সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ এখন থেকে একটি স্থায়ী কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে। সংবিধানের ৯৩ এর দফা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেছেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মঙ্গলবার এ অধ্যাদেশ জারির কথা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে সুস্পষ্ট আইন বা নীতিমালা করার সাংবিধানিক নির্দেশনা থাকলেও স্বাধীনতার পর এতদিনেও তা হয়নি। রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এসে এখন স্থায়ী কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলো।
অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রণীত এ অধ্যাদেশ।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে একটি স্থায়ী কাউন্সিল থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাদেশে বলা হয়, এটি ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ নামে অভিহিত হবে। প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের চেয়ারপারসন হবেন।
সাত সদস্যের সমন্বয়ে এ কাউন্সিলে সদস্য থাকবেন- আপিল বিভাগে কর্মরত বিচারকদের মধ্যে থেকে প্রবীণতম বিচারক; হাই কোর্ট বিভাগে (বিচার কর্মবিভাগ থেকে নিযুক্ত ব্যতিত) কর্মরত বিচারকদের মধ্যে থেকে কর্মে প্রবীণতম বিচারক; বিচার কর্মবিভাগ থেকে নিযুক্ত হাই কোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক; কাউন্সিলের চেয়ারপারসন কর্তৃক মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক; অ্যাটর্নি জেনারেল এবং চেয়ারপারসন কর্তৃক মনোনীত একজন আইনের অধ্যাপক বা আইন বিশেষজ্ঞ।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পদাধিকারবলে কাউন্সিলের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি এবং তার দপ্তর কাউন্সিলের কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবেন।
তবে শর্ত রয়েছে, রেজিস্ট্রার জেনারেল নিজে বিচারক পদে প্রার্থী হলে সুপ্রিম কোর্টে রেজিস্ট্রিতে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী তার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাউন্সিলের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অধ্যাদেশে বলা হয়, কাউন্সিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাইপূর্বক সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রণয়ন করবে। সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ প্রদানের লক্ষে কাউন্সিল সংবিধানে বর্ণিত যোগ্যতার সম্পূরক হিসাবে বিবেচনা করবে।
হাই কোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে প্রার্থীর বয়স কোনোভাবেই ৪৫ বছরের নিচে হবে না।
হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ বিষয়ক সুপারিশের জন্য কাউন্সিল সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীন এ অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে পারবে; এ ছাড়াও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারিত ফরমে প্রার্থীদের থেকে দরখাস্ত আহ্বান করবে।
দরখাস্তকারীদের থেকে যাচাই-বাছাই করে কাউন্সিলের বিবেচনায় যোগ্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। এছাড়া কাউন্সিল সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত প্রার্থীদের সাক্ষৎকার গ্রহণ এবং নির্ধারিত নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসঙ্গত সংখ্যক প্রার্থীর নামসহ একটি তালিকা সুপারিশ আকারে প্রণয়ন করবে।
হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার বিষয়টি অধ্যাদেশে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, এ অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কাউন্সিল ফরম সংশোধন করতে পারবে। সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা অধ্যাদেশটি ইংরেজিতে অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশ করতে পারবে। বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে।
অন্যদিকে, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের আওতায় আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগে কাউন্সিল নিয়োগযোগ্য বিচারকের শূন্যপদের সংখ্যার আলোকে হাই কোর্ট বিভাগে কর্মরত জ্যেষ্ঠ বিচারকদের যোগ্যতা নিরূপণ করে তালিকা করবে।
নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসঙ্গত সংখ্যক নামসহ একটি তালিকা সুপারিশ আকারে প্রণয়ন করা হবে।
এরপর কাউন্সিলর কর্তৃক প্রণীত সুপারিশ প্রধান বিচারপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের দফা (১) অনুসারে পরামর্শরূপে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন।
এরপর প্রধান বিচারপতির পরামর্শ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ দেবেন। প্রধান বিচারপতির পরামর্শে সঙ্গে কোনও ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি দ্বিমত পোষণ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট তথ্য এবং কারণ উল্লেখ করে বিষয়টি পুনঃরীক্ষণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে ফেরত পাঠাতে পারেন।
এ অধ্যাদেশে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের অধীন হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ সম্পর্কিত এই অধ্যাদেশের বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এই অধ্যাদেশে যা কিছুই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই অধ্যাদেশের কোনও বিধান প্রযোজ্য হবে না।