Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ঘুষ নিলে আর ছাড় পাবেন না ভারতের এমপিরা

indian-supreme-court
[publishpress_authors_box]

ভারতে এখন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য ও বিধায়করা ঘুষ নিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। সোমবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ৭ বিচারপতির বেঞ্চ এমন রায় দিয়েছে।

১৯৯৮ সালের জেএমএম রায়কে বাতিল করে বেঞ্চ জানায়, অর্থের বিনিময়ে ভোট বা বক্তৃতা দিলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়কে স্বাগত জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোশাল মিডিয়া এক্সে লেখেন, “সুপ্রিম কোর্টের অসাধারণ রায়। এটি স্বচ্ছ রাজনীতিকে নিশ্চিত করবে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াবে।”

আগে পার্লামেন্ট সদস্য ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে ভোট বা বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মামলা করা যেত না। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত পার্লামেন্ট সদস্য ও বিধায়কদের রক্ষা করবে না তাদের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিকার। দুর্নীতি দমন আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।

কী বলা হয়েছে রায়ে

রায়ে বলা হয়, ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধ সংঘটিত হয়। ঘুষ দেওয়ার পর সেই ব্যক্তি ভোট বা বক্তৃতা দিয়েছিলেন কিনা- এসব বিষয় আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকি ঘুষ কোথায় দেওয়া হয়েছে তাও বিবেচ্য নয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনপ্রণেতাদের ঘুষ গ্রহণ প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তি ধ্বংস করে।

আদালত বলেছে, ঘুষ নিয়ে ভোট দেওয়া বা পার্লামেন্টে কোনও দলের পক্ষে কথা বলা এসব কাজ আইনপ্রণেতাদের কর্তব্যের সঙ্গে মেলে না। উল্টো এগুলো নিয়মের লঙ্ঘন। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে পার্লামেন্টের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ভাঙে ও গণতন্ত্র দুর্বল হয়।

পার্লামেন্টের সুযোগ-সুবিধা দাবি করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট দুটি নির্দিষ্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এই পরীক্ষাগুলো নির্ধারণ করতে সাহায্য করে যে, কোন কার্যকলাপ একজন আইনপ্রণেতার পদবীর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তা পার্লামেন্টের সুযোগ-সুবিধার আওতায় পড়ে কিনা।

প্রথমত, কাজটি অবশ্যই দপ্তরের সামগ্রিক কার্যকারিতার অংশ হতে হবে। এর অর্থ হলো, কাজটি আইনপ্রণেতার দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, কাজটি অবশ্যই একজন আইনপ্রণেতার পদবীর বাধ্যবাধকতা ও কর্তব্যের অংশ হতে হবে। এর অর্থ হলো, কাজটি আইনপ্রণেতার পক্ষ থেকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রয়োজনীয়।

সীতা সোরেনের আবেদন

এই রায়টি ২০১২ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) নেত্রী সীতা সোরেনের করা এক আপিলের প্রেক্ষাপটে এসেছে। সীতা সোরেন ২০১২ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। সিবিআই (গোয়েন্দা সংস্থা) এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে। সীতা সোরেন ঝাড়খন্ড হাইকোর্টে অভিযোগপত্র বাতিলের আবেদন করেন, কিন্তু আদালত তার আবেদন খারিজ করে। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

সীতা সোরেন হলেন জেএমএম প্রধান ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবু সোরেনের পুত্রবধূ। জেএমএম ঘুষের অভিযোগে তিনিও অভিযুক্ত ছিলেন। ১৯৯৩ সালে পি. ভি. নরসিমা রাও সরকারের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা ভোট ঠেকাতে ৪ জেএমএম বিধায়ক ও অন্য আট পার্লামেন্ট সদস্যকে ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।

ঘুষ খেয়ে তারা ভোটও দিয়েছিলেন। কিন্তু কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হলে তারা মামলা থেকে রেহাই পেতে পার্লামেন্টের বিশেষ অধিকার খাটিয়েছিল। কারণ ভোটটি হয়েছিল পার্লামেন্টের ভেতরে।

গত অক্টোবরে রায় স্থগিত রেখে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মৌখিকভাবে বলেছিল, সংবিধানের ১০৫(২) বা ১৯৪(২) ধারার অধীনে কেবল ঘুষ দেওয়ার ঘটনাটি পার্লামেন্টের বাইরে ঘটেছিল বলে আইনপ্রণেতারা এর দায় এড়াতে পারবেন না।

তখনই আদালত মৌখিকভাবে জানিয়েছিল, ঘুষের অপরাধ কোথায় (পার্লামেন্টের ভেতরে বা বাইরে) হয়েছে তা দুর্নীতি দমন আইনের অধীনে মামলা চালানোর ক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য তৈরি করে না। সেটা একজন বিধায়ক বা পার্লামেন্ট সদস্যই হোক না কেন।

এই মামলায় সরকারের অবস্থান ১৯৯৮ সালে জেএমএম ঘুষের মামলায় বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) এস.সি. আগরওয়ালের মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। বিচারপতি আগরওয়াল স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, একজন বিধায়ক বা পার্লামেন্ট সদস্যের বিশেষ অধিকার ঘুষ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত