Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

দ্বাদশ সংসদের যাত্রা শুরুর দিনে যা যা থাকছে

সংসদ
জাতীয় সংসদ ভবন
[publishpress_authors_box]

সব প্রস্তুতি সারা, বসতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন।

মঙ্গলবার সংসদের এই অধিবেশনে শুরুতেই স্পিকার নির্বাচন হবে, এরপর ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। এই নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।

সংসদ নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন সরকারের যাত্রাও শুরু করেছেন। প্রধান হুইপসহ হুইপদের নামও চূড়ান্ত হয়েছে।

এবারের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসন নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে ভোটের পর থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জেরবার তার দল।

গত সংসদে বিএনপি থাকলেও এবার দলটি নেই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ায় ভোট বর্জন করে তারা। একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষের আগে দলটির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগও করেছিলেন।

২০১৯ সালে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। আইন অনুযায়ী, ওই সংসদের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে।

এবার নির্বাচনের তিন দিন পর গত ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তার ২০ দিন পর অধিবেশনে বসতে যাচ্ছেন তারা।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় দ্বাদশ সংসদের অধিবেশনের শুরুতেই হবে স্পিকার নির্বাচন।

একাদশ সংসদের ধারাবাহিকতায় শিরীন শারমিন চৌধুরীই যে আবারও স্পিকার হচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়েছে। এখন বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা।

শিরীন শারমিন চৌধুরী আবারও স্পিকার হতে যাচ্ছেন।

শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ আবারও স্পিকার নির্বাচিত করবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় অধিবেশনের শুরুতে অর্থাৎ স্পিকার নির্বাচনের সময় তিনি সভাপতিত্ব করতে পারবেন না। তাই প্রথম অধিবেশন শুরু হবে বিদায়ী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে।

সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের কথা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে সংসদ একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করবে।

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, সাধারণ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠক শুরুর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্পিকার হিসেবে কোনও একজন সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করে সচিবকে সম্বোধন করে লিখিতভাবে জানাতে হবে। কাজটি করবেন সংসদের যে কোনও সদস্য।

ওই প্রস্তাবের সঙ্গে তৃতীয় কোনও সংসদ সদস্যের সমর্থন থাকতে হবে। স্পিকার হিসেবে নাম প্রস্তাবকারী দায়িত্ব নিতে সম্মত বলেও লিখিত থাকতে হবে।

কোনও সদস্য স্পিকার হিসেবে নিজের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না। অথবা অন্য কেউ তার নাম প্রস্তাব করলে তা সমর্থনও করতে পারবেন না। একাধিক ব্যক্তির নামও কোনও একক সদস্য প্রস্তাব করতে পারবে না।

সংসদের দিনের কার্যসূচিতে যে সদস্যের নাম প্রস্তাব রয়েছে, স্পিকারের চেয়ার থেকে তাকে আহ্বান করা হলে তিনি প্রস্তাবটি উত্থাপন বা প্রত্যাহার করতে পারবেন। বিধিতে এটাও বলা হয়েছে যে, এসময় কেবল এই বিষয়ের মধ্যেই তিনি তার বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখবেন।

যথাযথভাবে উত্থাপিত ও সমর্থিত প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হওয়ার পর ক্রমানুসারে ভোটে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনবোধে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কোনও প্রস্তাব গ্রহণ হয়ে গেলে সভাপতি বাকি প্রস্তাবগুলো (যদি থাকে) ভোটে না দিয়ে ঘোষণা করবেন যে, গ্রহণ করা প্রস্তাবে উল্লিখিত সদস্য স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন।

২০১৩ সালে ৪৬ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ স্পিকার হিসেবে মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হন শিরীন শারমিন। এনিয়ে টানা চতুর্থবার একই আসনে বসতে যাচ্ছেন সাবেক সচিব রফিকুল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে শিরীন শারমিন।

২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে যান তিনি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

স্পিকার নির্বাচনের পর সংসদের বৈঠক ২০ মিনিটের জন্য মুলতবি হবে। এসময় নতুন স্পিকারকে শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

শপথ শেষে নতুন স্পিকারের সভাপতিত্বে বৈঠক পুনরায় শুরু হবে। প্রথমেই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হবে। স্পিকারের মতোই হবে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন পদ্ধতি।

এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। তা উত্থাপনের পর সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেওয়া হবে। তারপরই সংসদে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তার ওই ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে গোটা অধিবেশনজুড়ে।

নতুন সংসদের যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে শিরীন শারমিন একদিন আগেই সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, “এবারের অধিবেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাষ্ট্রপতির ভাষণ। তিনি এবারই প্রথম সংসদে ভাষণ দেবেন। তার ভাষণের উপর জাতীয় সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন।”

সংসদ অধিবেশন কতদিন চলবে, তা আগেই ঠিক হয় কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে। স্পিকার এই কমিটির নেতৃত্ব দেন। এতে সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা সদস্য থাকেন।

শিরীন শারমিন জানান, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংখ্যা অনুযায়ী অধিবেশন কক্ষে আসন বিন্যাসও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

কে কোন আসনে

সরকারি দলের আসনের প্রথম সারির প্রথম স্থানটি থাকছে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তার পাশের আসনটি সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এবং তার পরের আসনটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে।

এ ছাড়া প্রথম সারিতে আসন পেয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সংসদ নেতার পেছনের সারির প্রথম আসনে সরকারি দলের প্রধান হুইপ নুর-ই- আলম চৌধুরী বসবেন।

জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষ। ফাইল ছবি

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসন জি এম কাদের এবং বিরোধীদলীয় উপনেতার আসন আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দলের প্রথম সারিতে বিরোধীদলীয় উপনেতার পাশের আসনটি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার পেয়েছেন।

তার পরের তিনটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে।

বিরোধীদলীয় নেতার পেছনের সারির প্রথম আসনে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বসবেন। এছাড়া বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের আশপাশে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আসন দেওয়া হয়েছে।

এবারের সংসদে আসন সংখ্যায় স্বতন্ত্রদের চেয়ে কম হলেও বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাচ্ছে জাতীয় পার্টি।

বিরোধী দল নির্বাচনের বিষয়ে শিরীন শারমিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কার্যপ্রণালী বিধির ২ (ট) ধারায় বলা আছে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত দল বা অধিসংঘের নেতাই বিরোধী দলের নেতা হবে।

“বর্তমান সংসদে সরকারী দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক দল বা অধিসংঘ বলতে শুধু জাতীয় পার্টিই রয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিতরা কোনও দল বা অধিসংঘের নয়। সেজন্য জাতীয় পার্টির নেতাই বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসতে যাচ্ছেন।”

এবারের সংসদে যারা নতুন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাদের জন্য সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে দুদিনের ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিও পালন করা হয়।

সেখানে নতুন সংসদ সদস্যদের জানানো হয়েছে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি, সংবিধান, পার্লামেন্টিরিয়ান প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর সর্ম্পকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত