Beta
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

আনারের লাশ উদ্ধারে মরিয়া এপার-ওপার

সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা এই ব্যাগে করে আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের খণ্ডিত অংশ বাইরে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা এই ব্যাগে করে আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের খণ্ডিত অংশ বাইরে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
[publishpress_authors_box]

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় দুই দেশের পুলিশ যৌথ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি দল ঢাকায় তিন দিন ধরে কাজ করেছে। ঢাকা থেকে ডিবির তিন সদস্যের একটি দলও ভারত যাচ্ছে তদন্তের জন্য। তাদের মূল চেষ্টা আনারের লাশ কিংবা লাশের খণ্ডাংশ হলেও উদ্ধার করা।

বাংলাদেশি সংসদ সদস্য খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ টুকরো লাশের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে বলে কলকাতার সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। তবে দুদিন অভিযানের পরও শনিবার রাত পর্যন্ত লাশ উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজন শিমুল ভূ্‌ইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজিকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পুলিশ।

ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের তিন বারের সংসদ সদস্য আনার ভারতে যাওয়ার পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বলে ওই দেশের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পুলিশ সেই তথ্যের সঙ্গে যোগ করেছে, আনারের খুনিরা বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনায় খুন করা হয় এই সংসদ সদস্যকে।

আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত অগ্রগতি জানাতে শনিবার ঢাকার মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, এমপি আনারের লাশের সন্ধানে তদন্ত চলমান। দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন, যৌথ প্রচেষ্টা চলছে। যেসব অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তদন্তের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পুলিশকেও সে দেেশ যাওয়ার সায় মিলেছে জানিয়ে হারুন বলেন, “ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি নিয়ে আজ রাতে অথবা আগামীকাল ভোরের মধ্যে ডিবির তিন সদস্যের টিম ভারতে রওনা হবে।

“ভারতীয় পুলিশের একটি টিম ২-৩ দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছে। তারা আমাদের কাছে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ভারতের টিমে যারা আছেন, তাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাদের কাজ শেষ হলে আমরা রওনা হব।”

লাশ না পেলেও কেন খুন বলে নিশ্চিত করা হচ্ছে- এই প্রশ্নে হারুন বলেন, “এমন অনেক ঘটনা আছে বছরের পর বছর লাশ পাওয়া যায়নি। তিন বছর লাশ পাওয়া যায়নি, তারপরও তদন্ত হয়েছে এবং আলামত উদ্ধার হয়েছে।

“ভারতীয় পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে। তারা নিশ্চয় আলামত পেয়েছে, এ জন্য মামলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন জানানো যাবে না।”

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ফাইল ছবি

আনার নিখোঁজ হওয়ার পর একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সোনা ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস। তার সূত্র ধরে তদন্তে নেমে ২২ মে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিশ্চিত করে, আনার খুন হয়েছেন।

লাশ না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কলকাতার সাংবাদিকরাও প্রশ্ন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদীকে। তিনি তখন বলেছিলেন, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য তারা পেয়েছেন।

বাংলাদেেশর কর্মকর্তা হারুন দুদিন আগে বলেছিলেন, আনারকে হত্যার পর লাশ খণ্ড খণ্ড করে ব্যাগে ভরে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।  

তিনি তখন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আনারকে পাশের দেশ ভারতে হত্যার ছক আঁটে খুনিরা।   

হারুন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, এমপি আনারকে দেশেই হত্যার চেষ্টা চালিয়ে দুবার ব্যর্থ হয় খুনিরা।

নির্বাচনের আগে এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সেই ছক আঁটা হয়েছিল। তৃতীয় দফায় সফল হয় খুনিরা।

চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আনারকে তারই এক সময়ের বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন খুন করেন বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। তবে কোনও দেশের পুলিশই এই বিষয়টি খোলসা করেনি এখনও।

এ বিষয়ে প্রশ্নে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “স্পেসিফিক রিজন বলতে পারছি না। অনেক মোটিভ হতে পারে। পূর্বশত্রুতার জেরে হতে পারে, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত হতে পারে, আবার রাজনৈতিক বিষয়ও থাকতে পারে।

“এসব বিষয় জানতেই তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা সবকিছুই বিচার-বিশ্লেষণ করব। আসামিরা অনেক কথাই বলছে, তদন্তের স্বার্থে বলছি না।”

ভারতীয় গোয়েন্দাদের যে দলটি এখন বাংলাদেশে রয়েছে, তারা ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসার পর গত তিন দিনে কয়েক দফায় বৈঠক করেছে তারা ডিবিতে। তবে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছে দলের সদস্যরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অপরাধী গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এখন প্রধান প্রচেষ্টা লাশ উদ্ধারের। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার আসামিদের বক্তব্য যাচাই করে সে চেষ্টাই চলছে।”

লাশ উদ্ধারে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “লাশ উদ্ধার ছাড়া হত্যা মামলার আসামিদের সাজা নিশ্চিত করা কঠিন। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে, লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হচ্ছে।”

কলকাতার নিউ টাউনের এই সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটেই সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুন করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আনার ভারতের কলকাতায় খুনের শিকার হয়েছেন বলে তথ্য মেলার পর গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে এমপি আনারকে খুন করার উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগ আনেন। তবে এজাহারে এমপি আনারের কলকাতায় যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের সূত্রে এর আগেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে চরমপন্থি দলের নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, আক্তারুজ্জামানের কথিত বান্ধবী শিলাস্তি রহমান এবং ফয়সাল আলী সাজি নামে অন্য এক ব্যক্তিকে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার (৫৬) চিকিৎসার কথা বলে গত ১২ মে গিয়েছিলেন কলকাতায়। সেদিন তিনি উঠেছিলেন বরাহনগরের সিঁথি এলাকায় তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে।

গোপালের ভাষ্য অনুযায়ী, পরদিন দুপুরে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে আনার বেরিয়েছিলেন ভাড়া করা একটি গাড়িতে। তারপর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি।

গোপালের করা জিডির সূত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনার খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও লাশের কোনও অংশই এখনও মেলেনি। কলকাতায় গ্রেপ্তার

জিহাদকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে সেদেশের পুলিশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত