“নিজে ঢাকায় চাকরি করলেও পরিবার রাখতে হচ্ছে টাঙ্গাইলে। কারণ মাস শেষে যে বেতন পাই তাতে বাসা ভাড়া ও বাজার খরচের পর সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারি না। সৎভাবে চাকরি করে বেতনের টাকায় সংসার চালানো এখন দুরূহ হয়ে গেছে। এজন্য অনেকেই দুর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নেয়। চাকরি করে যদি জীবন চালাতেই হিমশিম খেতে হয়, তাহলে সঠিকভাবে মানুষের সেবা করব কীভাবে? অথচ বাংলাদেশের তুলনায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এমনকি পাকিস্তানেও পুলিশের বেতন অনেক বেশি।”
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পুলিশের বেতন কম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এভাবেই অভিযোগ করছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। ২০০৮ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশের চাকরি শুরু করেছিলেন তিনি।
তার মতে, বেতন অনেক কম হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ কাঙ্ক্ষিত পুলিশি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে জীবনমানের খরচের তুলনায় বাংলাদেশের পুলিশের বেতন কাঠামো ঠিকই আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কনস্টেবল পদে যখন চাকরিতে ঢুকেছিলেন তখন তার মূল বেতন ছিল মাত্র ২ হাজার ৮৫০ টাকা। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, ঝুঁকিভাতাসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে হাতে পেতেন ৪ হাজার ২০০ টাকার মতো। এরপর গত ১৬ বছরে প্রমোশন পেয়ে উপপরিদর্শক হয়েছেন। বর্তমানে সবমিলিয়ে বেতন হয়েছে ৩৮ হাজার ৩২১ দশমিক ৫০ টাকা।
এর মধ্যে আছে মূল বেতন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষাভাতা এক হাজার, ঝুঁকিভাতা সাড়ে চার হাজার, ভাড়িভাড়া ভাতা ১০ হাজার ১৯১ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০, ধোলাইভাতা ৩০০, অন্যান্য ভাতা ১ হাজার ৩০০ ও বিশেষ সুবিধা এক হাজার টাকা। এখান থেকে বীমা, ভবিষৎ তহবিল আর স্ট্যাম্পের খরচ কেটে নেওয়ার পর হাতে পান ৩৫ হাজার ২১১ দশমিক ৫০ টাকা।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমার দুই সন্তান স্কুলে পড়ে। এখন আপনিই বলুন, এই ৩৫ হাজার টাকা থেকে ঢাকায় বাসাভাড়া আর বাজার খরচ চালানোর পর তাদের পড়ালেখার খরচ চালাব কীভাবে? সম্ভব না দেখেই পরিবার আরেক জেলায় রাখতে হয়েছে।
“সন্তানরা এখন বড় হচ্ছে, বাসায় তাদের পড়ানোর জন্য প্রাইভেট শিক্ষক দরকার বলে বারবার তাগাদা দিচ্ছে স্ত্রী। কিন্তু আমার তো সেই সামর্থ্য নেই। এমন অনেক বিষয় নিয়েই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যও হচ্ছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কনস্টেবল পদমর্যাদার এক পুলিশ সদস্য বলেন, “এমনিতেই বেতন কম, তার মধ্যে ২-৩ বছর আগেও ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরি পাওয়া যেত না বললেই চলে। কনস্টেবল পদের জন্যই ৭-৮ লাখ টাকা ঘুষ লেগেছে। এত টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ওই পুলিশ সদস্য আয় বাড়াতে অবৈধ পথে হাঁটবেন। তাই সেবা পাওয়ার জন্য পুলিশের বেতন বাড়ালেই শুধু হবে না, ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”
গত ২-৩ বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের সময় ঘুষ কম লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বেনজীর স্যার আর যা-ই করুক, এই একটা কাজ খুব ভালো করে গেছেন। তিনি পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনায় ঘুষ লেনদেন অনেক কমেছে।”
এডিসি পদমর্যাদার এক পুলিশ সদস্যের বক্তব্যেও আর্থিক টানাপোড়েনের বিষয়টি উঠে আসে।
নাম প্রকাশ না করে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রিকশাওয়ালা ও অটোরিকশা চালকও ঢাকা শহরে আনুমানিক ৩০-৫০ হাজার টাকা আয় করে। ছোট চা-পানের দোকানদারও যথেষ্ট আয় করে। কোনও হোটেল বা রেস্টুরেন্টে পরিবারসহ খেতে গেলে মাসে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চিকিৎসায় মাসে পরিবারের জন্য ১৫০০ টাকায় কি হয়। ৪/৫ জনের পরিবারের মাসিক বাজার খরচ ১০/১৫ হাজারে কি হয়। বাসা ভাড়া ১৫/২০ হাজারে ঢাকা মহানগরীতে কি হয়। রেশন ছাড়াও ঢাকায় একজন কনস্টেবলের মাসিক পারিবারিক খরচ মিনিমাম ৫০ হাজার টাকা লাগে। অথচ পুলিমের চাকরি দেশের অন্য চাকরির চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এত কষ্ট করার পর কি একজন পুলিশ কনস্টেবল মাসে পরিবার-সন্তান নিয়ে একটু ঘোরাঘুরি ও রেস্টুরেন্টে খাবে না?
“আপনি নিজেকে দিয়ে যদি চিন্তা করেন তাহলে পরিবারসহ ঢাকায় আপনার মিনিমাম মাসিক খরচ কত? তাহলে পুলিশ সদস্যদের খরচ ও ডিউটি হিসেব করলে মিনিমাম কত খরচ হতে পারে নিজেই বলুন। পুলিশ সদস্য সবাই রেগুলার ডিউটির পাশাপাশি রাত জাগে, ডিউটির চাপে অসুস্থ হয়, আবার সুস্থ থাকতে হলে সুষম খাদ্যও খেতে হয়। তারা ডিউটির চাপে পরিবারকেও সময় কম দেয়। ফলে সেই সময়ও নিজের কিছু কাজ অর্থের বিনিময়েও করতে হয়।
“পুলিশের সেবার মান নিশ্চিত করতে হলে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাজার ও সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক বেতন নির্ধারণ করতে হবে। একজন বিসিএস পুলিশ অফিসারের সামাজিক সম্মান, কাজের মান ও পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিতের জন্য মিনিমাম বেতন সবমিলিয়ে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা হওয়া উচিত।”
বর্তমানে পুলিশের কোন পদে কত বেতন
বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী একজন পুলিশ কনস্টেবল চাকরি জীবনের শুরুতেই সব মিলিয়ে বেতন পান ২০ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৯ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ৫ হাজার ৪০০ টাকা, চিকিৎসাভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষাভাতা এক হাজার টাকা, বিশেষ ভাতা এক হাজার টাকা, ঝুঁকিভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, যাতায়াতভাতা ৩০০ টাকা, টিফিন ২০০ টাকা ও ধৌতভাতা ৩০০ টাকা।
নায়েক পদমর্যাদার একজন পুলিশ সদস্য সব মিলিয়ে বেতন পান ২১ হাজার ৫২০ টাকা। মূল বেতন ৯ হাজার ৭০০ টাকা, বাড়িভাড়া ৫ হাজার ৮২০ টাকা, চিকিৎসাভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষাভাতা এক হাজার টাকা, বিশেষ ভাতা এক হাজার টাকা, ঝুঁকিভাতা এক হাজার ৭০০ টাকা, যাতায়াতভাতা ৩০০ টাকা, টিফিন ২০০ টাকা ও ধৌতভাতা ৩০০ টাকা।
সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার একজন পুলিশ সদস্য সব মিলিয়ে বেতন পান ২২ হাজার ৪২০ টাকা। মূল বেতন ১০ হাজার ২০০ টাকা, বাড়িভাড়া ৬ হাজার ১২০ টাকা, চিকিৎসাভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষাভাতা এক হাজার টাকা, বিশেষ ভাতা এক টাকা, ঝুঁকিভাতা এক হাজার ৮০০ টাকা, যাতায়াতভাতা ৩০০ টাকা, টিফিন ২০০ টাকা ও ধৌতভাতা ৩০০ টাকা।
উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার একজন পুলিশ সদস্য সব মিলিয়ে বেতন পান ৩২ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ৯ হাজার ৬০০ টাকা, চিকিৎসাভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষাভাতা এক হাজার টাকা, বিশেষ ভাতা এক হাজার টাকা, ঝুঁকিভাতা দুই হাজার ৭০০ টাকা। তবে তিনি যাতায়াত ভাতা, টিফিন ও ধৌতভাতা পান না। তবে অন্যান্য ভাতা নামে ৮০০ টাকা করে পান একজন এসআই।
অন্য দেশে পুলিশের বেতন কেমন
প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একজন পুলিশ কনস্টেবল দেশটির ষষ্ঠ পে কমিশন অনুযায়ী বেতন পান। ষষ্ঠ পে কমিশন অনুযায়ী প্রতিমাসে সবমিলিয়ে তার বেতন ২৭ হাজার ৩৭৭ রুপি। এক রুপি সমান ১ দশমিক ৪৩ টাকা ধরে যা বাংলাদেশি টাকায় হয় ৩৯ হাজার ১৪৯ টাকা।
আরেক প্রতিবেশী দেশ নেপালের একজন পুলিশ কনস্টেবল চাকরি জীবনের শুরুতে বেতন পান ২৯ হাজার ৬১৭ নেপালি রুপি। এক নেপালি রুপিতে দশমিক ৮৯ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় যা ২৬ হাজার ৩৫৯ টাকা।
অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সেখানকার একজন পুলিশ সদস্য চাকরি জীবনের শুরুতেই বছরে বেতন পান ৫৮ হাজার ৫৮০ ডলার। সেই হিসাবে প্রতিমাসে তার বেতন হয় ৮ হাজার ৮৮১ দশমিক ৬৬ ডলার বা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭ টাকা (প্রতি ডলার ১১৯ দশমিক ৯৫ টাকা হিসেবে)।
এছাড়া পাকিস্তান, চীন, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম বেতন পান বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা।
ওয়ার্ল্ডস্যালারি ডট কমের তথ্য অনুসারে, বেতনের দিক থেকে বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে আছেন শুধু ইথিওপিয়ার পুলিশ সদস্যরা। দেশটির একজন পুলিশ সদস্য চাকরি জীবনের শুরুতে বছরে বেতন পান এক হাজার ১৪০ ডলার। সেই হিসেবে প্রতিমাসে তার বেতন হয় ৯৫ ডলার বা ১১ হাজার ৩৮৫ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে পুলিশের বেতন-ভাতা ‘যথেষ্ট’
অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশের বেতন কাঠামো যথেষ্ট বলেই মনে করেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা যেসব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বা জীবনমানের দিক থেকে সেটা যথেষ্ট। বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি পে স্কেল আছে। সেখানে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে কে কত বেতন পাবেন।
“সেই পে স্কেলের বাইরেও পুলিশ প্রতি মাসে একটা রেশন পায় প্রণোদনা হিসেবে। সেটা পুলিশ পায়, সেনাবাহিনী পায়। এর বাইরে কিন্তু অন্য যারা ক্যাডার আছে তারা সেই সুবিধা পান না। এই সুবিধা দেওয়ার পরও কী আমরা বেটার পুলিশিং পেয়েছি? এর উত্তর হবে কিন্তু পাইনি। জনগণের প্রত্যাশিত যে পুলিশিং ব্যবস্থা বেতন কিংবা প্রণোদনা বাড়িয়েও সেটা আমরা পাইনি। তবে সেটা না পাওয়ার কারণ একটাই। সেটা হলো রাজনৈতিকভাবে পুলিশের ব্যবহার বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশের অপব্যবহার।
“আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশের বেতন ও প্রণোদনা যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝুঁকিভাতাও তাদের দেওয়া হয়। তারপরও আজকে পুলিশ বাহিনীর এই অবস্থা কেন, সেটা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ।”
তিনি বলেন, “ভারত বলেন কিংবা নেপাল, সেসব দেশে পুলিশের বেতন বেশি হতে পারে, কিন্তু আমাদের এখানকার মতো পুলিশকে কোনও প্রণোদনা দেওয়া হয় না। তারপরও কিন্তু তারা আমাদের চেয়ে বেটার পুলিশিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
“আমাদের পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। পুলিশ সদস্যরা যারা সেবা দেন তাদের অনেকের বাড়তি কোনও বিষয়ে চাপ থাকে কিংবা ট্রমা আছে, সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম আছে। সে কারণে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটাতে যে মনস্তাত্বিক সক্ষমতা থাকার দরকার, সেটা তাদের থাকে না। এই সক্ষমতা না থাকার কারণে তারা অন্য যেকোনও পথ যেমন ঘুষ কিংবা দুর্নীতিতে জড়িয়ে যায়। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
পুলিশকে সরকার কীভাবে ব্যবহার করছে, এর ওপর পুলিশের সেবার মান নির্ভর করে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।
এবিষয়ে কথা হয় ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিষয়ে বাংলাদেশের প্রথম অধ্যাপক উমর ফারুকের সঙ্গে।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পুলিশের যে বেতন কাঠামো কিংবা প্রণোদনা সেটা অন্য দেশের তুলনায় ও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট পরিমাণেই আছে। কিন্তু পুলিশকে সরকার কীভাবে ব্যবহার করছে সেটার ওপর পুলিশি সেবার মান নির্ভর করে। পুলিশকে হতে হবে জনগণের বা রাষ্ট্রের। সমস্যা তখনই হয় যখন পুলিশ হয়ে যায় শুধু সরকারের। পুলিশ নিজেকে শুধু সরকারের বাহিনী মনে করায়, তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সবার আগে পুলিশকে এই মনোবৃত্তি থেকে বের হতে হবে। তাদেরকে ভাবতে হবে সবার আগে আমি জনগণের রাষ্ট্রের।
সেবা প্রদানেও পিছিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ
মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক জানান, জনগণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পুলিশ অনেক পিছিয়ে।
তিনি বলেন, “পুলিশ পারফরমেন্স ইনডিকেটরে সিঙ্গাপুর বিশ্বের মধ্যে সেরা। তারা কিন্তু পুলিশকে বেতনের বাইরে কোনও প্রণোদনা দেয় না। আর প্রণোদনা দেওয়ার পর আমাদের দেশের অবস্থান ১৩৪ কিংবা ১৩৫ নম্বরে। বিষয়টা খুবই কষ্টের। সিঙ্গাপুরের পুলিশ সদস্যরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পান বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা তাদের চাইতে কম পান, বিষয়টা কিন্তু তেমনটা নয়। শুধু সিঙ্গাপুর নয়, পুলিশ পারফরমেন্স ইনডিকেটরে ভারত, পাকিস্তান, নেপালের মতো দেশগুলোও বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে।”
ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের করা ২০২৩ সালের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড পুলিশ ইনডেক্সেও’ বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে।
এই তালিকায় জায়গা পাওয়া ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ তম। এতে পাকিস্তান জায়গা করে নিয়েছে ৮০ নাম্বারে। আর ভারতের অবস্থান ৭৬তম। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৬৯তম। এমনকি মিয়ানমারও ৭৫তম হয়ে বাংলাদেশের আগে জায়গা করে নিয়েছে।