এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশে বৈষম্য হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে বিক্ষোভ করছিল একদল শিক্ষার্থী। সবশেষ তারা সচিবালয়েও জোর করে ঢুকে পড়ে তারা।
বুধবারের এই ঘটনায় সচিবালয় থেকে ৫৪ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। যাদের মধ্যে ২৮ জনকে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ২৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টাসহ নাশকতার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।
সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার তাদের ঢাকার মহানগর হাকিম বেলাল হোসেনের আদালতে তোলা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক একরামুল হক আসামিদের হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন। অন্যদিকে জামিন চেয়ে আবেদনন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
জামিন শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সচিবালয় থেকে ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছিল। ২৮ জনকে ছেড়ে দিলেও ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হত্যাচেষ্টা বাদে সবগুলো ধারা জামিনযোগ্য।
তখন বিচারক জানতে চান, “তাদের কেন ছাড়েনি?”
জবাবে আইনজীবীরা বলেন, “তাদের অভিভাবক যেতে না পারার কারণে ছাড়েনি।”
তখন বিচারক আবারও জানতে চান, “তারা কেন সচিবালয়ে গিয়েছিল?”
আইনজীবীরা বলেন, “পত্রপত্রিকায় দেখেছি এইচএসসির ফল বাতিলের জন্য গিয়েছিল।”
এই কথা শোনার পর বিচারক আসামিদের মধ্যে যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের নম্বরপত্র দেখতে চান। তবে কয়েকজন আইনজীবী জানান, তাদের আসামি পাস করেছে।
বিচারক বলেন, “ফেল না করলে সেখানে গিয়ে কাজ কী?”
কয়েকজন আইনজীবী বলেন, বন্ধুদের জন্য গিয়েছে।
তখন বিচারক বলেন, “সচিবালয় তো আন্দোলনের জায়গা না। কয়েকদিন হাজতখানায় থেকে আসুক।”
এরপর বিচারক আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর কিছুক্ষণ পর আইনজীবীরা রবিবার জামিন শুনানি করার আবেদন জানালে বিচারক নতুন শুনানির জন্য ওই দিন ঠিক করে দেন।
কারাগারে যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, জহিরুল ইসলাম, ফয়সাল হাসান, রায়হান হোসেন, রুবেল আহম্মেদ, রিয়াদ মাহমুদ, মেজবাউল রহমান মিল্লাদ, মেহেদী হাসান, সোহান, ইমরান হোসেন আরমান, মেহেদী হাসান অন্তর, সাগর, রোহান, শাহরিয়ার হোসেন সোয়াদ, আহাম মোল্লা, সোহান, মাসনুন, নাঈম, ইমাম হাসান, শাকিল, সেলিম, সাকলাইন মুস্তাক, হানজালাল, মশিউর রহমান, প্রান্তিক, তাছিম রহমান, ও রবিন মিয়া।
বুধবার পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী। নিজেদের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী দাবি করে ওই শিক্ষার্থীরা সদ্য ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবি তোলেন।
বিক্ষোভ করে সচিবালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীরা আটক
তাদের দাবি, এবারের ‘সাবজেস্ট ম্যাপিং’য়ের মাধ্যমে দেওয়া ফলাফলে বৈষম্য হয়েছে। তাই এই ফল বাতিল চান তারা। গত কয়েকদিন ধরেই এই দাবিতে ঢাকাসহ কয়েকটি শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও, ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। কোথাও কোথাও তাদের সঙ্গে দেখা গেছে অভিভাবকদেরও।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে এক পর্যায়ে পদত্যাগের আবেদনপত্রও দেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
সবশেষ বুধবার সচিবালয়ে যান একদল শিক্ষার্থী। তারা সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকে যান।
সেখান থেকে প্রথমে ৫৪ জনকে আটক করে নিযে যায় পুলিশ। শুরুতে তাদের রমনা থানায় নেওয়া হয়। পরে এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয় এবং ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও দাবি পুলিশে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ২৬ জন জানিয়েছে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত।”