ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন গঠনে আগের মতোই সার্চ কমিটি হচ্ছে।
ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম একথা জানান বলে বাসস জানিয়েছে।
যমুনায় সংলাপের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে মাহফুজ বলেন, শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। রীতি অনুযায়ী এই কমিটিতে ছয়জন সদস্য থাকবে।
“সরকার তার দল নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে এই সার্চ কমিটি গঠন করবে। সার্চ কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিটি পুনর্গঠনের কাজ করবে। পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।”
সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনও চাপ বা হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না, বলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাস পর কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সবাই পদত্যাগ করেন। ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত ইসি নিয়োগের আইনে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
আইনটি ২০২২ সালে হলেও আওয়ামী লীগ আমলে তার আগে দুটি কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির প্রধান হবেন আপিল বিভাগের একজন বিচারক। তাকে মনোনীত করবেন প্রধান বিচারপতি।
ছয় সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। এই দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন হবেন নারী।
সার্চ কমিটি পাঁচ সদস্যের ইসি গঠনে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। তাদের মধ্য থেকে একনকে সিইসি এবং বাকি চারজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর নানা আলোচনায় ইসি নিয়োগের আইনসহ এই সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া বদলানোর আওয়াজও উঠেছিল।
নির্বাচনের িদনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও তার প্রাথমিক পদক্ষেপে ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও আগের পথেই হাঁটছে।
মাহফুজ বলেছেন, সরকারের শুরু করা সংস্কার কার্যক্রমও সমান্তরালভাবে চলমান থাকবে।
এদিন সংলাপে গণফোরাম ছাড়াও আলাদাভাবে অংশ নিয়েছিল এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ জাসদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়েই আলোচনা বেশি হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচারে বিষয়ও আসে আলোচনায়।
সংলাপে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিলেন এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, যিনি ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির আগে শেখ হাসিনার দলের সঙ্গেই জোট বেঁধেছিলেন।
অলি সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “১৯৭১ সালে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সেদিন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। আজকে কি কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
“কারণ আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবাইকে ব্যবহার করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা জনতার চাপে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।”
এবিষয়ে মাহফুজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এককভাবে এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, যারা জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যারা পালিয়েছেন, তারা কীভাবে গেলেন, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে তিন দিন কোনও সরকার ছিল না। মূলত সেই সময়ই অনেকে পালিয়েছেন।”