শিশুর মুখে মিষ্টি খাবার তুলে দিয়ে সব বাবা-মা অনেক আনন্দ পান। অতি আহ্লাদে তারা সন্তানকে ক্যান্ডি খাইয়ে দেন। কখনও হাতে ধরিয়ে দেন।
শিশুরা পছন্দের খেলনা না পেলে হাত-পা ছড়িয়ে জুড়ে দেয় কান্না। তখন তাদের শান্ত করতে বাবা-মা ওই ক্যান্ডির দিকেই হাত বাড়ান। আদরের বাচ্চাটির মুখে বাহারি ক্যান্ডি তুলে দিয়ে শান্ত করেন তাকে।
কিন্তু শিশুর মুখে এভাবে ক্যান্ডি তুলে দিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
বাড়ির শিশুর মুখে ভালোবেসেই মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ভালোবাসা তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে কি না তা নিয়ে আরও সাবধান থাকা দরকার বলে জানাচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভে সন্তান আসা থেকে শুরু করে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের এক হাজার দিন পর্যন্ত শিশুর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ে তাদের শরীরে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে দীর্ঘস্থায়ী কিছু রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ওই গবেষণায় বলা হয়, এই সময়ে শিশুর শরীরে শর্করার পরিমাণে ভারসাম্য থাকলে তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
এ নিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শ্রেয়া দুবে বলেন, “জন্মের পর প্রাথমিক খাদ্যাভ্যাস মানুষের স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী এবং গভীর প্রভাব ফেলে।
“ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুবই জরুরি। শৈশবের খাদ্যাভ্যাসই গোটা জীবনের স্বাস্থ্যের ভিত্তি হয়ে ওঠে।”
অতিরিক্ত চিনি ও চিনিযুক্ত পানীয় ডায়াবেটিসের আশংকা বাড়ায়, যা কি না টাইপ টু ডায়াবেটিসের বড় কারণ বলে জানালেন এই চিকিৎসক।
আপনার শিশুর শরীরে চিনি বেড়ে যাচ্ছে না তো?
শিশুদের চিনি জাতীয় খাবার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা তাদের এনার্জি বাড়ায়। এতে করে সঠিক ওজন বজায় থাকে।
একই সঙ্গে ডায়াবেটিস এবং হজম সংক্রান্ত ঝুঁকিও কমে আসে।
পেডিয়াট্রিক পালমোনোলজি ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ ড. ধীরেন গুপ্ত বলেন, “শৈশবেই কেউ উচ্চ চিনি যুক্ত খাদ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তাদের মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে।”
মুম্বাইয়ের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ড. রাহুল ভার্মা বলেন, “খাবারে থাকা সহজাত কার্বোহাইড্রেট (চিনি) শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে যথেষ্ট।
“গর্ভের শিশু এবং নবজাতকের মস্তিষ্ক প্রায় ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতিতে বৃদ্ধি পায়। এ সময় স্বাভাবিক চিনিই যথেষ্ঠ। তবে অতিরিক্ত চিনি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।”
অতিরিক্ত চিনি শরীরের কী কী ক্ষতি করে?
স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের বাড়তি ঝুঁকি
উচ্চ মাত্রায় চিনি গ্রহণ ওজন বৃদ্ধি এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এমনকি শিশুদের মধ্যেও। চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় শরীরে অদরকারি শর্করা সরবরাহ করে, যা শরীরে পুষ্টিহীন শক্তি প্রদান করে। এর ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় ও বিপাক ক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।
দাঁতের ক্ষতি
শিশুদের দাঁতের ক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো চিনি। মুখের ব্যাকটেরিয়া চিনিকে পুষ্টি হিসেবে গ্রহণ করে, তাতে অ্যাসিড তৈরি হয় যা দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করে। এর ফলে দাঁত ক্যাভিটিতে আক্রান্ত হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে
উচ্চ মাত্রায় চিনি গ্রহণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, যা শিশুদের শরীরে সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
শিশুদের খাবারে অতিরিক্ত চিনি এড়ানোর উপায় কী তাহলে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চকলেট, চিপস এগুলো থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
মিষ্টি জাতীয় খাবারের বদলে শিশুকে খেতে দিতে হবে তাজা ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন।
কোনো খাবারের মোড়কে সংযোজিত চিনির কথা লেখা থাকলে তা এড়িয়ে যেতে হবে। কোমল পানীয় শিশুদের একেবারেই না দেওয়া গেলে ভালো।
উৎসব ও যে কোনো অনুষ্ঠানে শিশুকে পরিমিত মিষ্টি খেতে দেওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলছে কি না তা নজরে রাখতে হবে বাবা-মাকেই।
মোদ্দা কথা হলো শিশুর জন্য সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হবে।