জাতীয় দলে জামাল ভূঁইয়ারা যখন ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থ হয়েছেন, সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশের ফুটবল নিয়ে, তখনই দাপুটে খেলছে মেয়েরা। কাজী সালাউদ্দিনের গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের মেয়েদের পারফরম্যান্স ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল।
চাইলে এই মেয়েরা ফুটবলে ছেলেদের অনুপ্রেরণাও হতে পারেন। মেয়েরা অবশ্য নিজেদের সেই জায়গায় নিতে পেরেছেন বাফুফের নিবিড় প্রশিক্ষণ পাওয়ায়। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের যা অর্জন, সবই বাফুফে ভবনকেন্দ্রিক কার্যক্রমের ফল। সারা বছর মেয়েরা বাফুফের আবাসিক ভবনে থেকে নিবিড় অনুশীলন করেন। জিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পান।
এভাবে মেয়েদের আগলে রাখার ফলও পাচ্ছে বাফুফে। বাংলাদেশের মেয়েরা নিয়মিতই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। খেলেছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেও একাধিকবার জিতেছে বাংলাদেশ।
তবে সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দাদের সবচেয়ে বড় অর্জন সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সাফের ৬টি আসরের মধ্যে সেরা সাফল্য ২০২২ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফের শিরোপা জয়। উপমহাদেশের এই টুর্নামেন্টে প্রথম ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব খর্ব করে চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যাটন তুলে নেয় বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের সাফে বাংলাদেশ হয়েছিল রানার্স আপ। এছাড়া সেমিফাইনালে বিদায় নেয় ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে। গ্রুপ পর্ব থেকে শুধু একবারই বিদায় নেয়, সেটা ২০১২ সালে।
যদিও বাংলাদেশের মেয়েদের সিনিয়র জাতীয় দল জুনিয়র দলের চেয়ে তুলনায় বেশ দুর্বল। তাই একসময় শুধু বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেই অংশ নিত বাংলাদেশ। সম্ভাব্য বড় হারের ঝুঁকি এড়াতে সিনিয়র দল অংশ নিত না আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। শুধু তাই নয়, মাঝখানে কিছুদিন মেয়েদের জাতীয় দলের কোনও র্যাঙ্কিং ছিল না। দীর্ঘদিন খেলার মাঝেই তো ছিল না মেয়েরা। প্রায় ২০ মাস বিরতির পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে অলিম্পিক বাছাই পর্বের ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফেরে বাংলাদেশ।
নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার সুবাদে র্যাঙ্কিংয়ে ফেরে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের ফিফা র্যাঙ্কিং ১৪০-এ।
২০১০ সালে জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর এ পর্যন্ত ৫৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে মেয়েরা জিতেছে ২১টিতে। ২৬টি হার ও ৮টি ড্র।
যদিও হঠাৎ হঠাৎ চমকে দিলেও জাতীয় দলটা সেভাবে এখনও তৈরি করতে পারেনি বাফুফে। কারণ বয়সভিত্তিক দলে খেলা মেয়েরাই জাতীয় দলের জার্সিতে নিয়মিত খেলেন, সেই নতুন মেয়েরা জাতীয় দলের ভার সেভাবে বহন করতে পারছেনা।
কিন্তু দিন শেষে পুরুষ দলের সঙ্গে তুলনায় গেলে আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্সে এগিয়ে থাকবে মেয়েরাই।