Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় পরিমাপে ‘ক্যাটাগরি ৬’ কতটা জরুরি

হরিকেন
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার ঘূর্ণিঝড় কতটা শক্তিশালী তা বুঝতে ১৯৭৩ সালে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করে। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে সাফির-সিম্পসন স্কেল নামের ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়।

আমেরিকান প্রকৌশলী হার্বার্ট সাফির ও আওহাওয়াবিদ রবার্ট সিম্পসনের তৈরি এই ব্যবস্থায় রয়েছে পাঁচটি বিভাগ (ক্যাটাগরি)। এতে প্রথম ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় হলো সবচেয়ে দুর্বল। আর ক্যাটাগরি ৫ এর ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় সবচেয়ে শক্তিশালী।

প্রথম ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৭৪ থেকে ৯৫ মাইল। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ৯৬ থেকে ১১০ মাইল, তৃতীয়তে ১১১ থেকে ১২৯, চতুর্থতে ১৩০ থেকে ১৫৬ ও পঞ্চম ক্যাটাগরিতে বাতাসের গতি থাকে ১৫৭ মাইলের বেশি।

কয়েকজন বিজ্ঞানী মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাফির-সিম্পসন স্কেলটি আর যথেষ্ট নয়। কারণ বর্তমানে অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এই স্কেলের সর্বোচ্চ স্তর ক্যাটাগরি ৫ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা পরিমাপে ক্যাটাগরি ৬ যুক্ত করার পক্ষে।

সাফির-সিম্পসন ব্যবস্থাটি আটলান্টিক এবং আন্তর্জাতিক ডেট লাইনের পূর্বে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের ঝড়ের তীব্রতা পরিমাপ করে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। তবে অধিকাংশ ব্যবস্থাই প্রায় এক।

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ ও সমুদ্রের তাপমাত্রা গত ৫০ বছর ধরে ক্রমশ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন। এই তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলো আরও তীব্র হচ্ছে। বাতাসের গতি যেমন বাড়ছে, তেমনি বেশি হচ্ছে বৃষ্টিপাত।

পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির জলবায়ুবিজ্ঞানী মাইকেল ম্যানের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল গত মাসের শেষে জলবায়ুবিষয়ক কিছু পূর্বাভাস দেয়। এতে ১জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত উত্তর আটলান্টিকে ৩৩টি ঘূর্ণিঝড় হবে বলা হয়েছে।

এই বছরের শুরুতে দুই জলবায়ুবিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এতে তারা সাফির-সিম্পসন স্কেলের সঙ্গে একটি নতুন ধারণার তুলনা করেছেন। নতুন ধারণায় ক্যাটাগরি ৬ যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়, এই ক্যাটাগরিটি ঘন্টায় ১৯২ মাইল বা তার বেশি বেগে বাতাস বয় এমন ঘূর্ণিঝড়ের জন্য।

লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মাইকেল এফ ওয়েনার ও জেমস পি কোসিন গবেষণাটি করেন। তাদের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সসে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, ১৯৮০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ক্যাটাগরি ৫ এর ১৯৭টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা প্রস্তাবিত ক্যাটাগরি ৬ এর সঙ্গে মিলে যায়। এগুলো হলো- ২০১৩ সালের টাইফুন হাইয়ান, ২০১৫ সালের প্যাট্রিসিয়া, ২০১৬ সালের টাইফুন মেরান্তি, ২০২০ সালের টাইফুন গনি ও ২০২১ সালের টাইফুন সুরিগাই।

২০১৫ সালের অক্টোবরে হওয়া ঘূর্ণিঝড় প্যাট্রিসিয়া জালিসকো ও মেক্সিকোর উপর দিয়ে বয়ে যায়। এই ঝড়কে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাতাসের ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। ঝড়টি যখন স্থলে আঘাত হানে তখন এটি ছিল ক্যাটাগরি ৪। কিন্তু এটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১৫ মাইল।

২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়ে ৪৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যার মধ্যে ২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড় মারিয়ায় মৃতের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত নয়।

ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের পরিচালক মাইক ব্রেনান জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়ে মৃতদের মধ্যে ১৫ শতাংশ বাতাসের কারণে আর ৮৫ শতাংশই হয়েছে ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে।

ব্রেনান বলেন, “৩০ বছর আগে আমরা হারিকেন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতে পারতাম না। ঝড়টি কোথায় যাবে এবং এটি কতটা শক্তিশাল, তা আমরা জানতে পারতাম না। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে পারছি।”

সাফির-সিম্পসন ব্যবস্থায় এখনই ক্যাটাগরি ৬ যুক্ত করার কোনও প্রয়োজন নেই বলেও তিনি জানান।

তবে আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করেন, ক্যাটাগরি ৬ অন্তর্ভুক্ত করলে মানুষ ঝড়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারবে। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কমবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত