Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

জোনাকি জ্বলল চাঁদে

space-moon-landing
[publishpress_authors_box]

ফায়ারফ্লাই, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় জোনাকি। এই নামের কোম্পানিটি চাঁদের বুকে সফলভাবে ল্যান্ডার নামিয়েছে। তাদের এই সাফল্য বেসরকারি মহাকাশ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে দেখা হচ্ছে।

ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের ব্লু ঘোস্ট ল্যান্ডারটি রবিবার সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে। ছোট গাড়ির আকারের এই চার পা বিশিষ্ট ল্যান্ডার ১০টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বহন করছে।

এটি চাঁদের মারে ক্রিসিয়ামের একটি প্রাচীন আগ্নেয়গিরির ভেন্টের কাছে অবতরণ করতে ২১টি থ্রাস্টার ব্যবহার করেছে। মারে ক্রিসিয়াম হল চাঁদের পূর্ব দিকের উত্তর-পূর্ব কোণায় অবস্থিত একটি বড় বেসিন।

ল্যান্ডারটিতে আছে একটি ভ্যাকুয়াম যন্ত্র। এটি চাঁদের মাটি বিশ্লেষণের জন্য টেনে আনবে। এছাড়া আছে একটি ড্রিল, যা ১০ ফুট গভীর পর্যন্ত তাপমাত্রা মাপবে। চাঁদের ধূলিকণা অপসারণে রয়েছে ভিন্ন যন্ত্র। এই ধূলিকণা এক সময় নাসার অ্যাপোলো চাঁদ অভিযানের মহাকাশচারীদের স্পেসস্যুট ও যন্ত্রপাতিতে লেগে গিয়েছিল।

১০ বছরের পুরনো কোম্পানি ফায়ারফ্লাই গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল, যা সঠিকভাবে অবতরণও করাতে পেরেছে।

নাসার ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ড. জোয়েল কিয়ার্নস বলেন, চাঁদের এই এলাকা বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সম্ভবত অবতরণের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান।

বেসরকারি মহাকাশ যানের চাঁদের বুকে অবতরণের মুহূর্তটি ইতিহাসের পাতায় স্থান পাওয়ার মতো বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

টেক্সাসভিত্তিক ফায়ারফ্লাই দ্বিতীয় বেসরকারি কোম্পানি, যারা চাঁদে সফলভাবে যান অবতরণ করিয়েছে। গত বছর হিউস্টনভিত্তিক ইনটিউইটিভ মেশিনসের ওডিসিয়াস ল্যান্ডারও একটি অসমতল সফট অবতরণ করেছিল।

চাঁদে ‘সফট’ অবতরণ মানে হলো একটি নিয়ন্ত্রিত অবতরণ, যেখানে মহাকাশযানটি কম গতিতে চাঁদে অবতরণ করে এবং তাতে যন্ত্রপাতির ক্ষতি কম হয়। ‘হার্ড’ অবতরণ মানে হলো দুর্ঘটনাজনিত অবতরণ।

আগে শুধু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও জাপান চাঁদে সফট-ল্যান্ডিং সফলভাবে করেছে। 

নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেটের ড. নিকোলা ফক্স বলেন, “আমরা আমাদের অবতরণের স্থান খুব সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করি। আমরা চাঁদের ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলো ও সৌর বায়ুর সঙ্গে চাঁদের মিথস্ক্রিয়া অধ্যয়ন করতে চাই।”

তিনি বলেন, এই মিশনের একটি অংশ ভবিষ্যৎ মহাকাশ মিশনের জন্য ভিত্তি স্থাপন করবে এবং ভবিষ্যতের মহাকাশচারীদের চাঁদে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেবে।

নাসা ও এর আর্টেমিস প্রকল্পের সহযোগিতায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো আধুনিক চাঁদ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

স্পেস এজেন্সি এটি সফলভাবে পাঠানোর জন্য ১০১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। আর এতে থাকা প্রযুক্তির জন্য ব্যয় করেছে ৪৪ মিলিয়ন ডলার।

ড. ফক্স বলেন, এই মিশনের লক্ষ্য হলো একটি টেকসই বাণিজ্যিক চাঁদ অর্থনীতি তৈরি ও আমেরিকান কোম্পানিগুলোর নেতৃত্বে পরিচালিত করা।

আরও দুটি কোম্পানির ল্যান্ডার ব্লু ঘোস্টের কাছাকাছি এবং পরবর্তী ল্যান্ডারটি এই সপ্তাহের মধ্যে চাঁদে এর সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।

ইলন মাস্কের স্পেস এক্স এবং জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন ল্যান্ডার তৈরি করছে। এগুলো ১৯৭২ সালের পর প্রথমবার ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠাবে।

চাঁদে অনেক ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব শুধু মহাকাশ থেকে আসা নয়, মানুষের বহু ব্যর্থ প্রচেষ্টার ফলও।

নাসা প্রতি বছর দুটি বেসরকারি চাঁদ ল্যান্ডারের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। এরমধ্যে কিছু মিশন ব্যর্থ হবে, বলেন ড. ফক্স।

নাসার সফল অ্যাপোলো চাঁদ অভিযানগুলোর পেছনে ছিল বিলিয়ন ডলার বাজেট। আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো সীমিত বাজেট নিয়ে রোবটিক মহাকাশযান ব্যবহার করে। 

এগুলো নিজে থেকেই অবতরণ করতে হয়, বলেন ফায়ারফ্লাইয়ের সিইও জেসন কিম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত