অর্থনীতিকে দ্রুত গতিশীল করাই হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করা। কারণ অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু হওয়া বেশ কঠিন। আমরা অর্থনীতিকে স্তব্ধ হতে দিতে চাই না।”
উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর শনিবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেশ হয়ে পড়ে সরকারবিহীন। দুই দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারেই অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
‘দেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে’ মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “অর্থনীতিতে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকের সমস্যা রয়েছে, মূল্যস্ফীতির সমস্যা রয়েছে। আরও অনেক অনেক ধরনের জটিলতা আছে। সবক্ষেত্রেই কাজ করতে হবে।”
“এই মুহূর্তের মূল কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা। আইনশৃঙ্খলা মানে শুধু রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলা নয়, বরং ব্যাংক পুরোপুরি চালু করা, বন্দরগুলো অনেকাংশে অচল– সেগুলো চালু করা।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “দেশের ক্রান্তিকালে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সময় সবকিছুই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের করতে হবে।”
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদটি সেনসেটিভ। তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, এটি ঠিক। এই বিষয়ে এখনই কিছু বলছি না। আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অর্থপাচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই সরকারের খুব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য আমরা মসৃণ পথ তৈরি করে যেতে চাই। সে জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা দরকার। আমাদের কর্মোদ্যোগী মানুষ দরকার। কেবল নির্দেশনা পেলে কাজ হয়ে যাবে, এমন হলে চলবে না।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভুলত্রুটি হলে সমালোচনা করবেন। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা না করার আহ্বান জানান তিনি।
ব্যাংকিং কমিশন হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হোক, এরপর সংস্কারের প্রসঙ্গ আসবে। এখনই সংস্কার শুরু হলে মূল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
লাইনচ্যুত অর্থনীতিকে লাইনে আনতে কত সময় লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমার মনে হয় না মৌলিক কাজগুলো করতে বেশি সময় লাগবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম ছিল, একেবারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়নি। বরং গতি হারিয়ে ফেলেছিল। আমরা গতি বৃদ্ধি করব।”
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতি ছাড়াও উন্নয়ন কৌশলে ভুল ছিল। মানুষ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের সুফল পায়নি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু তার ফল কে পেয়েছে, কাদের কাছে টাকা গেছে, সেটাই মূল বিষয়।
“আমাদের সরকার চায়, সমতাভিত্তিক ও ন্যায্য প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। সব মানুষের জীবন–জীবিকার বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।”