“আমার নাম মোহাম্মদ। মানুষের আদলে সৌদি আরবের বানানো প্রথম পুরুষ রোবট আমি।”
ডিপফেস্ট মঞ্চে এই কথাগুলো বলছিল সৌদি আরবের প্রথম বহুভাষী পুরুষ রোবট, যার পুরো নাম অ্যান্ড্রয়েড মোহাম্মদ।
সৌদি আরব রাষ্ট্রীয়ভাবে এই রোবট প্রকল্প নিয়ে কাজ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ এআই জগতে সৌদি যে পিছিয়ে নেই, তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে এই রোবট বানিয়েছে তারা। কিন্তু এই সাফল্য ছাপিয়ে ভিন্ন কারণে আলোচনায় এই মানবাকৃতির রোবট।
হত ৪ মার্চ থেকে ৭ মার্চ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে হয়ে গেলো প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে বিশ্বের অন্যতম জমজমাট আসর ডিপফেস্ট। প্রযুক্তি খাতের তথ্য বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তাদের নিয়ে এই আয়োজনে ছিলেন এক লাখ ৭২ হাজার পরিদর্শক।
এআই বিওন্ড ইমাজিনেশন অর্থাৎ কল্পনাকে হার মানানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থিম নিয়ে এই আসর আয়োজন করে সৌদির ডাটা অ্যান্ড আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স কর্তৃপক্ষ।
সাদা আল্লখাল্লা গায়ে আর মাথায় লাল কেফিয়াহ পরে এই ডিপফেস্টের মঞ্চে আসে রোবট অ্যান্ড্রয়েড মোহাম্মদ। সবার সঙ্গে নির্ভুল আরবিতে কথাও বলে এই রোবট।
এর আগে নারী রোবট সারা বানিয়েছিল সৌদি আরব। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিউএসএস সিস্টেম এবার তাই পুরুষ রোবট নিয়ে এল।
কিন্তু এক নারী সাংবাদিকের গায়ে ‘আপত্তিকরভাবে’ স্পর্শ করার অভিযোগে এই রোবটকে নিয়ে চলছে বিস্তর আলাপ।
That is still harassment, on the part of whoever programs that robot or with whoever controls it.
— Ivanks ⎋ (@iVankshuu) March 5, 2024
অনুষ্ঠানে টিভি সাংবাদিক রাউইয়া আল-কাশেমির ঠিক পাশেই ছিল রোবটটি। যেভাবে প্রোগ্রাম করে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, সেভাবেই হাত নাড়ছিল। হালকা করে মাথাও নাড়ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে ঘটে যায় বিপত্তি।
এক হাত সামনে তুলে এগিয়ে দিল রোবটটি। ওই হাত সামনের নারীর নিতম্বে গিয়ে এমনভাবে ঠেকে যে একে অনেকটাই যৌন হয়রানি বা ইভটিজিংয়ের মতো মনে হয়েছে অনেকের কাছে।
এই ঘটনা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া সাত সেকেন্ডের ভিডিও দেখে কারও কারও পর্যবেক্ষণ বলছে, নারী সাংবাদিকের চেহারা দেখেও মনে হচ্ছে তিনি বিব্রত বোধ করছিলেন।
সোশাল মিডিয়া সাইট এক্সে এই ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টি মতামত চলেছে।
কেউ এই কাণ্ড নিয়ে মজা করে বলছেন, “এই রোবট প্রোগ্রাম করেছে কে?”
কেউ এক্স সাইটে লিখেছেন, “যেই এই রোবটকে প্রোগ্রাম করে থাকুক বা নিয়ন্ত্রণ করে থাকুক না কেন… এই ঘটনা হয়রানিমূলকই।”
একটু কটাক্ষ করে একজন লিখেছেন, “রোবটরাও তাহলে বিকৃতমনা হয়?”
তবে অনেকেই ওই মুহূর্তের ব্যাখ্যা করে এক্সে লিখেছেন, “রোবটটি সেখানে ওভাবে হাত নাড়াতে প্রোগ্রাম করা ছিল। আর ওই নারী বলা চলে ভুল জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন।”
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিউএসএস অবশ্য বলছে, এই রোবট কোনো মানুষের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বাধীন ভাবে চলছিল অর্থাৎ এর নিজের মতো নিজেকে পরিচালনার দক্ষতা রয়েছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ”দর্শনার্থী এবং সাংবাদিকরা যেন রোবটটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে।”
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওটি দেখেছে কিউএসএস। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, “মোহাম্মদ তার প্রত্যাশিত আচরণের বাইরে কিছু করেনি।”
তবে এরপর থেকে রোবটের কাছাকাছি আসা ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে জানিয়েছে কিউএসএস।