কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্স, যেখানে একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের, প্রায় দু’সপ্তাহ পর সেখানে তল্লাশি চালিয়ে মানব দেহের টুকরো উদ্ধারের তথ্য মিলেছে।
কলকাতার সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, মঙ্গলবার বিকালে ভবনটির সেপটিক ট্যাংক তল্লাশি করে দুই দেশের পুলিশ। সেখান থেকে আনুমানিক ৪ কেজি টুকরো মাংস উদ্ধার করা হয়েছে।
তল্লাশি কাজে সহায়তাকারী এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তল্লাশির এক পর্যায়ে ট্যাংক থেকে টুকরো টুকরো মাংস পাওয়া যায়। কয়েকদিন ধরে পানিতে থাকা মাংসের টুকরোগুলো গলে যাচ্ছিল। এর মধ্যে চুল ও হাড়ের অংশও আছে।
দুই দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই সঞ্জিবা গার্ডেন্সে এই তল্লাশি চলে।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে মাংস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে তা মানুষের, না অন্য কোনও প্রাণীর, তা বলার সময় এখনও আসেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া তিন সদস্যের দলের সদস্যরা সেখানে ছিলেন।
হারুনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, সঞ্জিবা গার্ডেন্সের সুয়ারেজ লাইন এবং তার কাছেই ভাঙড় খালের ওপরে একটি কাঠের সেতুর কাছের একটি অংশে তল্লাশি চালাতে তারা পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে অনুরোধ করেন।
রবিবার কলকাতায় পৌঁছে হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে মামলা নিষ্পত্তি করা যাবে না। সে কারণে আমাদের মূল কাজ দুটি- লাশ বা অংশবিশেষ উদ্ধার ও অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা। তাদের সঙ্গে অন্য কোনও চক্র জড়িত কিনা সেটি খুঁজে বের করা।”
আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কলকাতায় গ্রেপ্তার আছেন একজন। ঢাকায় গ্রেপ্তার আছেন তিনজন। তবে যাবে খুনের হোতা বলা হচ্ছে, সেই আক্তারুজ্জামান শাহীন এখনও অধরা।
আনার হত্যার শিকার হয়েছেন বলে নানা সূত্রে তথ্য মিললেও লাশ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় ঢাকায় শেরেবাংলা নগর থানায় ৩৬৪ ধারায় হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ অনুযায়ী, আনারকে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরে গুম করার জন্য এমপি আনারের মরদেহের টুকরো কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার ১২ মে কলকাতায় গিয়েছিলেন। পরদিন তাকে সঞ্জিবা গার্ডেন্সের ওই ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তথ্য।
এরপর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটির বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জিহাদ হাওলাদার নামে এক বাংলাদেশিকে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জানিয়েছে এমপি আনারের লাশের টুকরো ফেলা হয়েছিল ভাঙ্গড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায়।
এরপর লাশের অংশবিশেষের সন্ধান পেতে গত তিন ধরে দফায় দফায় কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরান গাছা বাগজোলা খাল ও সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি কিছু।
ঢাকা থেকে ডিবি কর্মকর্তারা কলকাতায় পৌঁছনোর পর সঞ্জিবা গার্ডেন্সে তল্লাশি জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়।
বলা হচ্ছে, কলকাতার অভিজাত এলাকায় সঞ্জিবা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি শাহীন। তার পরিকল্পনায়ই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসাবে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তিনি আমানুল্লাহ নামে ভারতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এসেছিলেন।