Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
দর্শন বনাম বিজ্ঞান

জীবনের সব বড় প্রশ্নের উত্তর কার কাছে আছে

প্রতীকী ছবি

দার্শনিক জুলিয়ান ব্যাগিনির আশঙ্কা, বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা যত বেশি জানছি, বিজ্ঞানীরা যেন ততই জ্ঞানের অন্যান্য শাখার ওপর তাদের ছাপ মেরে দেওয়ার জন্য দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। এ বিষয়ে তিনি তার সমসাময়িকদের মধ্য থেকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউসের সঙ্গে একটি সংলাপ করেন। দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদে তাদের সেই সংলাপের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেছেন মাহবুবুল আলম তারেক।

জুলিয়ান ব্যাগিনি: বিজ্ঞান মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের যা বলেছে তার সামান্যতম একটা অংশও যিনি বুঝতে পেরেছেন তিনি মহাজগত এবং বিজ্ঞান নিয়ে বিস্মিত না হয়ে থাকতে পারবেন না। যখন পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে মানবিক জ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের তুলনা করা হয়, তখন বিজ্ঞানীদের জন্য আত্মতৃপ্তি বোধ করা সহজ এবং আমাদের বাকি সকলের কিছুটা ঈর্ষা বোধ হওয়াও সম্ভব। বিশেষত দার্শনিকরা বিজ্ঞানীদের নিয়ে ঈর্ষায় ভুগতে পারেন, কারণ আমাদের চেয়ে তাদের অর্জনগুলো খুব স্পষ্ট এবং অকাট্য হয়! নিজের জ্ঞানের শাখার মূল্য ক্রমাগত ন্যায্য বলে প্রমাণ করার দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারাটা কতই না চমৎকার।

তবে আমি ভাবি যে, বিজ্ঞান তার নিজের ক্ষেত্র ছাপিয়ে জ্ঞানের অন্য ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ার মতো সমস্যায় ভোগে কিনা। কেননা অনেক কিছু অর্জন করেও সন্তুষ্ট হতে না পেরে, কিছু বিজ্ঞানী জ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও হস্তক্ষেপ করতে চান।

দর্শনের সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমি মালিকানা বোধ করি না। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, অনেক দার্শনিক বিষয় বড় হয়ে উঠতে পারে, নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে পারে। এক সময় বিজ্ঞান ছিল প্রাকৃতিক দর্শন এবং মনোবিজ্ঞান বসে ছিল অধিবিদ্যার পাশে। কিন্তু মানুষের অস্তিত্বের এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা শুধু বিজ্ঞান দিয়ে বোঝা সম্ভব না। যেমন, শুধু তথ্য কিভাবে নৈতিকতার বিষয়টির সমাধান দিতে পারে তা আমি দেখতে পাই না।

আপনার বলা এবং লিখিত কিছু বিষয় থেকে মনে হয় যে, বিজ্ঞানের সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাভিলাষ কিছুটা আপনি নিজের মধ্যেও লালন করেন। সুতরাং আমাকে বলুন, দর্শনের ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচিত প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞান কতটুকু দিতে পারে এবং কতটুকু পর্যন্ত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ?

লরেন্স ক্রাউস: বিজ্ঞান সম্পর্কে উদার শব্দগুলোর ব্যবহার এবং আপনার উদার মনোভাবের জন্য ধন্যবাদ। আমার সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাভিলাষ বিষয়ে আপনার যে অনুভূতি তাতে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। আমি একে সাম্রাজ্যবাদ হিসাবে দেখছি না। বিজ্ঞান কেবল উত্তরযোগ্য এবং যেগুলো উত্তরযোগ্য নয় এমন প্রশ্নের মধ্যে পার্থক্য করে। প্রথম অনুমান, সমস্ত উত্তরযোগ্য প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান তথা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে অর্জিত জ্ঞান, ওরফে বিজ্ঞানের আওতায় চলে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, নৈতিকতার প্রশ্নে বলা যায়, বিজ্ঞান নৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তি সরবরাহ করে, যা বোধগম্য হয় কেবলমাত্র যদি তা যুক্তির ভিত্তিতে গৃহীত হয়, যে যুক্তি নিজেই আবার অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞানগত প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। কাজের পরিণতি সম্পর্কে আমি মনে করি, জ্ঞান ছাড়া শুধু “যুক্তি” একাকী অর্থহীন, যে জ্ঞান অবশ্যই অভিজ্ঞতাগত প্রমাণের ভিত্তিতে হওয়া উচিৎ।

আমি যদি না জানি যে, আমার কাজগুলো কী উৎপাদন করবে তবে আমি সেগুলো নৈতিক কিনা সে সম্পর্কেও কোনও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। চূড়ান্ত বিচারে, আমি মনে করি নিউরোবায়োলজি ও বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের বুঝকে কিছু সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জৈবিক গড়নে পর্যবসিত করবে।

প্রধান দার্শনিক প্রশ্নগুলোর মধ্যে সেগুলোই বেড়ে উঠে যেগুলো নিজ বাড়ি ছেড়ে যায়। এটি পদার্থবিজ্ঞান এবং মহাজাগতিক বিদ্যার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। উদাহরণস্বরূপ, কারণ ও ফলাফল এবং কিছু আছে (something) এবং কিছু নাই (nothing) সম্পর্কিত ছদ্ম দার্শনিক বিতর্ক এর খুব ভালো উদাহরণ।

“অস্তিত্বহীনতা” এর অর্থ কী তা নিয়ে মুখ নীল না হওয়া পর্যন্ত কেউ বিতর্ক করতে পারে, কিন্তু এটি একটি আকর্ষণীয় দার্শনিক প্রশ্ন হওয়ার মতো মনে হলেও আমার মতে এটি বস্তুত অর্থহীন। এই প্রশ্ন মহাবিশ্বের নানা জিনিস আসলে কিভাবে তৈরি হয়েছে এবং বিবর্তিত হয়েছে সে সম্পর্কে কোনও অন্তর্দৃষ্টি দেয় না, যা নিয়েই বস্তুত একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমার আগ্রহ।

জুলিয়ান ব্যাগিনি:
ইংরেজ দার্শনিক জুলিয়ান ব্যাগিনি একাধারে সাংবাদিক ও লেখক। তিনি ‘দ্য ফিলোসফারস’ সাময়িকীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ পাঠকের উপযোগী দর্শন বিষয়ক বিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক।

জুলিয়ান ব্যাগিনি: আমি আপনার চিন্তাগত অবস্থানের সঙ্গে আপনার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সহানুভূতি অনুভব করছি। আমি একমত যে, অধিবিদ্যার (Metaphysics) অনেক প্রচলিত প্রশ্নের উত্তর এখন বিজ্ঞানীরাই সর্বোত্তমভাবে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং আপনি “কেন কিছুই না থাকার বদলে কিছু আছে? (Why is there something rather than nothing?)” এই প্রশ্ন নিয়ে চমৎকার বিতর্ক করেছেন।

তবে আমরা কিছু একটা হারিয়ে ফেলি যখন আমরা বলি, আপনিও যেমন বলেন, “প্রধান দার্শনিক প্রশ্নগুলোর মধ্যে সেগুলোই বেড়ে উঠে যেগুলো নিজ বাড়ি ছেড়ে যায়”। আমি মনে করি আপনি এটি বলেছেন কারণ আপনি এই নীতিটি সমর্থন করেন যে, মূল পার্থক্যটি হলো— উত্তরযোগ্য অভিজ্ঞতামূলক প্রশ্নগুলো এবং উত্তরহীন অনুভূতিমূলক প্রশ্নগুলোর মধ্যে।

আমার মত হলো, প্রধান দার্শনিক প্রশ্নগুলো হলো সেগুলোই যেগুলো নিজের বাড়ি ত্যাগ করা ছাড়াই বড় হয়, যেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো সমস্ত তথ্য থাকা অবস্থায়ও উত্তরহীন থেকে যায়। নৈতিক প্রশ্নগুলো এর প্রধান উদাহরণ। কোনও বাস্তব আবিষ্কার কখনোই ঠিক বা বেঠিকের প্রশ্ন নিষ্পত্তি করতে পারেনি।

তবে তার মানে এই নয় যে, নৈতিক প্রশ্নগুলো ফাঁপা প্রশ্ন বা ছদ্ম প্রশ্ন। আমরা সেগুলো সম্পর্কে আরও ভালোভাবে চিন্তা করতে পারি এবং নতুন তথ্য জানার মাধ্যমে আরও তথ্যবহুল বিতর্ক করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা পশুদের নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে আগে যা ভাবতাম তাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, কারণ আমরা পশুদের চেতনা বা জ্ঞান সম্পর্কে আরও জানছি।

অসম্মানজনকভাবে যাকে বিজ্ঞানবাদ বলা হয় তা জোর দিয়েই বলে যে, যদি কোনও প্রশ্ন বৈজ্ঞানিক সমাধানের পক্ষে উপযুক্ত না হয় তবে তা মোটেই গুরুতর প্রশ্ন নয়। আমার উত্তর হলো— মানব জীবনের একটি অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট্য হলো, আমরা এমন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি যেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে সমাধানযোগ্য নয়। তবে আমরা সেগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারি, সর্বোত্তমভাবে বুঝতে পারি এবং আমরা এটা করতে পারি মনের কিছু দৃঢ়তা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, আপনি হয়ত এটা গ্রহণ করবেন না এবং আপনি বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিরই সমর্থন করেন। তাই কি?

লরেন্স ক্রাউস: আমিও, এমনকি আপনার অবস্থানের প্রতি আপনার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সহানুভূতিশীল। আমি মনে করি, বাস্তব ঘটনার উপর প্রতিফলন বা বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে দার্শনিক আলোচনা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারে, কিন্তু শেষবিচারে অভিজ্ঞতামূলক উদঘাটনের (empirical exploration) মধ্য দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই আসলে বাস্তব সত্য সম্পর্কে জানা যায়।

আমি আপনার সঙ্গে একমত যে, মানব জীবনের এমন অনেক দিক আছে যার জন্য এমন কিছু ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগে যেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে মোকবেলা করা বা বোঝা সম্ভব নয়। মানবিক বিষয়-আশয় এবং মানুষদেরকে শুধু যুক্তি দিয়ে বোঝা যায় না। এমনকি অভিজ্ঞতাগত প্রমাণের মাধ্যমেও মানুষকে সব পর্যায়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া যায় না।

আমি বলেছি যে, আমি মনে করি, লুইস ক্যারল যে এলিসের মাধ্যমে সকালের নাশতার আগে বেশ কয়েকটি অসম্ভব বিষয়কে বিশ্বাস করার প্রয়োজনীয়তার পরামর্শ দেন তা সঠিক ছিল। সকালে বিছানা থেকে নামার জন্য আমরা সকলেই প্রতিদিন এটি করি— সম্ভবত আমরা আমাদের চাকরি, বা স্বামী/স্ত্রীকে বা নিজেদেরকেই পছন্দ করি ওই বিষয়টির জন্য।

আমি যেখানে দ্বিমত পোষণ করতে পারি তা হলো, কতটুকু সময় পর্যন্ত এটি অপরিবর্তনীয় থাকে। আজ যা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় নয় কাল তা সেরকম নাও থাকতে পারে। অন্তর্দৃষ্টি কোথা থেকে আসবে তা আমরা জানি না, তবে এই না জানাটাই আবিষ্কারের দুঃসাহসিক যাত্রাকে এতটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এবং আমি মনে করি বাস্তব তথ্যমূলক আবিষ্কার এমনকি নৈতিক প্রশ্নেরও সমাধান করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, সমকামিতার কথা বলা যায়। প্রস্তরযুগের শাস্ত্রগুলো হয়ত বলতে পারে যে সমকামিতা রুচির “বিকৃতি”। কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিদের মধ্যে সমকামিতা আবিষ্কারের পর বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবেই মেনে নেওয়া হয়েছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিদের একটা ছোট অংশের মধ্যেও সমকামিতা রয়েছে। আর এটা সম্ভবত জিনগত ত্রুটির কারণে হয়, যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং বিবর্তনে এর কোনও নেতিবাচক প্রভাবও নেই। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, এর একটা জৈবিক ভিত্তি আছে, যা ক্ষতিকারক নয় এবং প্রকৃতিগতভাবে “অন্যায়”ও নয়।

প্রকৃতপক্ষে, আমি মনে করি, আপনি বিজ্ঞানের প্রভাব সম্পর্কে আসলে এই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন, যখন আপনি যুক্তি দেন যে, অ-মানবীয় জ্ঞান তথা পশুদের চেতনা বা বোধশক্তি সম্পর্কে আমাদের গবেষণার ফলে নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে।

আমি স্বীকার করি আমি সন্তুষ্ট হয়েছি এটা জেনে যে, “কেন কিছুই না থাকার বদলে কিছু আছে?” এই প্রশ্নটি যে বিজ্ঞানীরাই সবচেয়ে ভালোভাবে আলোচনা করেছেন, সে ব্যাপারে আপনি একমত হয়েছেন। তবে, এই বিষয়ে, আমি যেমনটা যুক্তি দিয়েছি যে, জীবন ও জগত সম্পর্কে “কেন” প্রশ্নগুলো আসলে হবে “কিভাবে” প্রশ্ন। আপনিও কি একমত হবেন যে, সকল “কেন” প্রশ্নের কোনও অর্থ নেই, কারণ এমন প্রশ্নে আগাম ধরে নেওয়া হয় যে সবকিছুরই একটা “উদ্দেশ্য” থাকতে হবে, যা আসলে নাও থাকতে পারে?

জুলিয়ান ব্যাগিনি: এখন যে বিষয়টিকে অবাস্তব প্রশ্ন হিসাবে দেখা হচ্ছে, বিজ্ঞান হয়ত কোনও একদিন তার জবাব দিতে পারবে এমন সম্ভাবনা অস্বীকার করা অবশ্যই বোকামি হবে। তবে বিজ্ঞান কতদূর যেতে সক্ষম সে সম্পর্কে যথাযথভাবে সংশয়ী হওয়াও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর নয়ত আমরা গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক বিষয়গুলো খুব বেশি তাড়াতাড়ি এবং অকালেই বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দিতে পারি।

সমকামিতা নিয়ে আপনার দেওয়া উদাহরণটির কথাই ধরুন। আমি একমত যে, সেকেলে বা পশ্চাৎপদ চিন্তার কারণেই এটাকে ‘‘বিকৃতি’’ বা ‘‘অপরাধ’’ মনে করা হয়। কিন্তু আপনি যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন— বিজ্ঞান বলে যে সমকামী আচরণ “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক”, “বিবর্তনেও এর কোনও নেতিবাচক প্রভাব নেই”, এটি “জৈবিকভাবে স্বাভাবিক” এবং “ক্ষতিকারক নয়” সুতরাং আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে, এটি “প্রকৃতিগতভাবে ভুল বা অপরাধ নয়”।

এতে আপনি ন্যায্যতার নৈতিক ও বৈজ্ঞানিক ধরনকে গুলিয়ে ফেলেছেন। সমকামিতা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, তবে তা কোনও বৈজ্ঞানিক কারণে নয়। ঠিক এবং বেঠিক কেবল বিবর্তনীয় প্রভাব এবং প্রাকৃতিক হওয়া না হওয়া দিয়ে নির্ধারিত হয় না।

উদাহরণস্বরূপ দাবি করা হয় যে, ধর্ষণ একটা প্রাকৃতিক বিষয় এবং এর বিবর্তনীয় সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু এই দাবি করা বিজ্ঞানীরা এটাও জোর দিয়ে বলেন যে, প্রাকৃতিক বলেই ধর্ষণ কোনও বৈধ কাজ হয়ে যায় না।

একইভাবে মানুষের স্বামী/স্ত্রী বা যৌনসঙ্গীর প্রতি যৌন অবিশ্বস্ততাকেও প্রাকৃতিক ব্যাপার বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ কোনও যৌন আচরণকে বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক বলে দেখে বলেই যে, আমাদেরকে তা নৈতিকভাবে গ্রহণ করে নিতে হবে তা তো নয়। এসব বিষয়ে বিজ্ঞান একদিন দার্শনিকদের চেয়ে আরও বাস্তবোচিত উত্তর দিতে পারবে তা মেনে নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তাই বলে তো আর সময় হওয়ার আগেই এসব বিষয় পুরোপুরি বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেওয়া যায় না।

লরেন্স ক্রাউস:
লরেন্স ক্রাউস কানাডিয়ান-আমেরিকান তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও কসমোলজিস্ট। তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটি, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘দ্য অরিজিনস প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পরিচালক হিসেবে মহাবিশ্ব সংক্রান্ত মৌলিক প্রশ্নগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

লরেন্স ক্রাউস: আবারও বলছি, আপনার সঙ্গে আমার শুধুমাত্র একটা সূক্ষ্ম মতবিরোধ আছে। আমাদের একটি বুদ্ধিমত্তা আছে এবং আমরা সামাজিক সংহতির জন্য আমাদের নানা জৈবিক প্রবণতাকে দমিয়ে রাখতে পারি। তবে আমি মনে করি যে, বিজ্ঞান আমাদের নৈতিক বিশ্বাসগুলোকে হয় সংশোধন করতে বা নির্ধারণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যৌন অবিশ্বস্ততা, যা জীববিজ্ঞানের একটি বাস্তবতা, ফলে যে কোনও চিন্তাশীল ব্যক্তিই এই ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি লালন করবেন এবং একে চরম কোনও অপরাধ হিসেবে গণ্য করবেন না।

অধিকন্তু, অনেক নৈতিক বিশ্বাস সমাজভেদে ভিন্ন হয়। তার মানে মানুষ নৈতিকতা অনেকটা নিজের সমাজের সাংস্কৃতিক আচার-আচরণ থেকে শেখে এবং তাই তা মনস্তাত্বিক বিষয়। তবে নীতি-নৈতিকতার কিছু বিষয় আছে সার্বজনীন এবং যে কারণে তা একেবারেই স্বভাবগত বিষয়, স্নায়ুজীববিজ্ঞানের বিষয়। সবকিছুতেই নৈতিক বিচার-বিবেচনা করার প্রবণতা মানুষের পুরোপুরি স্বাধীন ইচ্ছা আছে বলে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসের কারণে তৈরি হয়, যা আমি নির্বুদ্ধিতা বলে মনে করি।

এবার প্রসঙ্গ বদলানো যাক। আমি স্বীকার করছি যে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি এটা জেনে যে “কেন কিছুই না থাকার বদলে কিছু আছে?” এই প্রশ্নটি যে বিজ্ঞানীরাই সবচেয়ে ভালোভাবে আলোচনা করতে পেরেছে সে ব্যাপারে আপনি একমত হয়েছেন। তবে আমি আরও সাধারণভাবে দাবি করি যে, শুধুমাত্র অর্থপূর্ণ “কেন” প্রশ্নগুলো আসলে “কিভাবে” প্রশ্ন। আপনি কি একমত?

বিষয়গুলোকে প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য একটা উদাহরণ দেই। জ্যোতির্বিদ জোহানেস কেপলার একটি গুরুত্বপূর্ণ “কেন” প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ১৫৯৫ সালে দাবি করেছিলেন— আমাদের সৌর জগতে গ্রহের সংখ্যা ছয়টিই হলো কেন?

তিনি বিশ্বাস করতেন, উত্তরটি পাঁচটি প্লেটোনিক সলিডের মধ্যে রয়েছে যাদের মুখগুলো নিয়মিত বহুভুজ— ত্রিভুজ, স্কোয়ার ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে, এবং যাকে মুখের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ক্ষেত্রগুলো দিয়ে সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রগুলো যদি গ্রহগুলোর কক্ষপথকে পৃথক করে, তবে তার মতে, সম্ভবত সূর্য থেকে তাদের তুলনামূলক দূরত্ব এবং তাদের সংখ্যা, গভীরভাবে উপলব্ধির জায়গা থেকে, ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রকাশ হিসাবে দেখা যেতে পারে।

“কেন” তখন অর্থবহ ছিল কারণ এর উত্তর মহাবিশ্বের উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছিল। এখন, আমরা বুঝতে পারি যে প্রশ্নটি অর্থহীন। আমরা এখন জানি যে, গ্রহ শুধু ছয়টি নয় আরও বেশি, এছাড়া আমাদের সৌরজগতটিও অনন্য নয়, আবার একেবারে সাধারণও নয়। এরপরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, “আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা যা আছে তা কিভাবে হলো?”

উদাহরণস্বরূপ, এই প্রশ্নের উত্তর মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করতে পারে। তার মানে “কেন” প্রশ্ন “কিভাবে” প্রশ্ন হয়ে উঠেছে কেবল তাই নয়, বরং “কেন” এর কোনও কার্যকর কোনও অর্থও আর নেই। কারণ কেন প্রশ্নে আগাম ধরে নেওয়া হয় যে, সবকিছুরই একটা উদ্দেশ্য থাকতে হবে যার আসলে কোনও প্রমাণ নেই এবং জীবন ও জগতের একটা উদ্দেশ্য আছে এই ধারণাও ভিত্তিহীন।

জুলিয়ান ব্যাগিনি: আমি জানি না এটা কি ভালো নাকি খারাপ, তবে দর্শনে সূক্ষ্ম মতবিরোধের ক্ষেত্রে “কেবলমাত্র” (Only) বলে কিছুই নেই! তবে আমরা দুজনেই যেহেতু সম্ভবত নীতিশাস্ত্রের দিকে চলেছি, সুতরাং আসুন “কিভাবে” এবং “কেন” প্রশ্নের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করি।

আমি আবারও বলছি, আমি অনেক কিছুর সঙ্গেই একমত পোষণ করি। তবে, ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মধ্যে কোনও সংঘাত নেই, কারণ বিজ্ঞান “কিভাবে” প্রশ্ন নিয়ে কাজ করে আর ধর্ম কাজ করে “কেন” প্রশ্ন নিয়ে। কিন্তু ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে আসলে এত সহজে আলাদা করাও সম্ভব না। যদি কোনও খ্রিস্টান বলে যে, ঈশ্বর ব্যাখ্যা করেছেন যে কেন বিগ ব্যাং ঘটেছিল।

তার মানে, মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরেরও ভূমিকা আছে সেকথাও বলা হচ্ছে। তবে আমি বলব না যে, সকল “কেন” প্রশ্নগুলো কেবল “কিভাবে” প্রশ্ন হিসাবেই সঠিকভাবে বোঝা যায়। এর সুস্পষ্ট একটি উদাহরণ হলো মানুষের কর্ম, যার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা খুব কম ক্ষেত্রেই “কেন” প্রশ্ন ছাড়া হতে পারে। আমরা সাধারণত কোনও কারণেই বা উদ্দেশ্যেই কাজ করি।

কিছু অতি শক্ত-নাকের দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী একে একটি প্রয়োজনীয় কল্পকাহিনী, একটি মায়া হিসাবে বর্ণনা করেন। তারা দাবি করেন যে, মানুষের ক্রিয়াকলাপের আসল ব্যাখ্যা “কিভাবে” স্তরেই পাওয়া যায়, বিশেষত, মস্তিষ্ক কিভাবে তথ্য গ্রহণ করে, প্রক্রিয়াজাত করে এবং তারপরে প্রতিক্রিয়া উৎপাদন করে তার মধ্যেই মানুষের কর্মের আসল ব্যাখ্যা রয়েছে।

কিন্তু আমরা যদি জানতে চাই যে, কেন কেউ তার কাছের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, তাহলে শুধু স্নায়ুতান্ত্রিক উত্তর দিলে তা সম্পূর্ণ সত্য হবে না। সম্পূর্ণ সত্য জানতে হলে বলতে হবে যে, একটি “কেন”-ও এই ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল থাকে, আর সেটি হলো ভালোবাসা। নিউরনে আগুন জ্বালানো এবং হরমোন নিঃসরণের মূলে আসলে ভালোবাসাই ক্রিয়াশীল থাকে।

জৈব রাসায়নিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি কিভাবে মিলে যায় তা স্পষ্টতই একটা বিস্ময়কর বিষয় এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা নিয়ে আপনার কথা মতে, মানুষের স্বাধীনতা সম্পর্কে আমাদের বুদ্ধিহীন অনুমানগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবেই মিথ্যা।

তবে আমাদের এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে, একদিন বিজ্ঞান আমাদের মানবীয় ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে “কেন” প্রশ্ন করাটা অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে, যার উত্তর দিতে হবে প্রেমের মতো বিষয়গুলো দিয়ে। নাকি সেটা রোমান্টিক অর্থহীনতা? আপনি যে আমার সঙ্গে এই কথোপকথনটি নিয়ে কোনও বিরক্তি বোধ করছেন না তার কি কোনও কারণ নেই, শুধু কি আপনি আপনার মস্তিষ্ক যেভাবে কাজ করে সেভাবেই এটি করছেন?

লরেন্স ক্রাউস: ঠিক আছে, আমি নিশ্চিতভাবেই এই কথপোকথন উপভোগ করছি, আর এ কারণেই (কেন) আমি এটা করছি। তবে, আমি জানি যে, আমার এই আনন্দের উৎস মূলত সেই জৈবিক প্রক্রিয়া, যা মানুষকে ভাষাতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকভাবে আলোচনায় জড়ালে আনন্দ দেয়।

আপনার প্রশ্নটিই আমি ঘুরিয়ে দিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করি (যদি আপনি “কেন” প্রশ্ন ক্ষমা করেন!) আপনি কেন মনে করেন যে, প্রেমের মতো বিষয়কে কখনও শুধু স্নায়ুর উত্তেজনা এবং জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করলেই চলবে না?

এই ব্যাখ্যা না মানলে তো বিশুদ্ধ “শারীরিক” বা বস্তুগত অস্তিত্বের বাইরেও এমন কিছুর অস্তিত্ব থাকতে হবে যা আমাদের চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমার ধারণা, আমি তো এমন কিছু দেখছি না যা থেকে এমন কোনও কিছুর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

আমরা ইতিমধ্যেই বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবীয় ত্যাগের অনেক দিক বুঝতে পেরেছি। একজনের আত্মত্যাগ অনেক ক্ষেত্রে গোষ্ঠী বা স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য ভালো। এ থেকে কেন কিছু লোক পরোপোকারী হয়ে থাকেন তার একটা বিবর্তনবাদী ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যদি এক্ষেত্রে জিন বা বংশগতি কোনও চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে।

আমরা একদিন ম্যাক্রো স্কেলে বা বৃহত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নকৃত সেইসব সামাজিক ক্রিয়াকলাপকে মাইক্রো স্কেলের জৈবিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভেঙে ফেলতে সক্ষম হব। অর্থাৎ সেসব যে ব্যক্তি পর্যায়ের জৈবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ারই ফল তা প্রমাণ করতে পারব। এই আশা করাটা কল্পনাশক্তির খুব বেশি বড় লাফ নয় তথা অসম্ভব কোনও কল্পনাও নয়।

তবে বাস্তবিক অর্থে, অদূর ভবিষ্যতেই গণনামূলকভাবে এটা করা খুব কঠিন হবে এবং সম্ভবত তা সবসময়ই কঠিন থেকে যাবে। অবশ্য, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমি যা কিছু জানি তা আমাকে ‘‘সবসময়’’ শব্দটি ব্যবহার করতে বাধা দিচ্ছে। পদার্থবিজ্ঞানের আইনগুলো যা অস্বীকার করে না তা আসলে এক অর্থে অনিবার্যই বা ঘটবেই।

সুতরাং, এখনই আমি কল্পনা করতে পারছি না যে, আমি যে ঘরের বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি তার সমস্ত কণার গতি গণনামূলকভাবে নির্ধারণ করতে পারছি, ফলে শারীরিক আচরণের হিসেব বের করতে আমাকে গড় পরিমাণই নিতে হবে এবং পরিসংখ্যান করতে হয়। কিন্তু, কে জানে, একদিন হয়ত তা সম্ভব হতেও পারে?

জুলিয়ান ব্যাগিনি: কে জান? হয়তোবা! যে কারণে দর্শনেরও এটা গ্রহণ করে নেওয়া উচিৎ যে, একদিন তার প্রয়োজন হয়ত ফুরিয়ে যাবে। তবে বিজ্ঞানকেও মেনে নিতে হবে যে, তারও একটা শেষ সীমা আছে।

আমার মনে হয় না যে, মহাবিশ্বে ভৌত বা পদার্থ বিজ্ঞানের চেয়ে বেশি কিছু আছে। তবে মানুষের আচরণ কখনও পদার্থবিজ্ঞান বা জীববিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে কিনা সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ রয়েছে। যদিও আমরা মানুষেরাও আক্ষরিক অর্থে তারাগুলোর মতো একই জিনিস বা বস্তু দিয়েই তৈরি, তথাপি এই দেহ এত জটিলভাবে সংগঠিত হয়েছে যে, চেতনার মতো জটিল জিনিস উদ্ভূত হয়েছে, যা কেবলমাত্র বোসন এবং ফার্মিয়নের পাথুরে শরীর পরীক্ষা করেই পুরোপুরি বোঝা সম্ভব না।

অন্তত, আমি মনে করি তারা তা পারবে না। আমি খুশি যে, পদার্থবিদরা এ বিষয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু, আমি মনে করি, যতক্ষণ না তারা সফল হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই দাবি করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ যে, বৈজ্ঞানিক প্রশ্নগুলোই কেবল খাঁটি প্রশ্ন এবং বাকিগুলো অর্থহীন। এটাই যদি সত্য হয়, তবে এই কথোপকথনটাও কি অর্থহীন হবে না?

লরেন্স ক্রাউস: আমরা তাহলে একটা মর্মগত ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে আলাপ শেষ করতে পারি। আমার সন্দেহ, অনেকে হয়ত মনে করে যে, আমার অনেক কথোপকথন অর্থহীন। তবে, যে কোনও ক্ষেত্রে, বিজ্ঞান বাস্তবতার সম্পূর্ণ চিত্র উপস্থাপন করতে পারে কিনা তার উত্তর আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না।

আপনি এবং আমি মৌলিকভাবে একমত যে, মহাবিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছুতেই শারীরিক বা বস্তুগত বাস্তবতা রয়েছে, তবে বিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে আমরা এসবকে কার্যকরভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারি কিনা সে সম্পর্কে আমাদের আশাবাদে পার্থক্য রয়েছে।

প্রকৃতি সম্পর্কে অনবরত প্রশ্ন করার মাধ্যমে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তার উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে যে অগ্রগতি সম্ভব তা দেখে আমি প্রতিনিয়তই অবাক হতে থাকি। আকাশের তারাগুলোকে মানুষের চেয়ে সহজে বোঝা যায়, আমার প্রত্যাশা, তবে এটাই এই যাত্রাকে এতটা উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে।

রহস্যই মানব জীবনকে যাপনের যোগ্য করে তোলে এবং আমি খুবই দুঃখ পাব যদি এমন দিন চলে আসে যখন আর উত্তর দেওয়ার জন্য কোনও প্রশ্ন এবং সমাধান করার জন্য কোনও ধাঁধা বাকি থাকবে না। আমরা যেভাবে আমাদের নিজেদের সাফল্যের শিকার হই তা আমাকে অবাক করে দেয়, অন্তত নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে।

সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্বের কথা বলতে গেলে, আমরা হয়ত অভিজ্ঞতামূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জগতকে বোঝাবুঝির শেষ সীমায় চলে এসেছি, যা খুবই ভীতিজনক। এরপর আমাদেরকে শুধু ভালো ধারণাগুলোর উপরই নির্ভর করতে হবে। আর তা আরও বেশি কঠিন এবং কম নির্ভরযোগ্য।

তথ্যসূত্র: Philosophy v science: which can answer the big questions of life?/theguardian.com

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত