ঢাকার বংশালের মিরনজুল্লাহ কলোনির হরিজনদের জন্য বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করার আগে উচ্ছেদ না করতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
একইসঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, “আগে জায়গা দিন, পরে উচ্ছেদ করেন।”
মিরনজুল্লাহ হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৩ জুন উচ্ছেদ অভিযানের ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটার কো) জারি করেছিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ না করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
পরে হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সেই আবেদন আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা অবস্থাতেই মিরনজুল্লাহ হরিজন কলোনিতে নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে হরিজন কলোনিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েন করতে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সিটি করপোরেশন চিঠি দেয়। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে বলা হয়।
নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর বিষয়ে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে কলোনিতে বসবাসরত হরিজনদের পক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ সিটি করপোরেশনের অভিযানের ওপর স্থিতাবস্থা দেন। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে আদেশ দিল আপিল বিভাগ।
আদালতে হরিজনদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মনজ কান্তি ভৌমিক ও আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস। সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মুরাদ রেজা।
আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, “দুইশ-আড়াইশ বছর ধরে হরিজন সম্প্রদায় এখানে বসবাস করে আসছে। বংশ পরম্পরায় তারা এখানে থাকছে। কিন্তু কোনও নোটিশ ছাড়া তাদের উচ্ছেদ করছে সিটি করপোরেশন। তাদের পুনর্বাসন না করে এই উচ্ছেদ অভিযানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করি।”
এদিকে আপিল বিভাগে আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা অবস্থাতে বুধবার দুপুরে মিরনজুল্লাহ কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা স্থানীয় কাউন্সিল আউয়াল হোসেনের লোকজন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
