Beta
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সায়েন্স ল্যাব

বিকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দফায় দফায় ধরে চলা এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৬ জন।  শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, অভিভাবক ও গণমাধ্যমকর্মীরাও।

বুধবার দুপুর ৩টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে বিকালে পৌনে ৫টার দিকে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে দু’পক্ষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেলেও পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীও। সায়েন্স ল্যাব মোড়ের আশপাশের সড়কে সন্ধ্যার পরেও স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ মোট ৭ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ২০ দিন বন্ধ থাকার পর আজই শুরু হয় সিটি কলেজে ক্লাস। একই দিন ‘স্বৈরাচারের সহযোগী শিক্ষকদের’ পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সেই হাতাহাতির জের থেকেই আজকের সংঘর্ষ।

আহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, “বেশিরভাগই ইটের আঘাতে এসেছে বলে শুনেছি। এর মধ্যে কেউ কেউ গুরুতর আহত। তাদের মাথা ফেটে গেছে।”

সংঘর্ষের সূত্রপাত

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটি বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাতাহাতি হয়।

সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই হাতাহাতির জের ধরে বুধবার সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা গিয়ে সিটি কলেজে ভাঙচুর চালায়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তারা সায়েন্স ল্যাবের দিকে এগিয়ে যান। তখন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে সায়েন্স ল্যাবের কাছাকাছি অবস্থান নেন।

এরই মধ্যে দুপুরের দিকে ঢাকা কলেজের দুটি বাসে সায়েন্সল্যাব এলাকায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের বাসে হামলা চালিয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। দফায় দফায় চলে পাল্টাপাল্টি হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছোড়ার পর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

কিন্তু তার কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী সিটি কলেজে প্রধান ফটকে এসে আবারো ভাঙচুর শুরু করেন। নিচ থেকে সিটি কলেজের ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন।

ক্ষুব্ধ হয়ে ভবনের ভেতরে আটকাপড়া সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা ওপর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করলে কলেজটির সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী, অভিভাবক ও পথচারীরাও আহত হন।

এসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কলেজের ভেতরে ঢুকতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা তাদের ঢুকতে দেননি।

অন্যদিকে কলেজের ভেতরে আটকাপড়া শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিভাবকরাও সিটি কলেজের সামনে অবস্থান নেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা।

কেন সংঘর্ষে জড়ালেন জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “গতকালের ইস্যু গতকাল চলে গেছে, আজ তারা কেন আমাদের বাস ভাঙচুর করবে? সেটার প্রতিবাদ না করলে আজ দুটো ভেঙেছে, কাল চারটা ভাঙবে। সেটারই প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা।”

অন্যদিকে একই অভিযোগ সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। ভবনের ভেতরে আটকে থাকা এক শিক্ষার্থী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কিছু হলেই তারা পাওয়ার (ক্ষমতা) দেখাতে আমাদের কলেজে ভাঙচুর করে। আমি তো বলব, কোনও এক অজানা কারনে প্রশাসনও তাদের সাইডেই থাকে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাবোই।”

তবে, এ সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের কর্তৃপক্ষ কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, “শুরু থেকেই আমরা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি। এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে, তবে এই ঘটনা কেন্দ্র করে আশপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সেটি নিয়ে কাজ করছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত