Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

৫ কোটি রুপি না দিলে প্রাণে বাঁচবেন না সালমান খান!

মিত্র বাবা সিদ্দিকিকে হত্যার পর তাকে শেষবারের মতো দেখতে যান সালমান খান।
মিত্র বাবা সিদ্দিকিকে হত্যার পর তাকে শেষবারের মতো দেখতে যান সালমান খান।
[publishpress_authors_box]

৫ কোটি রুপি চাঁদা না দিলে জানে বাঁচবেন না বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। এবার লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো তাকে এক হোয়াটসআপ মেসেজে।

বলা হলো, বিলুপ্তপ্রায় এবং বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে দেবতার অবতাররূপ যে দুইটি কৃষ্ণহরিণ সালমান হত্যা করেছিলেন, তার প্রায়শ্চিত্ত এভাবেই করতে হবে।

হুমকি বার্তায় বলা হয়, এটিকে হালকাভাবে নিও না। যদি সালমান খান বেঁচে থাকতে চায় এবং লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে শত্রুতা শেষ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই তাকে ৫ কোটি রূপি দিতে হবে। নতুবা তার পরিণতি বাবা সিদ্দিকির চেয়ে ভয়াবহ হবে।“  

এনডিটিভি সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে, মুম্বাই পুলিশ সালমান খানে বান্দ্রার বাসভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তাছাড়া হোয়াটসআপ মেসেজের উৎসব খুঁজতেও কাজে নেমে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার নয়া-মুম্বাই পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে সুখবির বালবির সিং ওরফে সুখা নামের বিষ্ণোই গ্যাংয়ের এক সদস্যকে হরিয়ানা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। বলা হচ্ছে, সুখা সালমান খানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। সালমানের ওপর আক্রমণের জন্য সুখা লোক ঠিক করার কাজে জড়িত। পাকিস্তানের নাগরিক ডোগার এর সঙ্গে সুখার সম্পর্ক রয়েছে। তাকে নিয়েই সালমান হত্যার পরিকল্পনা সুখা সাজাচ্ছিল। বিষ্ণোই গ্যাং এর এ কিলিং স্কোয়াডটি সালমানের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য একে-৪৭, এম-১৬ এবং একে-৯২ মডেলের আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র পাকিস্তান থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও করেছিল। কেননা, চলতি বছরের এপ্রিলেই যখন সালমান খানের বান্দ্রার বাড়িতে বিষ্ণোই গ্যাং এর বন্দুকধারীরা হামলা করে, তখন টার্গেটকে দূর থেকে ঘায়েল করার মতো অস্ত্রের অভাবে তাদের আক্রমণ ভেস্তে যায়।

রাজস্থানের যোধপুরে সালমান খান ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দুইটি কৃষ্ণ বা কালো হরিণকে গুলি করে হত্যা করেন। এর ঠিক ১২ দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বরে ঘোডা এলাকার একটি ফার্মে আরেকটি কৃষ্ণহরিণ তিনি শিকার করেন।

বিলুপ্ত প্রজাতির এ হরিণ বিষ্ণোই ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তারা মনে করেন, হিন্দুদের বিষ্ণোই গোত্রের প্রবক্তা ভগবান জাম্বেশ্বরের পুনরুত্থানের প্রতীক কৃষ্ণহরিণ। এছাড়া ভারতের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ীও সালমান বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় থাকা ওই হরিণ শিকারের কারণে দোষী সাব্যস্ত হন।

তবে তারপরই সালমান খানের পেছনে লাগে বিষ্ণোই গ্যাং। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয় দেখিয়ে মুম্বাই ও বলিউডের নতুন মাফিয়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে বিষ্ণোই গ্যাং। এরই মধ্যে তারা বেশকিছু হাই-প্রোফাইল হামলা এবং খুনের সঙ্গেও জড়িত হয়েছে।

ইতিমধ্যেই সালমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি পাঞ্জাবি গায়ক এপি ধিলনের কানাডার বাড়িতে তারা হামলা চালিয়েছে। আরেক সালমান ঘনিষ্ঠ ও মুম্বাইয়ের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ তিনবারের এমএলএ বাবা সিদ্দিকিকে গেল শনিবারই গুলি করে হত্যা করেছে এ গ্যাংয়ের সদস্যরা।

মুম্বাই পুলিশের তদন্ত সূত্র যা বলছে, তা মোটেও ফেলনা নয়। তাদের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, সালমানকে নজরদারি করতে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের অন্তত ৬০-৭০ জন সদস্য বিভিন্ন জায়গায় নিয়োজিত রয়েছে। এরা সালমানের বান্দ্রার বাড়ি তো বটেই, নজর রেখেছে প্যানভেলে তার মালিকানার ফার্ম হাউস ও শুটিং স্পটগুলোতেও। নিরাপত্তার সামান্য ত্রুটিতেও প্রাণনাশের হুমকি দেখা দিয়েছে এই সুপার স্টারের।

নেপথ্যে লরেন্স বিষ্ণোই কারাগারে বন্দি অবস্থাতেই এ গ্যাং দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। লরেন্স ইচ্ছাকৃতভাবেই জামিনের আবেদন থেকে দূরে থাকেন এবং নিউজ ১৮-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ডাব্বা কলিং’ এবং ভিওআইপি-র মাধ্যমে তার সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংসহ ভারতের অপরাধীরা ‘ডাব্বা কলিং’ নামে পরিচিত একটি অবৈধ কৌশলে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং স্ট্যান্ডার্ড মোবাইল নেটওয়ার্কগুলোর পক্ষে এসব কল ট্র্যাক করা সম্ভব হয় না।

এনডিটিভি জানিয়েছে, বিষ্ণোই সিগন্যাল এবং টেলিগ্রামের মতো অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও জেল থেকে ভারতে এবং বিদেশে তার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এদিকে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে এ সপ্তাহেই কানাডা সরকার ভারতকে দুষেছে তাদের দেশে হত্যা-সহিংসতার মতো সংঘবদ্ধ অপরাধে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। অটোয়া পুলিশ বলছে, ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কে আরও উৎকণ্ঠা ছড়াতে কানাডায় সহিংসতা–হত্যায় ভারত সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বিষ্ণোই গ্যাং। এ ধরনের ঘটনার প্রমাণও নাকি কানাডা পুলিশের একটি টাস্কফোর্সের হাতে রয়েছে।

২০২২ সাল থেকে সালমান খান লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাংয়ের টানা হুমকির মধ্যে রয়েছেন। ওই বছর সালমান খানের বাবা সেলিম খান তাদের বান্দ্রার বাসভবনের কাছে সকালে হাঁটার সময় একটি হুমকিমূলক চিঠি পান। তাতে লেখা ছিল, “তুমহারা মুস ওয়ালা কার দেনে (তুমিও মুস ওয়ালার মতো শেষ হবে)।”

২০২৩ সালের মার্চে সালমান খানের ম্যানেজারের কাছে একটি হুমকিমূলক ইমেইল পাঠানো হয়। ওই ইমেইলে এক সাক্ষাৎকারে লরেন্স বিষ্ণোই সালমান খানের প্রতি যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন তার উল্লেখ ছিল।

বিষ্ণোই দাবি করেছেন, সালমান খান তার সম্প্রদায়কে হেয় করেছেন এবং তার উদ্দেশ্য অর্থ নয় বরং সালমানের ক্ষমা প্রার্থনা।

গত বছরের নভেম্বরে লরেন্স বিষ্ণোই পাঞ্জাবি গায়ক গিপ্পি গ্রেওয়ালকে সম্বোধন করে ফেইসবুকে একটি বার্তা পোস্ট করেছিলেন।

ওই পোস্টে লেখা ছিল, “আপনি সালমান খানকে ভাই মনে করেন, কিন্তু এখন আপনার ‘ভাই’য়ের আপনাকে বাঁচানোর সময় এসেছে। এই বার্তাটি সালমান খানের জন্যও— দাউদ তোমাকে বাঁচাবে এমন বিভ্রান্তিতে থেকো না; কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।”

এ বছর এপ্রিলে সালমানের বাড়ির বাইরে গোলাগুলি হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্যাংয়ের একজনকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু পুলিশি হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়। সেটি নিয়েও বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সালমান খানের ওপর রয়েছে দারুণ ক্ষোভ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত