Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

ভ্যাট নিয়ে একই কথা বললেন সালেহ উদ্দিন

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
[publishpress_authors_box]

শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি দ্রব্যমূল্যে তেমন কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে আবার দাবি করলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেছেন, ভ্যাট বাড়ানোর কারণ কিছুদিন পর জানানো হবে।

অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট), শূল্ক ও কর বাড়ানোর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ভ্যাট যা বাড়ানো হয়েছে, তাতে জিনিসপত্রের দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। যারা এর সমালোচনা করছে, করুক; তাদের আটকানোর কিছু নেই। কী পরিপ্রেক্ষিতে এই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, তা কিছুদিন পর জানানো হবে।”

মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ পর্যালোচনা ও চলমান সমালোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন তিনি।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “বাজেটের সময় কর ও ভ্যাটের বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়। তখন অনেক কিছুই সমন্বয় করা হবে। ভ্যাট বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৯ জানুয়ারি বিশেষ আদেশে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায়। সেখানে মেশিনে উৎপাদন করা বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা, কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারির পর থেকে খাত সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা এসেছে খোদ অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কাছ থেকেও।

গত ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

পরদিন ২ জানুয়ারি সরকারি ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, কর বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না।

ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি রেস্তোরাঁ সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এনবিআর।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ভ্যাট বৃদ্ধির উদ্যোগ পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না, সে প্রশ্ন রাখা হলে অর্থ উপদেষ্টা তা এড়িয়ে যান।

সমালোচনার প্রসঙ্গে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “তারা তাদের কথা বলুক। কী প্রেক্ষিতে করেছি, সেটা কয়েকদিন পর জানতে পারবেন।”

সরকারি কর্মকর্তাদের মহার্ঘ ভাতার অর্থ কবে ছাড় করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটার বিষয়ে এখন আমি কিছু বলব না।”

গত দুই মাসে খাদ্যের অত্যাধিক মূল্যস্ফীতির সময়ে সুলভ মূল্যে কচু, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন সবজি বিপণন শুরু করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এখন সবজির দাম কমে আসায় বিশেষ ওই ওএমএস বন্ধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে আমরা বিশেষ ওএমএসটা করেছিলাম। বেশ সাকসেসফুলি কাজটা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ এই ওএমএসের আয়োজন করেছিল।”

বিশেষ ওএমএসে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের ৮ লাখের বেশি মানুষ কাভারেজ পেয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিসেম্বরে এটা আমরা স্থগিত করলাম। কারণ, বাজারে মোটামুটি একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। ভবিষ্যতে যদি আবার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন আবারও ওএমএসের বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।”

চালের দাম নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সাপ্লাই চেইনটা এখনও ব্রোকেন। মোকামে থাকে, রিটেইলাররা ঠিক মতো আনে না। এটা সরবরাহের সংকট নয়। তবুও চালের দাম কিছুটা কমেছে।”

বৈঠকে সার কেনার কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে জানিয়ে উপেদষ্টা বলেন, “ডিএপি, ইউরিয়া সারের একটা বাফার স্টক করার চেষ্টা করছি। কারণ, সরকারি সারের মজুদ না থাকলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।”

আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস করে গেলেও অভ্যুত্থানে এক মাস পরই তাদের পতন ঘটায় বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।

ঘোষিত বাজেটে গোটা অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে পাঁচ মাসেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তা আদায় করতে না পারায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।

এবার অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ঘাটতি তার দ্বিগুণ হওয়ায় পুরো বছর শেষে ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সরকারের চিন্তার জন্য যথেষ্ট।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থবছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট বা মূসক), শুল্ক ও আয়কর বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত