নিজের জীবন কী চলছে বাবা সিদ্দিকির মৃত্যুর পর, তা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন সালমান খান। দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব ছিল বলিউডের ‘ভাইজান’-এর সাথে মহারাষ্ট্রের এই রাজনীতিক এবং বিধায়কের।
১২ অক্টোবর মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় দশেরার উৎসবমুখর সন্ধ্যায় ৬৬ বছর বয়সী বাবা সিদ্দিকিকে তার ছেলের অফিসের বাইরে একাধিকবার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মোট ছয়টি গুলি ছোড়া হয়, যার মধ্যে চারটিই তার বুকে লাগে
এরপর নতুন করে শঙ্কায় সালমান খানের নিরাপত্তা। গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দল এরই মধ্যে বাবা সিদ্দিকি হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
আর কৃষ্ণহরিণ শিকারকে কেন্দ্র করে এই বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে সালমানের বিরোধ পুরোনো। সিদ্দিকি খুন হওয়ার পর সালমানের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে এবার মুখ খুললেন সালমান নিজেই, খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
প্রতি বছর ঈদের অনুষ্ঠানে বাবা সিদ্দিকির দাওয়াতে সাড়া দিতেন সালমান। তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়াই নাকি কাল হয়েছে বাবা সিদ্দিকির। সেই কারণেই নাকি মরতে হল এই রাজনীতিককে, এমনই দাবি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের।
বাবা সিদ্দিকি হত্যার পরদিনই সালমান নাকি একাধিক ফোন পেয়েছিলেন হুমকির। আর তাই অনেকের ধারণা ছিল বন্ধুর শেষ বিদায়ে দেখা যাবে না এই সুপারস্টারকে।
তবে বলিউডের ‘ভাইজান’ ঠিকই যান বন্ধুকে বিদায় জানাতে ‘বিগ বস’-এর শুটিং ফেলে রেখে। রিয়েলিটি শো-টির সঞ্চালক সালমান।
এতদিন চুপ ছিলেন কিন্তু অবশেষে নিরবতা ভাঙলেন সালমান। জানালেন কী চলছে তার জীবনে।
‘বিগ বস’-এর সাম্প্রতিক এপিসোডে বলেই ফেললেন, “আমার জীবনে যা চলছে…খুবই কঠিন সময় চলছে, আমাকে এসব সামলে চলতে হচ্ছে।“ বললেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির বাইরে আসা তার ঠিক হয়নি; তাকে নিয়ে মা-বাবা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন; এটা তাকে আরও চিন্তায় ফেলেছে।
‘‘আমার বিন্দুমাত্র মন নেই শুটিং করার। আমার জীবনে যা চলেছে তারপর আমার কারও সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আমি কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাকে করতেই হবে কাজটা।”
সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে দুই দশকের বেশি সময় পরে বলিউডে নতুন করে সহিংস সন্ত্রাসবাদ হানা দিল।
বাবা সিদ্দিকি হত্যার পর সালমান খান আবারও স্পটলাইটে এলেন মূলত ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে তার কৃষ্ণহরিণ শিকারকে কেন্দ্র করে। রাজস্থানের যোধপুরে সালমান খান ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দুইটি কৃষ্ণ বা কালো হরিণকে গুলি করে হত্যা করেন। এর ঠিক ১২ দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বরে ঘোডা এলাকার একটি ফার্মে আরেকটি কৃষ্ণহরিণ তিনি শিকার করেন।
বিলুপ্ত প্রজাতির এ হরিণ বিষ্ণোই ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তারা মনে করেন, হিন্দুদের বিষ্ণোই গোত্রের প্রবক্তা ভগবান জাম্বেশ্বরের পুনরুত্থানের প্রতীক কৃষ্ণহরিণ।
এছাড়া ভারতের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ীও সালমান বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় থাকা ওই হরিণ শিকারের কারণে দোষী সাব্যস্ত হন। এর জন্য জরিমানা দিয়েছেন তিনি। জেলও খেটেছেন। তবে রাজস্থান আদালতের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ শাস্তি নয়। আর এর জন্য তিনি কখনো বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমাও চাননি।
বিষ্ণোই গ্যাং ধর্মীয় পবিত্রতা নষ্টের কারণ দেখিয়ে তাই সালমানকে হত্যা করতে চাইছে। সালমান খানের বাড়ি পূর্ব বান্দ্রায়, যেটি আবার সিদ্দিকির নির্বাচনী ও বেড়ে ওঠার এলাকা। সালমানের ওপর এ বছর এপ্রিলে হামলার পর বাবা সিদ্দিকি তার নিরাপত্তার জন্য পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারই জের হিসেবে তাকে হত্যা করা হল বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বলিউডে বাবা সিদ্দিকি সবচেয়ে আলোচিত সম্ভবত ২০১৩ সালে সালমান খান ও শাহরুখ খানের মধ্যে চলতে থাকা বিরোধ মেটানোর মধ্যস্ততাকারী হিসেবে। সেবার এক ইফতার পার্টিতে দুই নায়ককেই নিমন্ত্রণ করেন তিনি।
সালমানের বাবা বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক ও স্ত্রিপ্টরাইটার সেলিম খানও ছিলেন নিমন্ত্রিত। সেখানেই ইফতারের সময় শাহরুখ খানকে সেলিম খানের পাশে বসিয়ে দেন তিনি। তখন থেকেই দুই মহাতারকার দূরত্ব কমতে থাকে।
বলা হয়, মু্ম্বাইয়ে সর্বকালের সেরা গ্যাংস্টার হিসেবে কুখ্যাতি অর্জনকারী দাউদ ইব্রাহিমের সন্ত্রাসী দল ‘ডি কোম্পানি’র হয়ে বলিউডের চাঁদাবাজি ও মাদকসহ অন্যান্য অবৈধ ব্যবসায়ের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন বাবা সিদ্দিকি।
রোজার মাসে চোখ ধাঁধানো ইফতার পার্টির দিতেন সিদ্দিকি। ওইসব ইফতার পার্টিতে বলিউডের বড় বড় তারকা, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা মিলিত হতেন। একধরনের ‘বিজনেস ডিল’ এর ক্ষেত্রও হয়ে উঠেছিল সিদ্দিকির দেয়া পার্টিগুলো।