Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

এস আলমের গাড়ি সরানোর কাজে বিএনপি নেতারা

এস আলম গ্রুপ
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের পরিবারের মালিকানাধীন কয়েকটি গাড়ি কালুরঘাটের একটি অয়্যারহাউজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
[publishpress_authors_box]

বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি ঠেকাতে যখন গভর্নর হুঁশিয়ার করেছেন, তখন চট্টগ্রামে এই গ্রুপের মালিক ও তার পরিবারের ব্যবহার করা ১৪টি গাড়ি কালুরঘাটের একটি অয়্যারহাউজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের গাড়িগুলো সরানোর এই কাজে সহায়তা করেছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা।

গত ২৯ আগস্ট রাতে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানাজানি হয় শুক্রবার রাতে। এরমধ্যে একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় এসেছে, যেখানে গাড়িগুলো সরিয়ে নিতে দেখা যায় বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে।

সেখানে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরানোয় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন বিএনপির এই নেতারা।

সাইফুল আলম মাসুদ

চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ আওয়ামী লীগের শাসনকালে কয়েকটি ব্যাংক দখল করে লক্ষ কোটি টাকার বেশি অর্থ লুট এবং পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এস আলমসহ কারা কারা এমন লুটপাট চালিয়েছিল, তা বের করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এই প্রক্রিয়া চলার মধ্যে গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এস আলম ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছেন। এমন সুপরিকল্পিতভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না, তা জানা নেই।”

এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করেই গ্রুপটির মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

তিনি ওই কথা বলার পরদিনই কালুরঘাটের ওয়্যারহাউস থেকে এস আলমের পরিবারের গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হলো চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার তদারকিতে।

যে ওয়্যারহাউস থেকে গাড়িগুলো সরানো হয়েছে, সেটি মীর গ্রুপের। মীর গ্রুপের মালিক আবদুস সালামের সঙ্গে এস আলমের আত্মীয়তার সম্পর্কের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কও রয়েছে।

এস আলমের সব ভোগ্যপণ্য কারখানা থেকে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করে মীর গ্রুপ। আবার মীর গ্রুপের মালিক সালামের মেয়ের সঙ্গে সাইফুল আলম মাসুদের ছেলের বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে।

সরিয়ে নেওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, আউডি, পোরশে ও রেঞ্জরোভার এবং টয়োটা প্রাডো ব্রান্ডের গাড়ি রয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া তদারক করছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের গাড়ির চালক মনসুরও সেখানে ছিলেন।

সরকার পতনের পর ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে বেসরকারি ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরব হলে ঢাকায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে এস আলমের পক্ষে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে হামলা-গুলিবর্ষণ হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাইফুল আলম মাসুদের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনও পটিয়ায় এক বিএনপি নেতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার স্বজনদের গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাস্তবে আমি সেদিন গিয়েছিলাম কালুরঘাট শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের ওয়্যারহাউসে। মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম এবং আমি মামাতো-ফুপাতো ভাই।

“সালাম ভাই আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে বিএনপির কিছু ছেলে তার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। তাই আমি বিএনপি নেতা সুফিয়ান ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় (বিসিক) মীর গ্রুপের মালিকানাধীন ওই ওয়্যারহাউসে যাই। সেখানে গাড়িগুলো কাদের ছিল, তা আমি জানি না।”

ভিডিওতে একটি চালিয়ে নিতে দেখা যায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের চালক মনসুরকে। ওই গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে আবু সুফিয়ান বলেন, “ঘটনা কী, আমি জানি না। বিএনপির লোকজন চাঁদা দাবি করছে শুনে আমি এনামের সঙ্গে মীর গ্রুপের আবদুস সালামের একটি কারখানায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমরা বিষয়টি সমাধান করে দিয়ে চলে আসি।”

সাইফুল ইসলাম মাসুদ বিদেশে রয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের পর নানা অভিযোগের বিষয়ে তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম শহরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় তার বাসা। যে গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আগে সেখানে থাকত।

এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট রাতে গাড়িগুলো কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সেখান থেকে কখন কালুরঘাট শিল্প এলাকায় ওয়্যারহাউসে সেগুলো স্থানান্তর হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে মীর গ্রুপের মালিক আবদুস সালামের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গাড়িগুলো তাদের অয়্যারহাউজ থেকে কোথায় নেওয়া হলো, তাও জানা যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত