পিডবোট শাহপরীর দ্বীপে গেছে। পরের ১৪ দিন আর কোনও নৌযান চলাচল করেনি।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পথে একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে গুলি ছোড়া হয়। ৫ জুন সেন্টমার্টিনের একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফল নির্ধারণের জন্য ভোটগ্রহণ করা হয়।
ভোট শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী ট্রলারকেও গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। ৮ জুন আরও একটি ট্রলারকে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। ১১ জুন একটি স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।
এই গুলি ছোড়ার ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরের জলসীমায় ছিল। মিয়ানমারের জলসীমা থেকে ট্রলারে করে এগিয়ে এসেই গুলি ছোড়া হয়।
এই চারবারের ঘটনায় কোনও হতাহত হয়নি। তখন নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ১২ জুন জরুরি সভা করে সেন্টমার্টিনে যাওয়া আসার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকুল ব্যবহার করে যাত্রী আসা-যাওয়া শুরু হয়। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ।
বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এটা ২২ জুনের পর বন্ধ হয়ে যায়।